আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার বরিশাল নগরের রুপাতলী বাস স্ট্যান্ডে দুই গ্রুপ শ্রমিকের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পৌনে ৪ ঘন্টা বন্ধ থাকার পর দক্ষিনাঞ্চলের ১৭ রুটে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। আর এতে লকডাউন শিথিলের পর প্রথম দিনেই যাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফোর্সসহ উপস্থিত হয়ে পারস্থিতি শান্ত করেছি। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হবে,তাদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হবে।
এদিকে বেলা ১ টার দিকে রুপাতলী বাস টার্মিনালে শ্রমিকদের ওপর হামলার খবরে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের মালিক ও শ্রমিক সমিতির নেতারা ঘটনাস্থলে যান। তারা বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য বলেছেন বলে জানিয়েছেন বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে।
পুলিশ প্রশাসন শ্রমিকদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারের আশ্বাসের পর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করায় বেলা ২ টার পর রুপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে দক্ষিনাঞ্চলের সব রুটে বাস চলাচল শুরু হয়।
বৃহষ্পতিবার (১৫ জুলাই) বেলা ৩ টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল-পটুয়াাখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি কাওসার হোসেন শিপন ও বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ শাহরিয়ার বাবু।
শ্রমিক নেতারা হুশিয়ারী দিয়ে জানান, দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় না-আনা হলে কঠোর কর্মসূচি পালনে তারা বাধ্য হবেন।
এদিকে সকালে শ্রমিকদের দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর নগরীর রুপাতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করলে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
শ্রমিকরা জানিয়েছে,সম্প্রতি বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের দুটি কমিটি নতুনভাবে গঠিত হয়। এর একটির সভাপতি সাবেক শ্রমিক নেতা সুলতান মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলাম টিটু। অপর কমিটির সভাপতি বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ শাহারিয়ার বাবু। এ কমিটি দুটি গঠনের পর থেকেই শ্রমিক নেতাদের মাঝে বিভিন্ন সময়ে ছোটখাটো মারামারি ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এ নিয়ে বৃহষ্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে টার্মিনাল ভবনের নীচতলায় কাউন্টারের সামনে দুই গ্রুপ শ্রমিকরে মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে গোটা বাস টার্মিনাল এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে এবং বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে পরিমল চন্দ্র দাস ও আহম্মদ শাহারিয়ার বাবু নেতৃত্বাধীন শ্রমিকরা অপর পক্ষের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলে টার্মিনাল এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের ওপর আড়াআড়ি ভাবে বাস রেখে সড়ক অবরোধ করে।
এতে রুপাতলী ও সংলগ্ন সাগরদী এলাকায় কয়েক কিলোমিটার সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। টার্মিনাল এলাকায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলাকালে সুলতান মাহমুদ টার্মিনাল সংলগ্ন কার্যালয়ে তার লোকজন নিয়ে অবস্থান নেন। পরে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
প্রতক্ষ্যদর্শী পটুয়াখালীগামী আবদুর রশিদ ও আবদুল হক নামের দুই যাত্রী জানান, বাসস্ট্যান্ডে কথার কাটাকাটি এবং দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হতে দেখেছি এবং ওইসময় একজন রক্তাক্ত জখমও হয়। এরপরই বাস বন্ধ করে দিলে সবাই ভোগান্তিতে পড়ে যায়, অনেক যাত্রী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে বাসে উঠে আটকা পড়ে যান।
এদিকে উভয় পক্ষের শ্রমিক নেতারা দাবি করেছে, সকালের ওই ঘটনায় তাদের কমপক্ষে ৬ জন আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১ জনকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়েছে।
বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি সুলতান মাহমুদ বলেন, সকালে আমি ধর্মীয় কাজে ব্য¯ত ছিলাম। তখন শুনি বাস টার্মনিালে মারামরির ঘটনা ঘটেছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ বাস চালাতে গেলে তাকে বাধা দেয়া হয়।
এর কারণ জানতে চাইলে তর্ক বেধে যায়। একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। এতে লাইন সেক্রেটারি হান্নান মৃধার কপালে একটু আঘাত পায়। এ ঘটনায় আমাকে বিনা কারনে দোষারোপ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, মহামারি করোনার কারনে নির্বাচন না হলেও সদর আসনের সাংসদের ডিও লেটারে আমাদের কমিটি সম্প্রতি অনুমোদন পেয়েছে। আর মুলত যারা ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে নিচ্ছে তারা একটি অবৈধ কমিটির হয়ে আমাদের স্ট্যান্ড দখল নিতে চায়।
ওই কমিটির নেতা পরিমল চন্দ্র দাস ও শাহারিয়ার বাবু এখানকার কোনে বাসের শ্রমিকই নন। অথচ গঠনতন্ত্র অনুসারে শ্রমিক ছাড়া শ্রমিক ইউনয়নের কমিটি গঠন অবৈধ।
এদিকে বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের অপরাংশের সভাপতি পরিমল চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ শাহরিয়ার বাবু বলেন, রুপাতলী শ্রমিক ইউনিয়নে ২৩ বছর ধরে চাঁদাবাজি দখলদারিত্ব করে আসছিলো সুলতান মাহমুদ। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে মাননীয় মেয়র মহোদয় নতুন কমিটি গঠনকরে দিয়েছে। সেই কমিটি উৎখ্যাত করতে আজ সকালে অতর্কিতভাবে বাসস্ট্যান্ডে এসে হামলা চালায় সুলতান মাহমুদের লোকজন। এতে আমাদের লাইন সম্পাদক হান্নান মৃধা, মালিক সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি নাছির মৃধাসহ কমপক্ষে ৪ জন শ্রমিক আহত হয়।
প্রতিবাদে শ্রমিকরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে, বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। তাদের একটাই দাবি সন্ত্রাসী সুলতান মাহমুদকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
রুপাতলীস্থ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপন বলেন, দীর্ঘদিন বাসস্ট্যান্ড দখল করে রাখার পর এখন সুলতান মাহমুদ কমিটি থেকে বাদ পরায় নবগঠিত কমিটির শ্রমিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। আমাদের দাবি সুলতান মাহমুদকে গ্রেফতার করতে হবে। গ্রেফতার না করা পর্যন্ত শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। পরে পুলিশ প্রশাসনের আশ্বাসের ভিত্তিতে বেলা ২ টার পর বাস চলাচল শুরু হয়েছে। তবে আগামীকাল সকালের মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেফতার করা না হলে কঠোর কর্মসূচি পালনের হুশিয়ারী দিয়েছে শ্রমিকরা।