নাগরিকদের উদ্ধারে আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন

আফগানিস্তানে ধারণার চেয়ে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে তালেবান। দখল করে নিচ্ছে একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানী। এমন অবস্থায় দেশটিতে থাকা নাগরিকদের উদ্ধারে সেনা পাঠাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন।

কাবুলে মার্কিন দূতাবাসের সিংহভাগ কূটনীতিক এবং মার্কিন নাগরিকদের দ্রুত সরিয়ে নিতে ৩০০০ মেরিন সেনাকে কাবুলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ বা পেন্টাগন। এই সৈন্যরা কাবুল বিমানবন্দরে মোতায়েন থাকবে এবং বিশেষ বিমানে করে মার্কিন নাগরিক এবং কূটনীতিকদের ফিরে আনার কাজে সাহায্য করবে। খবর বিবিসির

পেন্টাগন জানিয়েছে, আরও অতিরিক্ত ৪০০০ মার্কিন মেরিন সেনা ওই অঞ্চলে যাচ্ছে যাতে পরিস্থিতি বেগতিক হলে তারা দ্রুত তারা আফগানিস্তানে যেতে পারে। কাবুল থেকে আমেরিকান নাগরিক এবং কূটনীতিকদের জরুরি ভিত্তিতে ফিরিয়ে আনার এই পরিকল্পনা ইঙ্গিত করছে যে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে প্রেসিডেন্ট বাইডেন অনড়।

হোয়াইট হাউজ এবং সামরিক সূত্র উল্লেখ করে নিউইয়র্ক টাইমস লিখছে, আগামি এক মাসের মধ্যে কাবুল সরকারের পতন হতে পারে বলে আমেরিকানরা আশঙ্কা করছে। আফগানিস্তানের উত্তরের বড় বড় শহর যে গতিতে তালেবান কব্জা করছে এবং যেভাবে আফগান সেনাবাহিনীর প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়ছে তাতে বাইডেন সরকার আফগানিস্তান থেকে আমেরিকানদের বের করে আনার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে।

- বিজ্ঞাপন -

বুধবার রাত এবং বৃহস্পতিবার সকালে দু’দফায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার সিনিয়র জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সাথে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে পরামর্শ করেন। সেখানে আমেরিকান নাগরিক ছাড়াও যেসব আফগান নাগরিক আমেরিকানদের জন্য কাজ করেছে এবং প্রাণের ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের সরিয়ে আনতে বাড়তি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন বাইডেন।

কাবুলে মার্কিন দূতাবাস থেকে গত কয়েকদিন ধরে কয়েক দফায় ফ্লাইট পাওয়া মাত্রই দ্রুত আফগানিস্তান ছাড়ার জন্য আমেরিকান নাগরিকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস শুক্রবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, কাবুলে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরিয়ে আনার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হবে। এই সংখ্যা হবে চার হাজারের মত যাদের মধ্যে ১৪০০ আমেরিকান নাগরিক।

প্রাইস বলেন, ‘তালেবানের সামরিক তৎপরতা যেভাবে বাড়ছে, যেভাবে সহিংসতা এবং অস্থিতিশীলতা আফগানিস্তান জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

কিন্তু একই সাথে মিপ্রাইস কাবুলে দূতাবাস বন্ধের সম্ভাবনা নাকচ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আবার পরিষ্কার করতে চাই যে কাবুলে দূতাবাস খোলা থাকবে।’

- বিজ্ঞাপন -

নির্ভরযোগ্য একাধিক সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস লিখছে, আফগানিস্তান থেকে দূতাবাস কর্মীদের সরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি দোহায় তালেবানের কাছ থেকে নিশ্চয়তা চাওয়া হচ্ছে যে কাবুল দখল করলেও তারা যেন মার্কিন দূতাবাসের ওপর কোনো হামলা না করে।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা আগামি এক মাসের মধ্যে তালেবানের হাতে কাবুলের পতন হতে পারে। শুক্রবার দক্ষিণ আফগানিস্তানের আরো তিনটি বড় শহর – লশকার গাহ, হেরাত এবং কান্দাহার- তালেবানের দখলে গেছে। আর মাত্র তিনটি বড় শহর – কাবুল, জালালাবাদ এবং মাজার-ই শরিফ- এখনও সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ওদিকে আমেরিকানদের কাছ থেকে ঘোষণা আসার পরপরই ব্রিটেনও জানিয়েছে কাবুলে ব্রিটিশ দূতাবাসের কর্মী এবং ব্রিটিশ নাগরিকদের ফিরিয়ে আনায় সাহায্য করতে ৬০০ সৈন্য কাবুলে পাঠানো হচ্ছে। গত সপ্তাহেই ব্রিটিশ সরকারে পক্ষ থেকে সমস্ত ব্রিটিশ নাগরিককে যত দ্রুত সম্ভব আফগানিস্তান ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এখনও প্রায় ৪০০০ ব্রিটিশ নাগরিক আফগানিস্তানে রয়েছে।

- বিজ্ঞাপন -

তবে, আমেরিকানদের সুরে ব্রিটিশ সরকারও জোর দিয়ে বলছে কাবুলে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার ল্যরি ব্রিসটো এবং অল্প কজন কর্মকর্তা আফগানিস্তানে রয়ে যাবেন। তবে তারা কাবুলের আরও কোনো সুরক্ষিত জায়গায় চলে যাবেন।

সায়গন থেকে পালানোর সাথে তুলনা

তালেবান যে দ্রুত গতিতে আফগানিস্তান দখল করে নিচ্ছে তাতে সৈন্য প্রত্যাহারে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সিদ্ধান্ত তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন আমেরিকানদের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। কোনো ব্রিটিশ কোনো সরকারি মন্ত্রীর মুখ থেকে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের সমালোচনা বিরল ঘটনা।

মার্কিন সেনেটের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সদস্য মিচ ম্যাকোনেল আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান নাগরিক ও কূটনীতিকদের সরিয়ে আনার সিদ্ধান্তের সাথে ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনামের সায়গন থেকে ‘অপমানজনক প্রত্যাহারের‘ সাথে তুলনা করেছেন।

এক বিবৃতিতে সেনেটে রিপাবলিকান নেতা মিচেল বলেন, নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে সৈন্য পাঠানোর অর্থ হলো সরকার কাবুল পতনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আমেরিকাকে ‘১৯৭৫ সালে সায়গন পতনের চেয়েও আরো অপমানজনক পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে’।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষে সায়গনের একটি ভবনের ছাদ থেকে মার্কিন নাগরিক এবং আমেরিকানদের ভিয়েতনামি সহযোগীদের হেলিকপ্টারে উঠে পালাবার প্রাণান্তকর চেষ্টার যে ছবি ভিয়েতনামের আমেরিকার পরাজয়ের প্রতীক হিসাবে দেখা হয়, সেটি এখন সামাজিক মাধ্যমে ঘুরছে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!