বিরতিহীন
তখন সূর্য মধ্য গগনে, পোয়াতি স্রোতে
অলস দুপুর সত্য মিথ্যার বাণে বুদবুদ।
ঘামঝরা কর্মীর রক্ত চোষে সমাজ দর্পণ
কাব্য ভনিতার আড়ালে গণিকার লালসা।
এখানে
ললাটে ললাটে বিনোদন বেঁচে থাকার ইশারা
মোহিত জাল, বুদবুদে ফেনায় রসাতল।
পরজীবী স্বর্ণলতিকা সৌন্দর্য ছড়ায়
ক্ষমতাবান নিজ চরিত্র আড়ালে লুকায়।
অসম ব্যবস্থাপনা লৌহদন্ড মরিচায়
সহিষ্ণু হতে হতে ক্ষয়িষ্ণু নিথর নিষ্পলক।
কার্তুজ রাইফেলে হৃদপিণ্ডকে
দু’ভাগে চিরে দিয়ে বলি, ঘুমিয়ে যা—
অবিনাশী আত্মা, মৃত্তিকা সুদর্শনা।
ঝড়ের তাণ্ডব
আমি ততটাই নির্লজ্জ হতে পারি
পৃথিবীর তটরেখায়, ভাঙাচোরা ঝড়ের তাণ্ডবের মতো!
যতটা পথ মাড়িয়াছো তুমি, সূর্য ডোবার ক্ষণ পর্যন্ত
সমস্ত রাতের কড়া শাসন
উপেক্ষা করা আমার অধিকার।
এখানে সীমানা টানা মানা
পরিযায়ী পাখিদের ডানা
ভেঙে দেওয়া, কাশীধামের তীর্থ তাকে তোলা থাক।
আর গো-ক্ষুরের দাবানো দুপুর বিসর্জ্জিত
ইটরাঙা পশ্চিমের আকাশ!
সাদা সাদা কাশ ফুলো মেঘ উড়ে যায় স্রোতের টানে
গুমোট গরম, দম ধরে বসে আছে পৃথিবী।
কি অঘটন ঘটবে কি জানি?
আমি হারিনি—আমি হারিনি—
পিলসুজে পেঁজা তুলো কেন হতে যাই
কপিলার কুবের মিলে নতুন পৃথিবীর প্রত্যয়ে
ছেড়া দ্বীপ — জল —- অনন্ত ঢেউ
দাঁড়হীন মাঝি—কোথাও কি আছো কেউ?
সৃষ্টির রহস্য
চৌরঙ্গী লেনের পরিক্রমা শেষে—
দাদুর কোমরে গুঁজে রাখা হরিতকী আর
অর্জুনের ছালের গুঁড়ো যোগেন্দ্র রসের
কৌটায় ভরা সেসব দিন আর
কোনদিন ফিরবে না—-।
আরো শোনানো সে মধুবালার গান
নটি বিনোদিনী যাত্রা—অপেরায়,
রূপা গাঙ্গুলির দ্রৌপদী
ঠাম্মার পছন্দের তালিকায়–।
কুঁড়ি থেকে কুড়িতে পৌঁছানো জীবন
পরপর চার চারটি মাংস পিণ্ডের বহিরাগমন
জীবন থেকে জীবন, প্রসবের ইতিহাস
দলিত থেকে মহারাজা
একই সূত্রে গাঁথা।
ঐ সেই উচ্চবিত্তের ঘোলা নোনা জল
প্রতিটি রাতের আঁধারে একই মিল-অমিল,
সেখানে বৃষ্টির সজীবতায় সৃষ্টি নির্ধারিত–।
কচি কলাপাতা জলে ভিজে শীতে কাঁপছে থরথর
জন্মের আনন্দে নাকি ভয়ে—-?
বারান্দায় রোদ্দুর
একদিন ভোর ভোর সকালে তুমি এলে
হাতে হাত রেখে বললে ভালোবাসি
ভালোবাসি প্রিয়, সুন্দর সকাল —
পাখি ডাকা ভোর, মুগ্ধ করে আমাকে।
সূর্যের প্রতাপ পাল্লা দেওয়ার আগে
তোমার হৃৎস্পন্দনের মাত্রা মেপেছিলাম
কান পেতে শুনলাম, মিনিট মাপা টিপটিপ
রক্তস্নাত কার্গিল গতিতে ছুটছে জীবন।
আজ চৈত্রের বিশল্য করণির বাড়ন্ত যত্নে
লক্ষ্মণ জীয়ে যায়, সীতা হরণের পরিণাম,
মন্দোদরীর তপস্যা কেন মিছে হবে, নাহি ভয়
মেঘনাদের চিৎকার, ভগবানও অশ্রু ভাসায়।
আমি প্রতীক্ষিত বালিয়াড়িতে বহুযুগ অপেক্ষায়
মোহনায় কেন আছড়ে পড়ে ঢেউ, তুমিহীনা তাই
হনুবক্ষে রামনাম, বিশ্বাস চেতনে অরিন্দম
আমি এঁকে দিয়েছি সত্যের সনদ জাতিসংঘে।
কালক্ষয়ে জাগুক মহাকালের স্রোতো ধারায়
কেবা আপন, কেবা পর এ কেমন মরণ
গাণ্ডীব তীর ধনু খসাইব আজ বীর সাওয়ার
লয় ক্ষয় একই হয়, নাই জয় অথবা পরাজয়।
সবই এক, এক তার, একই কেন্দ্র বিন্দু
হঠাৎ ঘূর্ণন থেকে খসে পড়া ভাঙা উল্কাপিণ্ড
মহাকর্ষ বিজ্ঞান ঢোক গিলে, হালখাতার দানে
আমরা কি বুঝেছি সেই মহাকাল আর মিলনের মানে?
উত্তরণ
সেদিন সকাল বেলা সোজা ঢাকা মেডিকেল __
হাঁটছি আর হাঁটছি।
ভোরের সকাল বহুকিছু শেখায়; রাস্তার দু’ধারে
পথ মানুষের আলাপ, আধা ঘুম,
সকালে রুটি বানানোর তোড়জোড়, মাটির চুলা
ঠিক করা, রাস্তায় চায়ের দোকান খোলার দৃশ্য !
পায়ে পায়ে এগিয়ে যাওয়া বার্ণ ইউনিট
বহু জীবন এখানে জীবন্ত!
পরিমাপ ভীষণ স্পষ্ট আর সহজ
এ্যাম্বুলেন্স সারিসারি দাঁড়ানো!
এখানে জীবন আর মৃত্যু একই সীমারেখায়।
বিভিন্ন ঔষধের সংমিশ্রণে এক নতুন
আতরিক গন্ধের সমাহার
আমি নীরব, নিরাকার!
মানস চক্ষুর অন্তরালে গুমরে মরে
স্বামী, সন্তানহারা রক্ত রঞ্জিত হৃদবলয়।
ফিনকি দিয়ে ওঠে বারেবার, কেন
রুখতে পারে না, মৃত্যু নামক যন্ত্রণার!
নার্সদের ছুটাছুটি, ছুরি,কাচি, ব্লেডের ঝনঝনানি
ফরসেফ, টিসু, প্যাড, সিরিঞ্জ,
ট্রেতে রাখা গাদা গাদা তুলা
সবই মৃত্যুর ভয়ানক জ্বালা!
কে বলে মৃত্যু তুঁহু মম শ্যাম সমান?
সে কত বীভৎস, সে কত করুণ
সে যে কত জীবন্ত, কত সঠিক
প্রত্যক্ষদর্শী ঠিকই জানবেন।
ছোট ছোট ভ্রুণের প্লাবিত রুধিরে ভেসে গেছে
পৃথিবীর সকল চেতনা।
আমরা নাকি গর্বিত, সৃষ্টির সেরা,
মানব নাকি পৃথিবীর?
অপারেশন থিয়েটার, লাল আলো জ্বলে ওঠে __
চারিদিক সুনসান, আরেকবার এলার্ট
স্যালুট—-? কাকে —দিব?
জীবন কে, নাকি ধর্ম কে?
স্পর্ধা
সমৃদ্ধ হতে হতে সুসজ্জিত মালঞ্চে
মনন শ্রমের ব্যালকনি গুল্মে ভরেছে।
ধৈর্য্যহীনা বালির চরায় ভাবনা দেয় উঁকি
সাময়িক যান্ত্রিক জীবন সিকেই তুলে রাখি।
বিশুদ্ধ বর্ণের কোটরে শব্দ ভেদী বাণ
জাগিয়ে দেওয়া বলে চলা শুভ্রতার গান।
দূর অজানায় পাড়ি জমায় ময়ূরপঙ্খী তরী
নব নব আহ্বানে কালের স্বপ্ন শুধু গড়ি।
অধরা সৌষ্ঠব ওষ্ঠে মৃদু মৃদু ধ্বনি
শিরায় শিরায় কেঁপে ওঠে রক্তের কাঁপুনি।
আড়ষ্টতা ভাঙল এবার শিকল ভেদী গানে
আগামীর যুদ্ধ হবে “মানবতার” কোন এক রণে।