জুরান বিজ্ঞানের গল্প পড়ে। কল্পবিজ্ঞানের গল্প পড়ে। সে রকমই একটি গল্পে সে পড়েছিল টাইম মেশিনের কথা। তাতে চড়ে নাকি একটা সময় থেকে আর একটা সময়ে চলে যাওয়া যায়।
এই ধরনের গল্পের সূত্রপাত প্রথম ঘটেছিল রামায়ণে। রৈবত নামে এক রাজা ব্রহ্মার সঙ্গে দেখা করার জন্য স্বর্গে গিয়েছিলেন। তিনি যখন ব্রহ্মার সঙ্গে দেখা করে পৃথিবীতে ফিরে আসেন, দেখেন, সব কিছু আমূল পাল্টে গেছে। তাঁর চেনাজানা যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সবাই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। শুনে তো তিনি অবাক। এটা কী করে হয়!
ওখানে তো মাত্র কয়েক দিন ছিলেন তিনি! এর মধ্যে এত কিছু পাল্টে গেল কী করে! যাওয়ার সময় তিনি যাঁদের ছোট-ছোট দেখে গিয়েছিলেন, শুধু তাঁরাই যে মারা গেছেন, তাই-ই নয়, খোঁজ নিয়ে জানলেন, তাঁদের সন্তান-সন্ততিরাও মারা গেছেন। এখন যাঁদের দেখছেন, তাঁরা তাঁদের বংশধর ঠিকই, তবে কেউ চোদ্দোতম পুরুষ তো কেউ সতেরোতম পুরুষ। তার মানে তাঁর যাওয়া আর আসার মধ্যে পৃথিবীতে পার হয়ে গেছে অন্তত হাজারখানেক বছর!
শুধু ভারতের মহাকাব্যেই নয়, ঠিক এ রকমই অত্যন্ত প্রচলিত একটি পৌরাণিক গল্প আছে জাপানে। গল্পটির নাম— উরাসিমা তারো। পনেরো শতাব্দীর সেই গল্পে রয়েছে, জাপানের এক দরিদ্র মৎস্যজীবী একটি কচ্ছপকে নির্ঘাৎ মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। তাতে ওই দেশের ড্রাগনের দেবতা রিওজিন এতটাই সন্তুষ্ট হয়েছিলেন যে, পুরস্কার স্বরূপ তিনি তাঁকে সমুদ্রের তলায় তাঁর রাজত্ব রিউগুজো-তে আমন্ত্রণ করেন।
সেখানে তিন দিন তিন রাত কাটিয়ে সেই মৎস্যজীবী যখন তাঁর গ্রামের বাড়িতে ফিরে এলেন, দেখলেন, পৃথিবীতে তত দিনে তিনশো বছর পেরিয়ে গেছে।
এই ভাবে শুধু স্বর্গে বা পাতালেই নয়, পরবর্তিকালে বিভিন্ন দেশের কল্পবিজ্ঞানের নানান গল্পে বারবার ধরা পড়েছে ভিন্ন গ্রহের কথাও। অন্য গ্রহে মাত্র কয়েক দিন কাটিয়ে পৃথিবীতে এসে সেই সব গল্পের নায়ক দেখেছে, পৃথিবীর বয়স কখনও পেরিয়ে গেছে একশো বছর, কখনও আবার ন’শো বছর।
সেই সব গল্প ছোটদের ভিতরে এতটাই প্রভাব বিস্তার করত যে, মনে মনে তারা টাইম মেশিনে চড়ে চলে যেত ভবিষ্যতে। বড় হয়ে সে সব নিয়ে অনেকে আবার অনেক রকম কথাও বলেছেন। কিন্তু প্রথম যুক্তিসঙ্গত তত্ত্ব তুলে ধরেন বিশ্ববিখ্যাত বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। তিনি তাঁর ‘থিয়োরি অব রিলেটিভিটি’-তে বলেন E=mc -এর কথা। সেখানে ‘মাস এনার্জি ইকুইভ্যালেন্স ফর্মুলা’য় তিনি দাবি করেন, টাইম ট্র্যাভেল করা সম্ভব।
তিনি বলেন, আলোর চেয়ে বেশি গতি সম্পন্ন কোনও যান এখনও পর্যন্ত পৃথিবীতে তৈরি হয়নি। আলোর চেয়ে দ্রুত গতিতে যেতে পারে, এ রকম কোনও কিছু যদি মানুষ কোনও দিন আবিষ্কার করতে পারে, তা হলে অবশ্যই অতীতে যাওয়া যাবে।
তিনি অতীতে যাওয়ার কথা বললেও প্রফেসর স্টিফেন হকিন্স কিন্তু সেটাকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, না। টাইম মেশিনে করে অতীতে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ, যাওয়া যেতে পারে ভবিষ্যতে। একমাত্র ভবিষ্যতে। যেখানে সময় প্রায় স্থির হয়ে থাকে। এত আস্তে আস্তে এগোয় যে, সেটা ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ে না। আর সেই সময়ের ঘেরাটোপে যদি কেউ যান, তাঁর আয়ুও প্রায় ধ্রুবক হয়ে যাবে। মানে ওখানে যদি কেউ দশ দিন থাকেন, তা হলে যেহেতু তিনি ওখানে আছেন, তাই ওখানকার নিয়ম অনুযায়ী তাঁর আয়ু ওই দশ দিনই কমবে, তার চেয়ে এক ফোঁটা কম নয়, এক ফোঁটা বেশিও নয়। ওই দশ দিন পৃথিবীর হিসেবে একশো, দুশো কিংবা পাঁচশো বছর হলেও। ঠিক কত বছর, তা অবশ্য নির্ভর করবে ভবিষ্যতের কোন সময়ের আবর্তে তিনি ছিলেন, সেই সময়, স্থান, কাল, ভরের তারতম্যে।
অবশ্য আলোর নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী, শূন্যস্থানে আলোর গতির কথা না-হয় ছেড়েই দিচ্ছি, ওই পৃথিবীতে, এত বায়ুর স্তরের ভিতর দিয়ে বাধা পেতে পেতে গেলেও প্রতি সেকেন্ডে আলোর গতি কিন্তু ২৯৯৭৯২৪৫৯ মিটার। এর থেকে বেশি তো নয়ই, এর সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিতে পারে, এখনও পর্যন্ত এমন কোনও যান কিন্তু মানুষ বানাতে পারেনি। সম্ভবত আর পারবেও না। যে দিন পারবে, সে দিন যদি ওই যানে করে কেউ একটা দিন ভবিষ্যতে কাটিয়ে আবার পৃথিবীর মাটিতে ফিরে আসে, তা হলে সে দেখবে, ততক্ষণে পৃথিবীর বয়স বেড়ে গেছে একশো, দুশো বা তিনশো বছর।
ভ্রু কুঁচকে জুরান জিজ্ঞেস করল, আলোর চেয়ে দ্রুতগতি-যান কিংবা কল্পবিজ্ঞানের সেই টাইম মেশিন সত্যি সত্যিই যদি পৃথিবীর মানুষ কোনও দিন তৈরি করতে না-পারে, তা হলে কি তারা কোনও দিনই ভবিষ্যতে যেতে পারবে না?
— কেন পারবে না? ভবিষ্যতে পৌঁছনোর জন্য যে আলোর চেয়ে দ্রুতগতি যানই লাগবে, কে বলল?
— তা হলে যাবে কী করে?
সময়-কণা বলল, পথটাকে ছোট করে নেবে।
— সেটা কী সম্ভব?
— সবই সম্ভব। শুধু একটু বুদ্ধি খরচ করতে হবে।
জুরান বলল, কিন্তু কী ভাবে?
— ধরো, এক মাইল লম্বা আর এক মাইল চওড়া একটা বিছানার চাদরের দু’প্রান্তে দুটো সন্দেশ রাখলে। এক প্রান্তের সন্দেশ যখন পিঁপড়েরা ছেঁকে ধরে অর্ধেকটা খেয়ে সাবাড় করে দিল, তখন তুমি চাইলে, অন্য প্রান্তের সন্দেশটাও ওই পিঁপড়েগুলো খাক। কিন্তু নিজের হাতে সন্দেশটা তুলে তুমি ওদের মুখের সামনে দিতে চাইছ না। পাশাপাশি তুমি জানো, ওরা ওদের সহজাত-প্রবৃত্তি দিয়ে ঠিক টের পেয়ে যাবে ওখানে একটা সন্দেশ আছে। কিন্তু ওই সন্দেশটা এত দূরে যে, ওখানে যেতে হলে ওদের প্রচুর সময় লেগে যাবে। অথচ তুমি চাইছ, ওরা তাড়াতাড়ি পৌঁছক। তা হলে তখন তুমি কী করবে?
— কী করব!
সময়-কণা বলল, সব চেয়ে সহজ উপায় যেটা, তোমার তো সেটাই করা উচিত।
জুরান বলল, সেটা কী?
সময়-কণা বলল, চাদরের তলা দিয়ে চুপিচুপি হাত ঢুকিয়ে মাঝখানটা ধরে আস্তে আস্তে চাদরটাকে মুঠোর মধ্যে গুটিয়ে নেওয়া।
— তাতে লাভ?
সময়-কণা বলল, চাদরটা মাঝখান থেকে যত গুটোবে, চাদরটা কমে যাওয়াতে ততই চাদরের দু’প্রান্ত কাছাকাছি চলে আসবে। ফলে এক মাইল নয়, আধ মাইলও নয়, এমনকী একশো মিটারও নয়, তুমি যদি চাদরটা আরও বেশি করে টেনে নিতে পারো, তা হলে দু’প্রান্তের দুই সন্দেশের দূরত্ব কমতে কমতে হয়তো কয়েক ইঞ্চিতে এসে ঠেকবে। ঠিক সে রকম, বর্তমান আর ভবিষ্যতের মাঝখানে যে অনন্ত পথ রয়েছে, সেই পথটাকে যদি এ রকম কোনও এক কৌশলে কমিয়ে আনা যায়, তা হলে ভবিষ্যতে পৌঁছনোর জন্য এখনকার ধারণা অনুযায়ী আলোর চেয়ে দ্রুতগতি-যান-এর আর দরকার হবে না। এখনকার যে রকেট আছে কিংবা অত্যন্ত সাধারণ গতির যে বিমান আছে অথবা সে রকম হলে, একটা ধ্যাড়ধেড়িয়া স্কুটারই তখন ভবিষ্যতে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট হয়ে উঠবে।
জুরান একেবারে বিস্মিত। ভাবতে লাগল, সে কী! এমনও হতে পারে! রাস্তাটা গুটিয়ে ফেলতে পারলেই কেল্লা ফতে! টাইম মেশিনের আর দরকার হবে না! একটা স্কুটার হলেই হল! বাঃ, বেশ তো… তার পরেই কী মনে হল, নিজের মনেই বিড়বিড় করে বলল, সব ঠিকই আছে, কিন্তু এগুলো তো সব ভবিষ্যতের কথা। অনেকগুলো ‘যদি’র উপর দাঁড়িয়ে। এখনকার কথা তো সম্পূর্ণ আলাদা। অবশ্য সে যতই আলাদা হোক কিংবা যে যাই বলুক না কেন, এই মুহূর্তে একটা জায়গায় কিন্তু সবার মত এক। আর সেটা হল— টাইম মেশিন। না। পৃথিবীতে এখনও পর্যন্ত যা তৈরি হয়নি, কোনও দিন আদৌ তৈরি হবে কি না, যা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। হলেও, তার জীবদ্দশায় তো নয়ই, একমাত্র আলোর চেয়ে দ্রুতগামী সেই যান-এ করেই ভবিষ্যতে যাওয়া যায়।
কিন্তু সে তো কোনও যানে-এ ওঠেনি। তা হলে সে এখানে এল কী করে! তবে কি সেই এক চিলতে মেঘটা তাকে তুলে নিয়ে এসেছে! হতে পারে! আর তাই যদি হয়, তা হলে তো এরা পৃথিবী থেকে অনেক অনেক অনেক বেশি এগিয়ে। আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর পরে কী ঘটবে, পৃথিবীর অবস্থা তখন কেমন হবে, তা তারা বহু যুগ আগেই চাক্ষুষ করে নিয়েছে। আর সেটা যদি চাক্ষুষ করেই থাকে, তা হলে তো এদের কাছ থেকেই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে নেওয়া যায়। এটা মনে হতেই জুরান বলল, আচ্ছা, আমরা যে কিছু দিন পর পরই শুনি, পৃথিবী এই দিন ধ্বংস হবে, ওই দিন ধ্বংস হবে, সত্যিই কি পৃথিবী দশ-বিশ বা পঞ্চাশ-একশো বছরের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে?
সময়-কণা বলল, না।
— তা হলে?
— ধ্বংস হবে না। তবে মানুষও পৃথিবীতে খুব বেশি দিন থাকতে পারবে না।
অবাক হয়ে জুরান জিজ্ঞেস করল, সে কী? কেন?
— কারণ, পৃথিবীটা ধীরে ধীরে বাসের অযোগ্য হয়ে যাবে, তাই।
— কেন?
সময়-কণা বলল, সূর্যের তেজ কমতে কমতে এমন তলানিতে এসে ঠেকবে যে, রোগ-জীবাণুতে পৃথিবীটা একেবারে থিকথিক করবে। জন্মাবার পর থেকেই একটার পর একটা জীবাণুর কবলে পড়বে মানুষ। রোগে ভুগবে। যত দিন বেঁচে থাকবে, ধুঁকে ধুঁকেই থাকবে।
জুরান জিজ্ঞেস করল, সে কী! সেই জীবাণুকে প্রতিরোধ করা যাবে না?
— যাবে। তবে সেই জীবাণুর থেকেও মারাত্মক ভাবে মানুষের ক্ষতি করবে যুগ যুগ ধরে অজ্ঞতার কারণে মানুষেরই তৈরি করা নানান দূষণ।
— দূষণ!
— হ্যাঁ, দূষণ। বিভিন্ন কলকারখানা থেকে বেরোনো বর্জ্য পদার্থে মাটি দূষণ, গাড়ির পেট্রল পোড়া ধোঁয়ায় বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, দৃশ্য দূষণ থেকে শুরু করে স্যাটেলাইট থেকে বিচ্ছুরিত রেডিয়েশন থেকে জীবজগতের শরীর দূষণ এবং এখনও অবধি তোমরা যাকে কোনও দূষণ বলেই মনে করো না, সেই সব দূষণ, সঙ্গে দূষণ তৈরির নিত্যনতুন গজিয়ে ওঠা আরও অনেক ড্রেন ওই পৃথিবীকে শুধু মানুষেরই নয়, সমস্ত প্রাণিজগৎ এবং উদ্ভিদজগতেরও বাসের অযোগ্য করে তুলবে।
— তাই? তা হলে যে-যুদ্ধের ভয়ে আমরা সব সময় শঙ্কিত হয়ে থাকি, প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো যাতে আর একটা ভয়ঙ্কর যুদ্ধ না-ঘটে, যে জন্য অত বছর আগেই পৃথিবীর শক্তিশালী বেশ কয়েকটা দেশ মিলে তৈরি করেছিল সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ, আমরা মাঝে মাঝেই ভাবি, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের কথা না-হয় বাদই দিলাম, এখন পর্যন্ত শুধু ভারতেই মজুত রয়েছে সব চেয়ে শক্তিশালী যে তিন-তিনটে ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র— হাইড্রোজেন বোম। তার একটা ফাটলেই তো পৃথিবী একেবারে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। তা হলে কি সেটা নিয়ে অত ভয় পাওয়ার কিছু নেই?
— না না। কোনও ভয় নেই। ওটা বরং স্বাস্থ্যকর। যে কোনও গ্রহেই মাঝে মাঝে যুদ্ধ হওয়া ভাল।
— যুদ্ধ হওয়া ভাল! জুরান বিস্ময় ভরা চোখে সময়-কণার দিকে তাকাল।
সময়-কণা বলল, অবশ্যই ভাল। তাতে কিছু প্রাণহানি হয় ঠিকই, তবু আমি বলব, ভাল। যেমন গাছের ঝাড় বেড়ে গেলে কিছু কিছু অবাঞ্ছিত ডালপালা ছেঁটে দেওয়া উচিত। যাতে সে নতুন ডালপালা নিয়ে তরতর করে আরও ভাল ভাবে বেড়ে উঠতে পারে। ঠিক সেই রকম।
— কিন্তু যে কোনও যুদ্ধেই তো অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, রেলওয়ে স্টেশন, জমির ফসল…
— হ্যাঁ হ্যাঁ, হয়। আর হয় দেখেই তো নতুন উদ্যোমে ফের তৈরি করা হয়। না-হলে কি হত?
— কিন্তু ওই একটু একটু করে ক্ষতি হতে হতে যদি গোটা পৃথিবীটাই একদিন শেষ হয়ে যায়!
— হবে না। কারণ, পৃথিবীর ক্ষতি করার মতো ক্ষমতা মানুষের নেই। কোনও দিন হবেও না। মানুষ যেটা করতে পারে, সেটা হল— কলুষিত।
— কলুষিত! সেটা আবার কী!
— দেখেছ, কী অবস্থা! তোমাদের ভাষা কেমন হু হু করে পাল্টে যাচ্ছে! তোমাদের ভাষা তোমরাই বুঝতে পারছ না! অবশ্য এটাও হতে পারে, তোমাদের সব ভাষা মিলিয়ে যে জগাখিচুড়ি ভাষা তৈরি হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত এত দ্রুত তা পাল্টে যাচ্ছে যে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের অত্যাধুনিক ‘অটোমেটিক অনুবাদ যন্ত্র’ও সেটা আপ টু ডেট করে উঠতে পারছে না।
— সে নয়, ঠিক আছে। কিন্তু কলুষিত মানে কী?
— কলুষিত মানে কলঙ্কিত করা। নোংরা করা। অন্ধকারে ঢেকে দেওয়া।
— ও… তার মানে, মানুষ একটু-আধটু পৃথিবীর ক্ষতি করতে পারে ঠিকই, কিন্তু কোনও দিনই পৃথিবীকে ধ্বংস করতে পারবে না, তাই তো? আচ্ছা, এই যে মাঝে মাঝেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়, পৃথিবী তোলপাড় করে দেয় ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরি, টাইফুন, টর্নেডো, সুনামি, হেরিকেন… লক্ষ লক্ষ লোক মারা যায়। দেশের পর দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নতুন নতুন নামের ওই সব দুর্যোগ কি কোনও দিন আরও বড় আকার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিতে পারে?
— না। পারে না। কারণ, ওই প্রাকৃতিক দুর্যোগও তো পৃথিবীরই একটা অংশ। কোনও মানুষ কি নিজের হাতে নিজের গলা টিপে নিজেকে শেষ করে দিতে পারে? পারে না তো? ঠিক তেমনি, পৃথিবীরই একটা অংশ— দুর্যোগ, কখনও পৃথিবীকে ধ্বংস করতে পারে না। আর তার চেয়েও বড় কথা, শুধু নিজের নয়, প্রকৃতি কখনও কারও কোনও ক্ষতি করে না।
— সে কী!
— হ্যাঁ। আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতি মনে হলেও জানবে, প্রকৃতি যা ঘটায়, সেটা ভালর জন্যই ঘটায়। মঙ্গলের জন্যই ঘটায়।
— ভালর জন্য ঘটায়! মঙ্গলের জন্য ঘটায়! প্রকৃতি যা ঘটায়, সব কিছু ভালর জন্য! জুরানের চোখ চকচক করে উঠল। মুখ দিয়ে কোনও রা বেরোল না।
চলবে…