গত বছরের ২৪ অক্টোবর সৌদি আরব থেকে ফিরে এসেছে আবিরুণ বেগমের কফিন বন্দী লাশ। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটু ভালভাবে বেঁচে থাকার আশা নিয়ে সৌদি আরবে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে গিয়েছিলেন আবিরুণ বেগম। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে কফিনবন্দী লাশ হয়ে স্বজনদের কাছে ফিরেছেন তিনি।
সৌদি আরব থেকে লাশ হয়ে ফেরা আবিরুণ বেগমকে হত্যা করা হয়েছিল তার শরীরে গরম পানি ঢেলে। শুধু তাই নয় মৃত্যুর আগে লাগাতার তাকে রড দিয়ে পেটানোর তথ্য উঠে এসেছে সৌদি আরবের ময়না তদন্তের রিপোর্টে উঠে এসেছে। এ নিয়ে মামলার প্রস্তুতি চললেও দেশে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তার পরিবারের স্বজনেরা।
আবিরুণের লাশ দেশে আসার পর আট মাস পার হয়েছে। সৌদি আরবে মামলা প্রস্তুত থাকলেও নানা জটিলতায় এখনো পাওয়ার অব এটর্নির কাগজপত্র পাঠাতে পারেনি পরিবার।
আবিরুণের হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত করেছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ড. নমিতা হালদার বলেন, বেগম ‘আবিরুণ আরবি ভাষা জানতো না, এ কারণেই বাড়িওয়ালা এবং বাড়িওয়ালী তাকে রড দিয়ে পিটাতো। তাকে প্রথমে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে বাথরুমের সামনে ফেলে রাখে। যখন ওর জ্ঞান ফিরে আসে না তখন তাকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে গরম পানি দিয়ে ট্রিট করার চেষ্টা করে। তাতে তাঁর সমস্ত শরীর পুড়ে ফোসকা পড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, যখন সে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে ছিলো তখন আবার তাঁকে এনে বাথরুমের সামনে ফেলে রাখে। এইভাবে ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, সে দীর্ঘ সময় মৃত্যুর যন্ত্রণায় কাতর ছিলো, তবুও তাকে হসপিটালে নেয়া হয়নি।
সৌদিতে এ নিয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে ঠিকই কিন্তু খোদ দেশেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন আবিরুণের বৃদ্ধ বাবা মা। খুলনার পাইকগাছা থানার মামলায় দালাল রবিউল এবং মন্ত্রণালয়ের এক কর্মচারী নিপুলচন্দ্রসহ চারজন এখন এখন জামিনে। পরিবারের অভিযোগ,সহায়তা তো দূরের কথা উল্টো থানা থেকে হুমকি দেয়া হচ্ছে তাঁর পরিবারকে।
নাম প্রকাশ না করে আবিরুনের স্বজনরা বলেন, আমরা এমন মামলায় আগে পড়িনি তাই অনেক কিছু বুঝতাম না। পুলিশ ন্যায়বিচার পাইয়ে দেয়ার বদলে আমাদের মামলা প্রত্যাহারের হুমকি দিচ্ছে। তারা দালাল ও মামলার আসামীদের রক্ষা করার চেষ্টা করছে।
এত কিছুর পরও আশার কথা হলো, সৌদি সরকার বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। আবিরুণকে হত্যার দায়ে নিয়োগদাতা দম্পতিকে আটক করেছে সৌদি পুলিশ। তাছাড়া সৌদি আগে বিষয়গুলোকে আমলে না নিলেও ইদানীংকালে তারা বিষয়গুলো বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ জানান, পাওয়ার অব এটর্নির কাগজপত্র পৌঁছালেই মামলা চালানোর বিষয়ে সব কিছু করবে দূতাবাসের শ্রম উইং। আবিরুণের মতো আর কোন নারীর যেন বিদেশে করুণ পরিণতি না হয় সেজন্য সজাগ রয়েছে মন্ত্রণালয় এমনটা জানিয়েছেন মন্ত্রী।