প্যারিস সেন্ত জার্মেই কোচ মাউরিসিও পোচেত্তিনো বলেছিলেন, লিওনেল মেসি তার সেরা অবস্থানের ধারে কাছেও নেই। লম্বা সময় মাঠের বাইরে কাটানোর পর প্রথমবার মাঠে নামায় ওই মন্তব্য ছিল ফরাসি ক্লাবটির কোচের। কিন্তু তিনি মেসি, চেনা ছন্দে ফিরতে তার বেশি সময় লাগে না। এ মাসে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আর্জেন্টিনার জার্সিতে ফিরে গোল না পেলেও রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আর বলিভিয়ার বিপক্ষে তো বিস্ফোরক মেসিকেই পাওয়া গেলো। দুর্দান্ত ফুটবলে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক করলেন হ্যাটট্রিক।
আজ (শুক্রবার) ভোরে মেসির হ্যাটট্রিকে ঘরের মাঠে বলিভিয়াকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে একবার লক্ষ্যভেদ করা মেসি দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুইবার জালে বল জড়িয়ে হ্যাটট্রিক করার পথে ছাড়িয়ে গেছেন পেলকে। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তিকে পেছনে ফেলে লাতিন আমেরিকার সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়েছেন তিনি। একই সঙ্গে আলবিসেলেস্তেদের এনে দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ৩ পয়েন্ট। ফলে লাতিন আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানটা আরও মজবুত করলো কোপা আমেরিকার বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
বুয়েনস এইরিসের এল মনুমেন্তালে উপস্থিত দর্শকদের আনন্দের জোয়ারে ভাসালেন মেসি। ১৪ মিনিটে প্রথমবার জাল খুঁজে পেয়ে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেন। ৬৪ মিনিটে দ্বিতীয় গোল, ওই গোলেই পেলেকে পেছনে ফেলেছেন তিনি। আর ম্যাচ শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে বলিভিয়ার কফিনে শেষ পেরেকটি মেরে পূরণ করেন হ্যাটট্রিক। মেসির অসাধারণ ফুটবলের সামনে বলিভিয়াকে বেশিরভাগ সময় আক্রমণ ঠেকাতেই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে।
অনেকদিন পর ঘরের মাঠে দর্শকদের সামনে ম্যাচ। উজ্জীবিত আর্জেন্টিনা শুরু থেকেই আক্রমণের পসরা সাজিয়ে ব্যস্ত রাখে বলিভিয়ার রক্ষণভাগ। গোলের জন্যও খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। স্বাগতিকদের এগিয়ে নেন মেসি। দেখার মতো এক গোল করে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে লিড এনে দেন। গোলটি দেখলে মনে হবে কত সহজে হয়ে গেলো! লিয়ান্দ্রো পারেদেসের কাছ থেকে বল পেলেন গোল থেকে ৩০ গজ দূরে। বলিভিয়ার এক খেলোয়াড়ের দুই পায়ের মাঝ দিয়ে বল বের করে কয়েক পা এগিয়ে চেপে থাকা প্রতিপক্ষের অন্য খেলোয়াড়দের বুঝে ওঠার আগেই ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া শট জড়িয়ে দেন জালে। সফরকারী গোলকিপারের কিছু করার ছিল না।
দ্বিতীয় গোলের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। একের পর এক আক্রমণে বল জালেও জড়িয়েছিলেন একবার লাউতারো মার্তিনেস। কিন্তু অফসাইডের ফাঁদে পড়েন তিনি। খানিক পরে এই মার্তিনেস মিস করেছেন সহজ সুযোগ। মেসির বানিয়ে দেওয়া বলটা একেবারে ফাঁকায় পেয়েও কীভাবে প্লেসিং করতে পারলেন না, ইন্টার মিলান স্ট্রাইকারও হয়তো বুঝতে পারলেন না। বল চলে যায় পোস্ট ঘেঁষে।
এরপর বিরতিতে যাওয়ার আগে মেসিও একটি ভালো সুযোগ তৈরি করেছিলেন। আনহেল দি মারিয়ার সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ানে আড়াআড়ি শট করলেও পোস্টে রাখতে পারেননি বল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে দ্বিতীয়বার জাল খুঁজে নিতে ভুল হয়নি তার। বেশ কয়েকটি ব্যর্থ চেষ্টার পর অবশেষে ৬৪ মিনিটে সফল। এই গোলে অবদান আছে লাউতারোরও। ইন্টার ফরোয়ার্ডের সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ায় দুই দফা বল দেওয়া-নেওয়া করে ছোট বক্সের সামনে প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারকে ডজ দিয়ে ডান পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন মেসি।
গ্রীষ্মের দলবদলে পিএসজিতে নাম লেখানো মেসির গোলের ক্ষুধা তখনও মেটেনি। ৮৮ মিনিটে নিজের ও দলের তৃতীয় গোলটি করেন ছয়বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী। ২৫ গজ দূর থেকে হোয়াকিন কোরেয়ার বুলেট গতির শট বলিভিয়া গোলকিপার প্রতিহত করলেও ক্লিয়ার করতে পারেননি। ফিরতি বলে শট করে জাল খুঁজে নিয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন মেসি।