নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিতে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। জুন মাসে ২৭২ জনের মাঝে মশাবাহিত ডেঙ্গু শনাক্ত হলেও জুলাই মাসের প্রথম ২৫ দিনেই এই সংখ্যা এক হাজার ৩০৭ জন। শুধু তাই নয়, জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৩৭২ জনের মাঝে ডেঙ্গু শনাক্ত হলেও দেশে ২০ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত ছয় দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এর চেয়ে বেশি— ৩৯৭ জন।
এদিকে, সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলছে, এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তিন জনের ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার তথ্য পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত এর কোনোটিই পর্যালোচনা করা হয়নি। ফলে এখন পর্যন্ত এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে দেশে অনেকেই ভাবছেন জ্বর মানেই কোভিড-১৯। আর তাই তারা ডেঙ্গু পরীক্ষা না করে বাসায় অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করালেও ডেঙ্গু পরীক্ষা করাচ্ছেন না। আবার অনেকে কোভিড-১৯ ভেবে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ খাচ্ছেন। এতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। দেরিতে পরীক্ষার ফলে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পরপরই প্লাটিলেটের মাত্রা পাওয়া যাচ্ছে অনেক কম।
এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর অবশ্য কয়েকদিন আগেই সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, জ্বর হলেই যেন কোভিডের পাশাপাশি ডেঙ্গুও পরীক্ষা করিয়ে নেন সবাই। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও একই কথা জানিয়ে বলছেন, জ্বর হলে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করানোও জরুরি। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কার্যক্রমও যথাযথভাবে হওয়া প্রয়োজন। তার জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারিতে ৩২ জন ও ফেব্রুয়ারিতে ৯ জনের ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য পাওয়া যায়। এরপর মার্চে ১৩, এপ্রিলে তিন জন, মে মাসে ৪৩ জন ও জুন মাসে ২৭২ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। জুলাইয়ে এসে এই সংক্রমণ মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এ মাসের প্রথম ২৫ দিনে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৩০৭ জন।
সব মিলিয়ে রোববার (২৫ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে দেশে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এক হাজার ৬৭৯ জন। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন এক হাজার ২১৬ জন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪৬০ জন। এর মাঝে মাত্র ছয় জন ঢাকা বিভাগের বাইরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন।