একের পর এক লাশ বের করে আনা হচ্ছে। বাতাসে এখন পোড়া লাশের গন্ধ। স্বজনদের আহাজারীতে কর্নগোপ এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠছে। ওই এলাকার বাতাসে এখন শুধুই পোড়া লাশের গন্ধ আর স্বজনদের হাহাকার। আরো লাশের আশঙ্কা করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
এদিকে আজ বেলা ১১টায় নিখোঁজ শ্রমিকদের দ্রুত সন্ধান চেয়ে ওই কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। এ সময় আটটি মোটরসাইকেল ও ১৫/২০ যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা হাসেম ফুড লিমিটেডের আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে সংরক্ষণাগার থেকে তিনটি শর্টগান লুট করে নিয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ শুক্রবার পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ১৯ ঘণ্টা পর কারখানার ভেতর থেকে এক এক করে ৪৯টি পোড়া মরদেহ বের করে আনা হয়েছে। মরদেহগুলো ফায়ার সার্ভিসের চারটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এর আগে, এ ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মোট মৃতের সংখ্যা ৫২ জন। এছাড়া আহত হন আরও অন্তত ৫০ জন। শুক্রবার (৯ জুলাই) দুপুর ২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান, ইতোমধ্যে ৪৯টি মরদেহ ফায়ার সার্ভিসের চারটি অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত ওই কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ডেমরা, কাঞ্চনসহ ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।অপেক্ষারত স্বজনরা জানান, সারারাত অপেক্ষা করেছি এখনো করছি জীবিত না পেলেও যেন মরদেহ পাই। এখন অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
এদিকে, অনেকেই ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে বাঁচার চেষ্টা করে গুরুত্বর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের অনেককেই স্থানীয় হাসপাতালের পাশাপাশি ঢাকা মেডিক্যালসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের নারায়ণগঞ্জ জেলার উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন জানান, আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল ভোরের দিকে, সকালে আবারো বেড়ে যায় আগুন। আমরা কাজ করছি। লাশের সংখ্যা জানানো হবে পরে।
শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কর্ণগোপ এলাকায় সেজান জুস কারখানায় প্রায় সাত হাজার শ্রমিক কাজ করেন। সাত তলা ভবনে থাকা কারখানাটির নিচ তলার একটি ফ্লোরের কার্টন থেকে হঠাৎ আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এক পর্যায়ে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কালো ধোয়ায় কারখানাটি অন্ধকার হয়ে যায়। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা ছোটাছুটি করতে শুরু করে। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। আবার কেউ কেউ ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে শুরু করেন।
আব্দুল আল আরেফিন আরো বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। পুরোটাই পুড়ে গেছে কারখানার, আগুনের সূত্রপাত নিশ্চিত নয়, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও অনেক।
আনসারদের প্রশিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ নাছিমা বেগম বলেন, ‘সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড লিমিটেডে অগ্নিকা-ের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা হাসেম ফুডের আনসার ক্যাম্পে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় শ্রমিকরা ক্যাম্পের অস্ত্র সংরক্ষণাগারের তালা ভেঙে তিনটি শর্টগান লুট করে নেয়। এ হামলায় কাউসার, বিশ্বজিত, ফারুক, মোশরাকুলসহ প্রায় পাঁচ আনসার সদস্য আহত হন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অস্ত্র লুটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘটনাস্থলে র্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও আঞ্চলিক পুলিশ ও রূপগঞ্জ থানা পুলিশ উপস্থিত হয়।’
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের পুলিশ টিয়ারশেল ও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।