করোনাভাইরাস মহামারি: লকডাউনের পরেও কেন শিশু জন্মের হার বাড়েনি

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
6 মিনিটে পড়ুন

যারা ভেবেছিলেন যে লকডাউনের সময় দম্পতিদের সন্তান উৎপাদন ছাড়া তেমন কিছু করার থাকবে না তারা জেনে বিস্মিত হবেন যে বাস্তবে আসলে সেরকম ঘটেনি।

যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত এক শতাব্দীর ইতিহাসে দেশটিতে সবচেয়ে কম সংখ্যক শিশুর জন্ম হয়েছে এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশেও শিশু জন্মের হার অনেক কমে গেছে।

মহামারির শুরুতে জার্মানির ফ্রেডেরিকে যখন তার বয়স্ক বাবা মাকে দেখাশোনা করার কথা ভেবেছিলেন, তার মনে হয়েছিল যে এটা তার জীবনে উপহার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, কারণ এর ফলে তিনি তার পরিবারের সঙ্গে আরো বেশি সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছেন।

করোনাভাইরাস মহামারি: লকডাউনের পরেও কেন শিশু জন্মের হার বাড়েনি
করোনাভাইরাস মহামারি: লকডাউনের পরেও কেন শিশু জন্মের হার বাড়েনি 36

কিন্তু কয়েক মাস পরেই ৩৩ বছর বয়সী এই নারী অনুভব করতে শুরু করেন যে তার জীবনে বুঝি বড় কোন ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।

- বিজ্ঞাপন -

ফ্রেডেরিকে একজন অবিবাহিত নারী। তিনি ভেবেছিলেন খুব শীঘ্রই কারো সঙ্গে তার পরিচয় হবে যার সঙ্গে তিনি তার সংসার জীবন শুরু করতে পারবেন। কিন্তু তার মনে হলো যে মহামারি আসলে জীবন থেকে সেই সুযোগ কেড়ে নিচ্ছে।

“বর্তমানে সময় অত্যন্ত মূল্যবান এবং মনে হচ্ছে আমার জীবন যেন থমকে গেছে,” বলেন তিনি।

অনলাইনে ডেটিং করার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় বাইরে গিয়ে রোমান্স করার মতো যথেষ্ট আগ্রহ তার ছিল না।

এখনও তিনি বিষণ্ণতায় ভুগছেন। তার মাথায় সবসময় একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খায়: “এই অবস্থার যখন সমাপ্তি ঘটবে তখন তো আমার সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে না।”

“যখন আমি সন্তান নিতে পারতাম তখন আমি ঘরে বসে আছি।”

- বিজ্ঞাপন -

“বিস্ময়কর কিছু নয়”

“মহামারির পরিস্থিতি এতো খারাপ সেটা দেখে আমি বিস্মিত হইনি,” বলেন ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ফিলিপ এন কোহেন।

“কিন্তু বাস্তবেও যে এমন ঘটছে সেটা দুঃখজনক।”

গত বছরের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ব্রুকিংস ইন্সটিটিউটের অর্থনীতিবিদরা অনুমান করেছিলেন যে দেশটিতে শিশু জন্মের ঘটনা তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখ কমে যাবে।

- বিজ্ঞাপন -

একই সময়ে ইউরোপেও একটি জরিপ চালানো হয়েছে যাতে দেখা গেছে জার্মানি ও ফ্রান্সে ৫০% মানুষ ২০২০ সালে সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকছে। ইতালিতে ৩৭% মানুষ বলেছে, তারা এই পরিকল্পনা বাদ দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত একটি দপ্তর সিডিসির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে ডিসেম্বর মাসে শিশুর জন্ম ৮% কমে গেছে।

ইতালির পরিসংখ্যান অনুসারে, এই বছরের শুরুতে শিশু জন্মের হার কমেছে ২১.৬% এবং স্পেনে এই হার, রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে, সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে- কমেছে ২০%।

মহামারি শুরু হওয়ার পর প্রথম নয় মাসে ফ্রান্স, কোরিয়া, তাইওয়ান, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া- সব দেশেই জন্মের হার হ্রাস পেয়েছে।

বলা হচ্ছে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে এসব দেশে গত ২০ বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম সংখ্যক শিশুর জন্ম হয়েছে।

মাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিউটের জনসংখ্যা বিষয়ক গবেষক জশুয়া ভিল্ডে এবং তার দল এই হ্রাস আগেই অনুমান করেছিলেন এবং তাদের গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে এই অবস্থা, অন্তত যুক্তরাষ্ট্রে, আরো কয়েক মাস ধরে অব্যাহত থাকবে।

camylla battani dz8g0IxEqh0 unsplash করোনাভাইরাস মহামারি: লকডাউনের পরেও কেন শিশু জন্মের হার বাড়েনি
করোনাভাইরাস মহামারি: লকডাউনের পরেও কেন শিশু জন্মের হার বাড়েনি 37

অক্টোবর মাসে তারা অনুমান করেছিল যে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে শিশুর জন্ম ১৫.২% কমে যাবে।

কিন্তু এখন তারা দেখছে যে এই হার কমার প্রবণতা অগাস্ট মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

লা হচ্ছে, এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে শিশুর জন্মের ঘটনা কখনো এতোটা কমে যায় নি।

এছাড়াও শিশু জন্মের ওপর ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দা এবং ১৯২৯ সালের মহামন্দার চেয়েও বর্তমান মহামারির প্রভাব আরো বেশি দীর্ঘস্থায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।

ভিল্ডে বলেন, “সাধারণত এধরনের মন্দা ও মহামারির সময় আমরা দেখি যে শিশু জন্মের হার কমে যায় এবং পরে সেটা আবার বাড়তে থাকে। আপনি হয়তো কল্পনা করতে পারেন যে যখন প্রথম ওয়েভ শেষ হলো, অনেকেই ভেবেছিল যে এখনই সন্তান নেওয়ার সময়।”

কিন্তু এবারের মহামারিতে সেরকম হয়নি।

“এবার আমি যা দেখতে পাচ্ছি তা হলো যেসব লোকজন সন্তান নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল তারা আরো দীর্ঘ সময়ের জন্য অপেক্ষা করছে।”

কেউ কেউ তো এই সিদ্ধান্তও নিয়েছে যে তারা আর সন্তানই নেবে না।

স্টিভের বেলায় এমনটাই ঘটেছে। গত তিন বছর ধরে তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে বারবার একই বিষয়ে কথাবার্তা বলছেন।

স্টিভের স্ত্রী আরো একটি সন্তান নিতে চান- তাদের দুই পুত্র সন্তানের জন্য একটা ছোট্ট বোন নিতে চান তিনি। কিন্তু স্টিভ চারজনের সংসার নিয়েই খুশি।

“ফলে প্রত্যেক বছর আমাকে নানা ধরনের অজুহাত দেখাতে হয়,” বলেন স্টিভ।

তারা নাইজেরিয়াতে থাকেন। স্টিভ তার স্ত্রীকে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল নয়। কিন্তু তার স্ত্রী সেটা কিছুতেই বুঝতে চান না।

“কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির পর এই প্রথম সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আর কোনো সন্তান নয়।”

জাতিসংঘের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মহামারির কারণে ১১৫টি দেশের এক কোটি ২০ লাখ নারী পরিবার পরিকল্পনা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং এর ফলে পিতামাতার না চাওয়া সত্ত্বেও প্রায় ১৪ লাখ শিশুর জন্ম হতে পারে।

শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়াতেই সরকার অনুমান করেছিল যে মহামারির কারণে পাঁচ লাখ শিশুর জন্ম হতে পারে।

একারণে লকডাউনের সময় সরকার শহরে শহরে গাড়ি পাঠিয়েছে যেখান থেকে লাউডস্পিকারে সন্তান না নেওয়ার বিষয়ে লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে।

এসব বার্তার মধ্যে রয়েছে: “পিতা, অনুগ্রহ করে আপনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন,” “আপনি সেক্স করতে পারেন, বিয়ে করতে পারেন কিন্তু গর্ভধারণ করবেন না।”

দেশটির জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা সংস্থা বলছে, লকডাউনের কারণে লোকজন ক্লিনিক ও ফার্মাসিতে যেতে না পারার কারণে প্রায় এক কোটি মানুষ জন্মনিরোধক ব্যবহার করতে পারেনি।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!