ঘরে ফেরার তাড়া নেই
আজ মহানগরের রাজ পথে
মধ্যদুপুরে হেঁটে চলেছি একা
আমি সদ্য সংসার ত্যাগী নগর বাউল,
আমার ঘরে ফেরার তাড়া নেই।
বিগত দিনের সম্পর্কের যবনিকায়
ছিলনা কোন করতালি বা হর্ষধ্বনি
উল্লসিত মনে ছুঁড়ে দেয়নি কেউ
বিজয় মাল্য অথবা স্বীকৃতির তাজ
ছিল শুধু অবজ্ঞা ভরা তিক্ততার অভিশাপ।
পথের ক্লান্তি পথে হারায়, আমি চলি অজানায়
কখনো থমকে দাঁড়াই ডেকে ওঠা কুহুতানে
চমকে উঠি!এতো বসন্ত নয়?
চেয়ে দেখি আষাঢ়ের ঢলে ভেসে চলেছি
অসময়ে বিচ্ছেদের স্রোতের বাঁকে বাঁকে।
অনুরাগে অনুযোগে অভিমানে বিরহে
কতটা বেহিসেবী সময় চলে গেছে আবেগের টানে
তাসেরঘর পলকা বাতাসে ভেসে গেছে ভুলের নহরে।
আমি সদ্য সংসার ত্যাগী নগর বাউল
এক তারেতে সুর বাঁধিনি, বেঁধেছিলাম হৃদয় বীণায়
ভাঙা হৃদয়ে চলার পথে বৈরী পরিবেশে
আজ তবুও কেন এ মনের গহীনে বেজে ওঠে এই সুর-
“তুই ফেলে এসেছিস কারে, মন, মন রে আমার।”
জ্বলবে মঙ্গল আলোক
এ শহরে যখন সূর্য ডুবে
অগুনতি নক্ষত্র জ্বলে উঠে
ইট পাথরের খাঁজে খাঁজে।
সুখ_দুঃখের হাজারো গল্প গাঁথা
আবেগহীন যান্ত্রিক কংক্রিটের নগরে
বিবেক বিসর্জনের ধুলি উড়ে
লুটিয়ে পড়ে পিষ্ট হয় যানের চক্র তলে।
অযুত মানুষের নিযুত মন!
গোধূলির সম্মোহনে বিলীন হয় যখন তখন।
অবয়ব গুলো বাস্তবতার যাঁতাকলে
মুখ ঢাকে অস্বচ্ছ পর্দার আড়ালে।
চির পরিচিত শহর যেন অকস্মাৎ অচেনা হয়
দিন-রাতের ক্লান্তি ভরা দূষণের নগরে।
বস্তির কর্দমাক্ত ঘিঞ্জি ঘুপচি ঘরে
কোন ভোরের মোলায়েম সূর্য
উঁকি দেয়না করুন গল্প শুনতে।
সূর্য উঠে বিত্তের প্রসস্থ জানালা,
খোলা ছাদ কিংবা বিস্তৃত আঙিনাতে।
বস্তির ঐ আস্তাকুড়ের নোংরা পুড়িয়ে
পরিশুদ্ধ করতে,
একদিন সূর্য হাসবে দারিদ্র্যের উঠোনে।
সেদিন আঁজল ভরে মুঠো মুঠো
সোনা রোদ্দুর কুড়াবে ঐ অসহায় মানুষ গুলো।
অবাঞ্ছিত শিশু গুলো পূণ্য রৌদ্রস্নাত হয়ে
দিবাকরের অগ্নি হতে মঙ্গল আলোক জ্বেলে
আবারো নতুন জীবন গল্প রচবে
অনাগত ভবিষ্যতের অপার সম্ভাবনার।
দুর্জন নিধন
হুশিয়ার সবে হুশিয়ার
এখনো বাংলার বুকে বিষাক্ত সরীসৃপ
ঘাপটি মেরে আছে সুযোগের অপেক্ষায়।
স্বাধীনতার স্বপক্ষে যদি বাতাসেও ভাসে কোন ধ্বনি
তাতেও তারা ছোবল বসাতে চায় তক্ষুনি,
ওদের রক্তের ধমনীর নহর বেয়ে দুর্জনের লালা গড়ায়,
ওরা স্বাধীকার কেড়ে নিয়ে দুঃশাসনের ত্রাস চালায়।
ঘুণেধরা অস্থিমজ্জায় বক্রতায় এঁকেবেঁকে নুয়ে
কূটকৌশলের ফন্দি আঁটে শান্তির নগরে।
তাদের অন্তঃকর্ণ মৃদু কম্পনের আলাপচারিতায়
গোপনে আড়িপাতে সর্বনাশের তরে
শান্তি ধ্বংসের পায়তারা চলে খোলসের আড়ালে,
নীলরঙা বিষে যাতনার বাঁধ ভেঙে পাহাড়ি ঢলে কুহর ডুবে
ভাসিয়ে তোলে যখন দুর্জনের অপশাসন,
তখনি সময়মতো একটি শক্ত ডান্ডার বড় বেশি প্রয়োজন।
বিলুপ্ত অধিবর্ষ
একজন স্বপ্নবাজ মানুষের তেজোদ্দীপ্ত
গত হওয়া সময় গুলো লোভাতুরের হাতে পড়ে
অধিবর্ষের দিন-পঞ্জিকায় জমা পড়েছিল।
উত্তাল আন্দোলনে রাজপথের দাবি তখন
অখণ্ড ঐক্যের বলয়ে হীরক সদৃশ সময়।
“স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক”
স্বাধীকার অর্জনের দৃঢ় সংকল্পে মাতোয়ারা হয়ে
ধমনিতে পড়েছিল স্বপ্নবাজের টান,
সটান- বুকে পিঠে লিখেছিল গণতন্ত্রের দলিল,
একজন স্বপ্নবাজ মানুষের হৃদয়ে ছিল
“আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে”
অনেকটা বছর গত হলো-
পেন্ডুলামের কাঁটায় স্থবিরতার অবসাদে জং ধরেছে
নিশ্চল কাঁটা আটকে গেছে আশাহত হয়ে।
জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক অধিবর্ষের হিসেব স্রোতের পাকে পড়ে
চারশতে অবিভাজ্য হয়ে বিলিন হয়েছে স্বপের রঙ,
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির হিসেব তাই বিকল্প ভাবে হয়েছে মীমাংসিত,
সময় গুলো ছিল উত্তাল রাজপথের দাবির।
স্লোগান মুখর দিন গুলো অপেক্ষমাণ ছিল
একজন স্বপ্নবাজ তরুনের একটি আয়েসি
ভোর দেখার অপেক্ষায় ব্যাকুল।
গারদের লৌহ দন্ডের দিনপঞ্জিকায় টালি কেটে রেখেছিল
জীবন বাজী রাখা সাহসী সময়ের হিসেব।
সেই উত্তাল সময়ের এমন অসংখ্য স্বপ্নবাজ মানুষের স্বপ্ন গুলো
চারশোতে অবিভাজ্য হয়ে অধিবর্ষের গোলকধাঁধায়
হয়েছিল চিরতরে নিগৃহীত,
উন্মুখ হয়ে সকলে অপেক্ষমাণ- মঙ্গল আলোক হাতে
কার যেন দীর্ঘ ছায়া দেখা যায়,
কেউ যেন আসছে আবার সাহসে ভর করে
অধিবর্ষের জ্যোতির্বিজ্ঞানিক হিসাব মিলাতে।
বিচ্যুত শহর
জৌলুশের শহর
বিচ্ছেদের বহর,
গৃহবন্দী মন
খোঁজে বাতায়ন।
অর্থের মোহে
ভুলে স্বজনকে,
লোভের নেশায় টাল
ভবের মোহে মাতাল।
আছে বাড়ি গাড়ি
ভালোবাসা থুড়ি,
ধারকরা লেবাস
সংস্কৃতির গলায় ফাঁস।
বিত্তের বাহন তলে
দারিদ্র্যের পেষণ চলে,
ব্যস্ত রাজপথে বারোমাস
বহুরূপী মানুষের চাষ।
মিথ্যে আশ্বাসের প্রতিজ্ঞায়
সত্য লজ্জায় মাথা নোয়ায়,
সমাজে শ্রেণিসংগ্রাম
বৈষম্যের আরেক নাম।
শহরের ফুটপাত
দারিদ্র্যের কষাঘাত,
শেষ রাতে নিরবতায়
রাতের মহাসড়ক ঝিমায়।
অপরাধের অন্যতম ঘাটি
শঠতায় ভরা নগরী
বিজ্ঞপ্তি চলে রোজ
মূল্যবোধ নিখোঁজ।
দুষ্ট চক্রের চক্রান্ত
আজ এই শৈত্যপ্রবাহের রাতে
অভুক্ত আধভেজা জরাজীর্ণ এক শ্রমিক মাতা
চিন্তাযুক্ত মনে অসহায় ঘোলা দৃষ্টিতে তাকিয়ে
ভাবছে তার শিশুদের কিভাবে বাঁচাবে
এই হিম দৈত্যের কামড় থেকে।
মাথার উপর একটুকরো পলিথিন যাদের ভরসা
তারা কেমন করে ভাবতে পারে –
নরম তুলতুলে বিছানায় দামী কম্বলের নিচে
সহসা উষ্ণ একটি শৈত্য প্রবাহের রাত
নিশ্চিন্ত ঘুমে অতিক্রান্ত করতে?
এভাবেই তাদের দূর্যোগের রাত কাটে
আবারো ভোরের আলোয় চারিপাশ স্পষ্ট হয়
শ্রমিক মাতার দূর্বল হাতের সহায়তায়
তিলে তিলে সুউচ্চ প্রাসাদ গড়ে,
তবুও ঐ জরাজীর্ণ মায়ের ঘোলাটে চোখের তারায়
চির অস্পষ্ট জীবনের অভিশাপ লেপ্টে থাকে অকাট্য ভাবে,
ঘামের ফোঁটা গুলো বঞ্চিত হয় যখন,
তখন সত্যিকারের ভোর করায়ত্ত হয়ে যায় অবলীলায়,
নব্বই আর দশ ভাগ
সম্পদ ও জনগণের হিসেব জটিল গণিতে রূপ নেয়।
সুস্থ ভাবে বাঁচার বিশুদ্ধ অক্সিজেন শুষে নিয়ে
নিচ্ছিদ্র বাক্সে বন্দী করে হঠকারিতার ছোবলে,
শ্রমিক মাতার আইনি অধিকার টুকু
এজলাসের চৌকাঠে উঠে মুখ থুবড়ে পড়ে।
তখন সেই মাতা ভীত হয়ে ভাবে তান্ডবময়
অথবা দুর্যোগ পূর্ণ সেই ভয়ংকর রাতের কথা
কষ্টের রাতগুলো গুমরে গুমরে
কাঁদে বাস্তবতার ফাঁসে আটকে।
কার্য হাসিল শেষে কিছু অস্পৃশ্য এলিট শ্রেণীর
লোকদেখানো বিনয়ী দরদীরা অর্থের পাহাড়ের চূড়ায় বসে
কপট মুখে ও আত্মসংবৃতিময় মস্তিষ্কে কুলুপ আঁটে।
পুতুল নাচের সুতোর কাঠির টানে সম্বিত ফিরে পেয়ে
জরাজীর্ণ মাতা সেই ঘোলাটে নির্জীব চোখে তাকিয়ে থাকে
অন্য এক শৈত্য প্রবাহের রাতে!
বহুযুগ ধরে এভাবেই তাদের জীবন চলছে
দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্রের চক্রান্তে।