পেয়ারা ও আমড়া কৃষি পণ্য দিয়ে বিভিন্ন খাদ্য প্রস্তুত বিষয়ে টেনিং স্বপ্ন দেখাচ্ছে বরিশাল বিভাগের আমড়া ও পেয়ারা ফলের হাব পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ ও ঝালকাঠী জেলার সদরের কৃষকদের। স্থানীয় উৎপাদিত ফল পেয়ারা ও আমড়া দিয়ে তৈরী জ্যাম, জেলী ও আচার এর নিয়ে দুই দিন ব্যাপী টেনিং এর শেষ দিনে অংশগ্রহনকারীরা এমনই জানালেন।
পিরোজপুর জেলার নেছারবাদ উপজেলার আটঘর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর আয়োজিত শেষ দিনের এই ট্রেনিং প্রোগ্রামে সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ত্রিশ জন পেয়ারা ও আমরা চাষী অংশ নেয়। এর আগে রবিবার বরিশাল এর বাবুগঞ্জ উপজেলায় রহমতপুরে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে ‘এগ্রিকালচার প্রোডাক্টস প্রসেসিং ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক এই প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ড. মুহাম্মদ সামসুল আলম, পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ উইং) বিএআরআই, গাজীপুর।
এশিয়ান ফুড এ্যান্ড এগ্রিকালচার ইনিশিয়াটিভ, এএফএছিআই, আর ডি এ, কোরিয়া, Asian Food and Agriculture Cooperation Initiative (AFACI), RDA, Korea এর অর্থায়নে পোষ্টহারভেষ্ট টেকনোলজি বিভাগ, বিএআরআই, গাজীপুর দুই দিন ব্যাপী এই ট্রেনিং প্রোগ্রামের আয়োজন করে। ট্রেনিং প্রোগ্রামে বরিশাল , ঝালকাঠী ও পিরোজপুর অঞ্চলের ষাট জন পেয়ারা ও আমরা চাষী ও কৃষাণী অংশ নেয়।
প্রকল্পের পিআই ড. মোহাম্মদ মাইনউদ্দিন মোল্লা প্রকল্পের উদ্দেশ্য উল্লেখ করে বলেন, প্রক্রিয়াজাতকরণের এ প্রশিক্ষণটি শুধু কৃষক গ্রুপের আর্থ-সামাজিক অবস্থারই পরিবতন করবেনা, কেমিক্যালমুক্ত নিরাপদ ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করতে সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, প্রতিবছর বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলা, ঝালকাঠী জেলার সদর ও বরিশাল এর বানারীপারায় পঁচিশ হাজার মেট্রিকটনের বেশী পেয়ারা উৎপাদন হলেও এর একটি অংশ সংরক্ষণের অভাবে নস্ট হয়ে যায়।
পেয়ারা থেকে অতিসহজেই জ্যাম জেলি তৈরী করা যায়, যা এই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করবে, তা ছাড়া স্থানীয় পুষ্টি ঘাটতি মোকাবেলায় কেমিক্যাল মুক্ত, ন্যাচারাল এই প্রোডাক্ট বিরাট পরিবর্তন আনতে পারে। পেয়ারার কেমিক্যালমুক্ত ন্যাচারাল জেলি তৈরীর প্রশিক্ষণটি ফলপ্রসু ও বেগবান করতে ভবিষ্যতে এর কার্যকম অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
বৈজ্ঞানিক এই কর্মকর্তা জানান, ’বিগত বছরেও আমরা এই ট্রেনিং দিয়েছি- আমরা মনে করি এর ফলে কৃষক পরিবার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হয়ে ভবিষ্যতে এই ধরনের পণ্য তৈরী যাতে করতে পারে সে লক্ষ্যেই এই আয়োজন।’
অনুষ্ঠানে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, রহমতপুর, বরিশাল এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ রফি উদ্দিন জানান, এই অঞ্চল ঘিরে আমড়া ও পেয়ারা কৃষি পণ্যটি দিয়ে যাতে ভবিষ্যতে আরও কৃষি পণ্য তৈরী করতে পারে এই অঞ্চলের কৃষকরা সে লক্ষ্যেই এই ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে।
প্রশিক্ষণে কৃষি পণ্য উদ্যোক্তা ড. তালুকদার হুমায়ুন হাতে কলমে জ্যাম জেলি ও আমরা আচার তৈরী বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন।
প্রশিক্ষণার্থী, আটঘর গ্রামের বাসিন্দা তানজিলা জানান, তিনি বিগত বছরেও টেনিং দিয়েছেন, এবারও শিখতে এসেছেন। ’এখানে পেয়ারর একটি অংশ পচে যায়- জ্যাম জেলি তৈরী করে বাজার পাওয়া গেলে তা আমাদের অবস্থার পরিবর্তন করবে।’
বিজয় বেপারী, নামে এক আমরা চাষী জানান, এখানে ফল সংরক্ষণের বিষয়েও ট্রেনিং দেয়া হয়েছে যা তাদেরকে ফল সংরক্ষণ কাজে সহায়তা করবে।
আফরোজা নামে এক গৃহবধু জানান, ‘এই প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি পেয়ারার জ্যাম জেলি তৈরী করে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।’
এই ধরনের প্রশিক্ষণ কৃষি ভিত্তিক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরীতে ভূমিকা রাখবে বলে জানান, বরিশাল বিজনেস ইউইমেন ফোরামের সভাপতি ড. বনলতা মুরিশিদা।
বরিশাল চেম্বার ও কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ এর সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, এর ধরনের প্রশিক্ষণ নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়াতে সহায়তা করবে।
পিরোজপুর আমড়া পেয়ারা চাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি নিত্যানন্দ সমদ্দার জানান আমরা এই প্রশিক্ষণকে স্বাগত জানাই, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই অঞ্চলের প্রধান উৎপাদিত অর্থনৈতিক পণ্য পেয়ারা ও আমড়া দিয়ে খাদ্যপণ্য তৈরী হলে এই দুই ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সিজনে পেয়ারা দুই তিন টাকায় নেমে আসে যা কৃষকদের দু:খের কারণ।
মোহান্মদ হাফিজুল হক মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পোস্ট হারভেস্ট বিভাগ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণাইনস্টিটিউট, গাজীপুর জানান, এর ফলে কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের সঠিক দাম পেতে পারেন।