খিটখিটে মেজাজ পালটে ফেলতে হবে
অনেক সময় আমরা নিজেরাই কিন্তু নিজেদের খিটখিটে ব্যবহার অনুভব করতে পারি। একটু ভেবে দেখুন খিটখিটে মানুষকে কিন্তু কেউ পছন্দ করেন না। কিন্তু একজন মানুষ তো এমনি এমনি খিটখিটে হয় না, তার পেছনে নিশ্চয়ই কিছু কারণ আছে। কেউ দীর্ঘদিন অসুখে ভুগলে খিটখিটে হয়ে যান। পারিবারিক বা ব্যক্তিগত অনেক অনেক সমস্যা থেকেও কিন্তু মানুষ মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। কেউ তখন সারাক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচি করেন, কেউ ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বলতেই থাকেন, এক কথা বারবার বলেন, সব কিছুতেই খুঁত বের করেন, একেই বলে খিটখিটে। অনেকেই কথায় কথায় বলেন ‘ লোকটি খুব খিটখিটে’।
আপনি নিজেও কি খিটখিটে? কিম্বা আপনি কি আপনার এই খিটখিটে মেজাজ পালটে ফেলতে চান? একটু চেষ্টা করলে নিমেষেই পালটে ফেলতে পারবেন আপনার এই নেগেটিভ স্বভাবটিকে।
মাঝে মাঝেই আমরা এমনটা শুনেই থাকি মেজাজ অর্থাৎ মুড ঠিক নেই। পড়াশোনা, অফিসের ব্যস্ততা কিংবা পারিবারিক জীবন — সবকিছুতেই যেন এক ধরনের বিরক্তি, খিটখিটে মেজাজ। ছোট, বড়, এমনকি মাঝবয়সী মানুষের মধ্যেও এ সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি সাত কিংবা আট বছরের একটি বাচ্চারও হতে পারে এ সমস্যা। কোনো কিছু ভাল না লাগা বা বিরক্তি থেকে এই খিটখিটে ভাবটা প্রকাশ পায়। কিন্তু এই ভালো না লাগাটা কেন? সবসময় সবকিছুতে বিরক্তই বা কেন এমন ?
আপনি হয়তো বন্ধুদের সঙ্গে আছেন। বন্ধুদের মধ্য থেকে একজন আপনাকে নিয়ে মজার কিছু বলছেন, সেখানেও মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল আপনার। অন্যরা যেখানে ঠাট্টা করছেন, আপনি সেখানে সহজেই রেগে উঠছেন। কেন এমনটা হয়?
এক – আসলে অতিরিক্ত কাজের চাপ থেকে এমনটা হতে পারে।
দুই – একঘেয়েমি বোধ থেকে কেউ কেউ এমন আচরণ করেন।
তিন – একাকিত্ব থেকে।
চার – প্রতিকূল পরিবেশ এর জন্যে দায়ী।
পাঁচ – ঘরে থাকতে থাকতে।
ছয় – বেকার সমস্যা থেকে হতে পারে।
এমন অনেক কারণে মানুষের মধ্যে হতাশা থেকেই একজন ভাল মানুষ হঠাৎ খিটখিটে হয়ে ওঠেন। এমনকি এর ফলে এই খিটখিটে ব্যবহার যে কাউকেই সমস্যার দিকে ঠেলে দেয়। আর এ সমস্যা বেশি দেখা দেয় কৈশোর ও মধ্যবয়সে। কিশোর-কিশোরীর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা থেকে এ সমস্যা দেখা দেয়। হয়তো পরিবারের নানা বিধিনিষেধে তারা হাঁপিয়ে ওঠে। আর বাকিদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা দেখা দেয় অতিরিক্ত কর্মব্যস্ততা কিংবা সব সময় সফল হতেই হবে, এমন মনোভাব পোষণ করলে। যারা খুব ছোট পরিবারে বড় হয়ে ওঠেন, তাঁদের মধ্যেও অল্পতেই বিরক্ত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। যেহেতু মানুষটি তার সমবয়সী কারও সঙ্গে খোলাখুলি মেলামেশা করতে বা কথা বলতে পারছেন না, তাই তার মধ্যে একাকিত্ব দেখা দিতে পারে। ফলে একটা সময় সবকিছুর প্রতি তার একটা অনীহা কাজ করে। অল্পতেই তিনি হয়ে উঠবেন বিরক্ত।
শিশুদের ক্ষেত্রেও অনেকটা তাই। স্কুল বা কোচিংয়ের বিভিন্ন চাপ, পরিবারের বিভিন্ন আদেশ তাদের মধ্যে অনীহা তৈরি করে। আর যেহেতু শহরে এরা বেড়ে ওঠে একাকিত্বের সঙ্গে, তাই অনেক শিশুও অল্পতেই খিটখিটে মেজাজ করে থাকে। এই অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় কিন্তু আমাদের নিজেদের হাতেই। যেমন –
(১ ) যে কাজটি করতে ভালো লাগছে না, আপাতত সেটা না করাই ভাল। মন ভালো থাকলে কাজটি এমনিতেই ভালো হবে।
(২ ) পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রাগ না করে তাদের বুঝিয়ে বলুন।
(৩ ) বন্ধুমহলেও রাগ না করে তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করলে ভাল হয়, হয়তো আপনার এমন আচরণে বন্ধুরাও অনেকটা দূরে সরে গেছেন। সেই দূরত্বটা নিজে থেকেই কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন।
( ৪ ) ভাল করে স্নান করতে হবে, পরিস্কার ধবধবে জামাকাপড় পরলে মন এমনিই ভাল হয়ে উঠবে।
(৫ ) সঠিক সময়ে খাবার এবং ঘুমের অভ্যাস করতে হবে।
ধীরে ধীরে চেষ্টা করলে আপনি নিশ্চয়ই পারবেন এই খিটখিটে মেজাজকে পরিবর্তন করতে। ভেবে দেখুন তো সেই দিনটি সবার কাছে আপনি কতোটা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবেন। তাই দেরি না করে আজ থেকেই চেষ্টা করুন নিজেকে পালটে ফেলতে।
(চলবে)