যাঁর লেখার প্রধান চরিত্রগুলোই চোর, ডাকাত, বাটপার, ভবঘুরে, মিথ্যেবাদী, ভাগ্যহীন এবং প্রতারক, যাদের নিয়ে উনিশশো থেকে উনিশশো পাঁচ সালের মধ্যে, মানে ছ’বছরের মধ্যেই যিনি লিখে ফেলেছিলেন তিনশোরও বেশি গল্প এবং সেই গল্প লিখে পাঠকমহলে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন, তিনি কিন্তু কখনও চাননি তাঁর এই গল্পগুলো তাঁর নিজের নামে ছাপা হোক। এমনকী, যে সব পত্রপত্রিকায় এ সব গল্প তিনি ছাপতে দিতেন, সেই সব পত্রিকার সম্পাদকদেরও তিনি বলে দিয়েছিলেন, তাঁর আসল পরিচয় যেন কেউ না জানে। তার কারণ, তাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল অনেক কলঙ্ক, অনেক অপবাদ এবং অবশ্যই পাহাড় প্রমাণ অপমান।
প্রথম জীবনে তিনি যে ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন, সেখানে একবার এক হাজার ডলারের হিসেব মেলাতে না পারার জন্য তাঁর চাকরি চলে যায়। এক সপ্তাহের মধ্যে সেই টাকা দিতে না পারলে তাঁকে এরেস্ট করা হবে জানতে পারা মাত্রই তিনি টেক্সাস থেকে পালাতে যান হাউস্টনে। সেখানেও তাঁর নামে গ্রেফতারি সমন জারি হওয়ায় তাঁকে চলে যেতে হয় অরলিনসে। তারও পরে ট্রজিনোতে।
এত বার জায়গা বদল করে, গা ঢাকা দিয়ে থেকেও শেষ রক্ষা হল না। অবশেষে তিনি পুলিশের জালে ধরা পড়েন এবং বিচারে তাঁর জেল হয়ে গেল তিন বছর তিন মাস।
তাই তিনি চাননি তাঁর আসল পরিচয় কেউ জানুক। ফলে প্রকাশকেরা তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, আপনার নামে যদি বই না ছাপি, তা হলে কার নামে ছাপব? যে কোনও একটা নাম দিন। অন্তত একটা ছদ্মনাম।
তখন, যে অহিয়ো জেলে তিনি বন্দি ছিলেন, মনে পড়ে গেল সেই জেলখানার কথা। মনে পড়ে গেল সেই জেলখানার প্রহরীদের যিনি সর্দার ছিলেন, তাঁর কথা। তাঁর নাম ছিল— ওবিন হেনরি। সংক্ষেপে ‘ও হেনরি’। সেই সর্দারটি ছিলেন খুব ভাল। এই লেখকের সঙ্গে তার খুব মিষ্টি একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাই সেই নামটিই তাঁর লেখক জীবনের নাম হিসেবে বেছে নিলেন তিনি। এবং ‘ও হেনরি’ নামেই প্রকাশ পেতে লাগল তাঁর একটার পর একটা বই।
তাই তাঁর প্রকৃত নাম উইলিয়াম সিডনি পোর্টার হলেও, সে নাম একদিন সবাই ভুলে গেল। আর উনি পরিচিত হয়ে উঠলেন ওহিয়ো জেলখানার প্রহরীদের সর্দারের সংক্ষিপ্ত নাম ‘ও হেনরি’ নামে।