চিকিৎসক ও নার্সদের গাফেলতির অভিযোগ নিয়ে বাক-বিতান্ডার জের ধরে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউতে হামলা চালিয়ে সরঞ্জাম ভাংচুর করেছে রোগীর স্বজনরা।
গতকাল শনিবার (১৭ জুলাই) বেলা সাড়ে ৩ টার দিকে এ ঘটনা ঘটলে খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। এরপর রোগ্যীর স্জনরা ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি মিটমাট করে নেন।
পরে চিকিৎসক ও নার্সদের কাছে ক্ষমা চেয়ে পার পায় রোগীর স্বজনরা। এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এইচ এম সাইফুল ইসলাম জানান, চিকিৎসক ও নার্সদের সাথে কোন ধরণের অপ্রিতীকর ঘটনা ঘটেনি। তবে রোগীর মৃত্যুর খবরের পরপরই স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং একটি ভেন্টিলেটর মেশিনের ওপর আঘাত করে বসেন। এতে ভেন্টিলেটর মেশিনটিতে ত্রুটি দেখা দিয়েছে।
বিষয়টি জানার সাথে সাথে থানা পুলিশকে অবহিত করা হলে তারা এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। আর ভেন্টিলেটর মেশিনটির ত্রুটির খবর সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হয়েছে বলে শেবাচিম হাসপাতাল পরিচালক জানান।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম জানান, রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে স্বজনদের বাক-বিতান্ডা হয়। এ নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে খবর পেয়ে তারা গিয়ে রোগীর চার স্বজনকে আটক করে।
পরে ওই স্বজনরা নিজেদের ভূল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিত স্বাভাবিক রয়েছে বলে ওসি জানান।
হাসপাতাল ও প্রতক্ষ্যদর্শী সূত্রে জাানাগেছে, গত ১০ জুলাই রাত ২ টার দিকে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান (৪০) অক্সিজেন সিচুরেশন লেভেল খুবই কম নিয়ে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
এরপর গত ২ দিন আগে তার অবস্থা আরো খারাপ হওয়ার পর করোনা ওয়ার্র্ডের আইসিইউতে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার বেলা সাড়ে ৩ টার দিকে তার মৃত্যু হলে স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে।
এসময় মৃতের ভাই হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে আরো ৩/৪ জন সেখানে হট্টগোল বাধায় এবং আইসিইউ’র একটি ভেন্টিলেটর মেশিন ও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা মেশিনের ওপর হামলা চালায়।
তাদের হামলায় হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা মেশিনটি ক্ষতিগ্রস্থ না হলেও ভেন্টিলেটর মেশিনটি নষ্ট হয়ে যায়।
তাছাড়া দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সদের সাথেও বাকবিতান্ডায় লিপ্ত হয়ে অশোভন আচরণ করেন রোগীর স্বজনরা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে এবং রোগীর ৪ স্বজনকে আটক করে। পরবর্তীতে চিকিৎসক ও নার্সদের কাছে ক্ষমা চেয়ে পার পায় রোগীর স্বজনরা।
রোগীর স্বজন হাফিজুর রহমান দাবি করেন, তাদের রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তারা চিকিৎসকদের সহায়তা চেয়েও তাৎক্ষনিক কোন সহায়তা পাননি। বরং চিকিৎসক এসে রোগীকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল ডা: মনিরুজ্জামান শাহীন বলেছেন, আইসিইউতে একই সময়ে আরো ৪ জন রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন ছিলো। জনবল সল্পতা থাকার পরেও তারা সবাইকে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় তারা ওই রোগীর কাছেও গিয়েছিলেন এবং ইসিজিও করান। কিন্তু রোগীর মৃত্যুর ঘোষনার পরপরই স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।