একসময় পয়লা বৈশাখ আসার অনেক আগেই প্রকাশকেরা নেমে পড়তেন কর্মযজ্ঞে। যাতে তাঁরা তাঁদের প্রকাশিতব্য বইগুলি ঠিক পয়লা বৈশাখের দিনই পাঠকদের হাতে তুলে দিতে পারেন।
তার পর বই প্রকাশের সেই উৎসবটা ঘুরে গেল বইমেলার দিকে। পয়লা বৈশাখে দু-একটা বই বের হলেও বেশির ভাগ বইই প্রকাশ করতেন কলকাতা বইমেলাকে লক্ষ্য করে।
তারও পরে আর কলকাতা বইমেলা নয়, অনেক ছোটখাটো প্রকাশকও বই প্রকাশের আদর্শ সময় হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন জেলার বইমেলাকে।
দীর্ঘদিন ধরেই বই বিক্রির প্রবণতা এমনিতেই কমছিল। সেই প্রবণতা আরও বেশি করে দেখা দিল এই অতিমারির সময়ে লকডাউন শুরু হতেই।
লোকে বাজার করে কিছু নিয়ে এলেও করোনার ভয়ে সেগুলোকে ধুয়েটুয়ে স্যানিটাইজ করে ঘরে তুলতেন। বাইরের জিনিস সচরাচর ঘরে ঢোকাতেন না। অনেকেই বন্ধ করে দিয়েছিলেন দৈনিক খবরের কাগজ নেওয়াও।
পাশাপাশি বইয়ের দোকান বন্ধ থাকার ফলে দোকানদার যেমন বই সাপ্লাই দিতে পারছিলেন না, ঠিক তেমনি পাঠকেরাও হাতের কাছে বই না পাওয়ায় অন্য বিনোদনের দিকে ঝুঁকছিলেন।
সেই ঝোঁকাটাই কাল হয়ে দাঁড়াল। এখন দোকানগুলি সাময়িক সময়ের জন্য খুললেও বই আর কেউ নিতে আসছেন না। দোকানদারেরা হাপিত্যেশ করে বসে আছেন।
বহু লোক বইয়ের দোকান তুলে দিয়ে পান, বিড়ি, সিগারেট, এমনকি শাড়ির দোকান পর্যন্ত খুলে বসেছেন। আর যেহেতু বইয়ের দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, বই বিক্রি না হওয়ার ফলে প্রকাশকের ঘরে এবং বাইন্ডিংখানায় স্তূপাকৃতি হয়ে পড়ে থাকছে ছাপানো ফর্মা।
আর তার ফলে নতুন করে আর কোনও বই করার দিকে ঝুঁকছেন না কোনও প্রকাশক। মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রকাশন শিল্প। যাঁরা অল্প বয়সী প্রকাশক, তাঁরা নিজেদের গড়ে তোলা কিংবা পৈতৃক সূত্রে পাওয়া প্রকাশনা ব্যবসায় তুলে দিয়ে নতুন ব্যবসার দিকে হাত বাড়াচ্ছেন। আর যাঁরা বয়স্ক প্রকাশক, তাঁরা দোকানের ঝাঁপ ফেলে দিচ্ছেন। কেউ কেউ বিক্রি করে দিচ্ছেন তাঁদের দোকানঘরও।
এই অবস্থা আরও কিছু দিন চললে শুধু যে এক এক করে সব প্রকাশনা সংস্থা মুখ থুবড়ে পড়বে, অনেকেই তল্পিতল্পা গুটিয়ে অন্যত্র পাড়ি দেবেন, তাই-ই নয়, প্রকাশনা শিল্প বলে যে একদিন কিছু একটা ছিল লোকে সেটাই ভুলে যাবে।