নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের ‘প্রথম নারী সদস্য’ সন্দেহে এক কলেজছাত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। ওই কলেজছাত্রীর নাম জোবায়দা সিদ্দিকা নাবিলা। তার এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রবিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
সিটিটিসির দাবি, এই প্রথম আনসার আল ইসলামের কোনো নারী সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলো। এর আগে অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের নারী সদস্য গ্রেপ্তার হলেও তারা নাবিলার মতো ‘প্রশিক্ষিত’ ছিলেন না। ২৬ আগস্ট বাড্ডা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এই মুহূর্তে সিটিটিসির কাছে রিমান্ডে আছেন। ভোলার লালমোহন উপজেলার বাসিন্দা জোবায়দার বাবা একজন শিক্ষক।
পরিবারকে উদ্ধৃত করে সিটিটিসি বলছে, কলেজছাত্রীর মা–বাবা তার মধ্যে পরিবর্তন ঘটার বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। সে কারণে তাকে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। নাবিলা পাত্রের সঙ্গে দেখা করে ‘শহীদ’ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ও বিয়ে ভেঙে দেন। জিজ্ঞাসাবাদে নাবিলা জানিয়েছেন, তিনি ২০২০ সালের প্রথম দিকে নিজের নাম–পরিচয় গোপন করে ছদ্মনামে একটি ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলেন। একসময় তিনি ফেসবুকে আনসার আল ইসলামের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ‘তিতুমীর মিডিয়া’র খোঁজ পান।
তখন তিনি এই পেজে যুক্ত হয়ে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী ভিডিও, অডিও ও লেখা পড়তে শুরু করেন। এরপর তার ‘তিতুমীর মিডিয়া’র পেজের অ্যাডমিনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। পরে ‘তিতুমীর মিডিয়া’র পেজের ওই অ্যাডমিন আনসার আল ইসলামের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের লিংক তাকে দেন।
এভাবে ধীরে ধীরে ওই তরুণী আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে যুক্ত হন। ফেসবুক ও টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছদ্মনামে একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলে তিনি কাজটি করতেন বলে কাউন্টার টেরোরিজম পুলিশের ভাষ্য।
সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘নাবিলা আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ প্রচারের জন্য ব্যাপকভাবে টেলিগ্রাম মাধ্যম ব্যবহার করত। টেলিগ্রামে তার চারটি অ্যাকাউন্ট এবং সেই টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৫টির বেশি চ্যানেল তিনি চালাতেন। এসব চ্যানেলে তিনি আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী সহিংস ভিডিও, অডিও, ছবি ও ফাইল শেয়ার করতেন। তার সবগুলো টেলিগ্রাম চ্যানেল মিলে আনুমানিক ২৫ হাজার সাবস্ক্রাইবার আছেন, যারা নিয়মিত তার চ্যানেলগুলো অনুসরণ করেন।’
‘জিহাদ কেন প্রয়োজন’, ‘কিতাবুল জিহাদ’, ‘একাকি শিকারি লোন উলফ’, ‘স্লিপার সেলগুলোতে গোয়েন্দাদের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধের উপায়’, ‘নীরবে হত্যার কৌশল’, ‘পুলিশ শরিয়তের শত্রু’, ‘আল আনসার ম্যাগাজিন ইস্যু’, ‘জিহাদের সাধারণ দিক নির্দেশনা’, ‘তাগুতের শাসন থেকে মুক্তির ঘোষণা’ ইত্যাদি উগ্রবাদী বই বিভিন্ন সময়ে নাবিলার টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলো থেকে প্রকাশ করা হতো বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সিটিটিসি বলছে, আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত সৈয়দ জিয়াউল হকের কর্মী–সমর্থকদের উদ্দেশে লেখা কিছু নির্দেশনা হাতে পেয়েছিলেন তারা। ওই নির্দেশনায় তারিখ দেওয়া আছে গত বছরের ২৯ রমজান। সেখানেই প্রথম তিনি ‘ভাই ও বোনেরা’ বলে সম্বোধন করেন। এর আগে নারীদের প্রসঙ্গ একরকম উহ্যই ছিল দলটির সব কাজকর্মে।
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘নাবিলা আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন অফিসিয়াল ও আনঅফিসিয়াল চ্যানেলেও যুক্ত ছিলেন। সেসব চ্যানেলে আইইডি, স্মোক বম্ব, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করা এবং বিভিন্ন হামলার কৌশলগত বিষয় নিয়ে ‘ভিডিও ও ফাইল শেয়ার করতেন’ তিনি।’