বরিশাল বিভাগে প্রতিনিয়ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর তা গত ২৪ ঘণ্টায় একদিনে সর্বোচ্চ ৮৭৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর আগের দিন ২৪ ঘণ্টায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন, তবে তার পূর্র্বের ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৭১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিলো।
বিভাগের সর্ববৃহৎ এবং প্রধান করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়(শেবাচিম) হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যা-সংকট। সর্বশেষ আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে মঙ্গলবার ১৩ জুলাই বিভাগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩হাজার ৫৬৩ জন। এদের মধ্যে এখন পর্যšত সুস্থ হয়েছেন ১৬ হাজার ১২৮ জন। আর গত ২৪-ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসাপাতালের করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গেলো ২৪ ঘন্টায় বিভাগের মধ্যে বরিশালে ২ জন ও ঝালকাঠিতে ২ জনসহ মোট ৪ জন করোনা রোগীর মৃত্যু শনাক্ত হয়েছে।
এ নিয়ে বরিশাল বিভাগে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩৫৬ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক জানান, আক্রাšত সংখ্যায় বরিশাল জেলায় নতুন সর্বোচ্চ ৪৯২ জন নিয়ে মোট ১০ হাজার ১০৪ জন,পটুয়াখালী জেলায় নতুন ৮১ জন নিয়ে মোট ২৯৭৩ জন, ভোলা জেলায় নতুন ৩৩ জন সহ মোট ২৩২৬ জন,পিরোজপুর জেলায় নতুন ৯২ জন নিয়ে মোট ৩২৮৯ জন, বরগুনা জেলায় নতুন ৭৪ জন নিয়ে মোট ১৯৭৭ জন এবং ঝালকাঠি জেলায় নতুন ১০৭ জন শনাক্ত নিয়ে মোট আক্রান্ত সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৯৪ জন।
বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, দক্ষিনাঞ্চলের একমাত্র করোনা ডেটিকেটেড বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালের করোনা ইউনিট এখন রোগীতে পরিপূর্ণ। ১০ বেড থেকে শুরু করে সময়ের সাথে সাথে তা ৩শ বেডে রুপাšতরীত করা হলেও, এখন কোন সিটই খালি নেই। আর জনবলসহ নানান সংকটের কারনে আর সিট বাড়ানো সম্ভব না বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
শেবাচিম পরিচালক আরো বলেন চিকিৎসক, নার্স ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী সংকটের মধ্যে ৩ শত বেডের করোনা-ইউনিট চালানোই অসম্ভব। তবু সেখানে সর্বোচ্চ মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দেয়ার চেষ্টা চলছে প্রতিনিয়ত। আর সাপোর্ট না থাকায় এ মুহুর্তে শেবাচিমের করোনা ইউনিটে বেড বাড়ানো সম্ভব নয়। তাই এখন সংকটাপন্ন রোগী ছাড়া আপেক্ষিক ভাবে ভালো অবস্থার রোগীদের শেবাচিমে ভর্তি নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ডে পরিণত করা হয়েছে। সোমবার (১২ জুলাই) থেকে ২২ বেডের করোনা ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি করা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল।
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় শুধুমাত্র বরিশাল শেবাচিম হাসাপাতালের করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে এগারজনের মৃত্যু হয়েছে।
এ নিয়ে শুধুমাত্র শেবাচিম হাসপাতালেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৩১ জন এবং আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে ৬২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা ৬২৪ জনের মধ্যে ৩৪ জনের কোভিড টেস্টের রিপোর্ট এখনো হাতে পাওয়া যায়নি।
ওই হাসপাতাল পরিচালক কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার) সকাল পর্যন্ত শেবাচিমের করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে ২৭ জন ও করোনা ওয়ার্ডে ২৬ জন ভর্তি হয়েছেন। করোনা ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে এখন ৩১১ জন রোগী চিকিৎসাধীন। যাদের মধ্যে ৯৮ জনের করোনা পজিটিভ এবং ২১৩ জন আইসোলেশনে রয়েছেন।
শেবাচিম আরটি পিসিআর ল্যাবে মোট ২০০ জন করোনা পরীক্ষা করান। এদের মধ্যে পজিটিভ শনাক্তের হার ৫৫ শতাংশ।