করোনা চিকিৎসার ওষুধ হিসেবে নাপা এক্সটেন্ডকে ‘একমাত্র ওষুধ’ হিসেবে অপপ্রচার করছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। ফলে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাঝে ওষুধটির অপ্রতুল সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
জুনের মাঝামাঝি থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের উৎপাদিত ওষুধটি চাহিদা মতো পাওয়া না যাওয়ায় অসাধু ব্যসায়ীরা তা চড়া দামে কালোবাজারে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল ওষুধ হচ্ছে প্যারাসিটামল। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর উৎপাদিত প্যারাসিটামল ট্যাবলেটের কোনো অভাব নেই। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চাহিদা বৃদ্ধির জন্যই এমনটি করা হতে পারে।
বরিশাল নগরী ও জেলার উপজেলাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ১ জুলাই থেকে বাজারে একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না নাপা এক্সটেন্ড ট্যাবলেট ও সিরাপ। বিষয়টি নিয়ে বিপাকে রয়েছেন বিক্রেতারাও।
করোনা আক্রান্ত রোগী নুরুল ইসলামকে চিকিৎসক জ্বরের জন্য নাপা এক্সটেন্ড ট্যাবলেট খেতে বলেছিলেন। কিন্তু বরিশালের নগরীর কোথাও এই ওষুধ না পেয়ে শেষে বিকল্প কোম্পানির ওষুধ নিয়ে ঘরে ফেরেন তিনি।
নগরীর রূপাতলী এলাকার ঈশান মেডিকেল হলের স্বত্বাধিকারী শাহিনুর রহমান খান বলেন, চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে নাপা এক্সটেন্ড লিখে দেন। তাই রোগীর স্বজনরা অন্য কোনো নামের বা কোম্পানীর ওষুধ নিতে চান না। অন্য কোনো কোম্পানির ওষুধ দিলে তা নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয়।
নগরীর কাউনিয়া প্রধান সড়কের তৌহিদ ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী তৌহিদুল ইসলাম মুন্না জানান, প্রায়ই বেক্সিমকো কোম্পানী নাপা এক্সটেন্ড সরবারহ বন্ধ করে রাখে কোম্পানি। বাজার মনিটরিং বা বাজারে চাহিদা সৃষ্টির জন্য এটি কোম্পানির একটি কৌশল হতে পারে।
নগরীর নথুল্লাবাদ অদিতি মেডিকেল হলের আনোয়ার হোসেন বলেন, লকডাউন যেদিন থেকে শুরু হয়েছে সেদিন থেকে হঠাৎ করে নাপা এক্সটেন্ড বাজারেই পাওয়া যাচ্ছে না। কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলেন শিগগিরই আসবে। কিন্তু করোনার এই সময়ে মানুষের চাহিদা থাকলেও কোম্পানি থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে না।
ব্যবসায়িক স্বার্থে কৃত্রিমভাবে বাজারে এ ওষুধের সংকট তৈরি করা হচ্ছে বলে মনে করেন কয়েকটি পাইকারি ফার্মেসির মালিক। তবে প্রকাশ্যে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে চান না।
তবে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বরিশাল বিভাগীয় ওষুধ প্রশাসন তত্ত্বাবধায়ক অদিতি স্বর্ণা বলেন, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের বরিশাল ডিপো ইনচার্জের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, ২৮ এবং ২৯ জুন নাপা এক্সটেন্ড ট্যাবলেটের সংকট ছিল। ৩০ জুন থেকে তা পর্যাপ্ত পরিমানে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। নাপা এক্সটেন্ড ছাড়া প্যারাসিটামল গ্রুপের যেকোনো কোম্পানির ওষুধই এর সাথে সংশ্লিষ্ট রোগের চিকিৎসার জন যথেষ্ট।
ওষুধ প্রশাসনের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, বাজারে জ্বরের ট্যাবলেটের কোনো ঘাটতি নেই। তাছাড়া কৃত্রিম কোনো সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে কি না তা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে দেখা হচ্ছে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, করোনা চিকিৎসার একমাত্র ওষুধ ’নাপা এক্সটেন্ড’, কথাটি সত্য নয়। এই ওষুধটি প্যারাসিটামল গ্রুপের। আমাদের হাসপাতালে পর্যাপ্ত প্যারাসিটামল সরবরাহ আছে। সুতরাং উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। একটি কোম্পানির ওসুধ সরবরাহ শেষ হতে পারে, বন্ধ রাখতে পারে। সেটি কোম্পানির এখতিয়ার। কিন্তু সরকারী হাসপাতালে যথেষ্ট সরবরাহ আছে।