কবি সুব্রত রুদ্রের ছ’টি কবিতা

সুব্রত রুদ্র
সুব্রত রুদ্র
3 মিনিটে পড়ুন

সুদর্শনের শরীর

অমাবস্যার রাতে শাদা থান প’রে চারু মজুমদার
ধানখেতের আল ধরে মার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন
তিনি কেবলই যাচ্ছেন আর ফোঁটা ফোঁটা
রক্ত পড়ছে

মা তাকিয়ে আছেন দরজার দিকে
পৃথিবী কী যেন বোঝাচ্ছে। তুমি শুনতে পাও?
ফুল ঝ’রে পড়ার অনেক কথা
পৃথিবী একা কতক্ষণ জেগে থাকবে?

তুমি পৃথিবীর কাটা ঘাস নও,
তুমি পুরনো কাস্তে নও,
তুমি পৃথিবীর খুলে বলবার সময়, তুমি তৈরি,
তুমি মুহূর্ত

তুমি ভারতবর্ষ নও, ভারতবর্ষের জেল একটা
ছোট্ট খাঁচা পাঁচ ফুট চওড়া কাগজ
তুমি ফুলের গায়ে মাখা রক্ত
হাওয়া দিচ্ছে, মনে থাকে যেন তুমি সুদর্শনের শরীর।

- বিজ্ঞাপন -

স্বপ্নের ভাষা

কে কাকে অবজ্ঞা করলো?
পাখির চোখ ঝরঝরিয়ে কাঁদছে

আকাশে স্বপ্নের সঙ্গে কথা বলার ভাষা তৈরি
আর দুঃখ করতে যাবো কেন?

ছায়া কোথাও বাড়ছে, কোথাও কমছে
গঙ্গা কেবলই সমতলে নামছে

পিঁপড়েকে কেউ ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়নি
হাত ধ’রে তুলছে
তারা এখন নিজেদের পরিবার গড়বে

পৃথিবীতে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে
সব সফলতা।

- বিজ্ঞাপন -

আর, আমার চোখে ঘুম নেই।

প্রণাম

পা দুখানি বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে ভাবি
আরো কারা বাকি প’ড়ে?
আরো কারা চেনাজানা ছিল?
হাত শূন্যে থেমে গেল কেন

প্রণাম আমার, ছাত্রজীবন শেষ হ’য়ে আসে
প্রণাম আমার, আগামী সোমবার মনুমেন্টের পাদদেশ

- বিজ্ঞাপন -

প্রণাম, প্রিয় মাস্টারমশাই
আপনার বাতাস যেন সারাজীবন আমার মুখমণ্ডল
ছেয়ে থাকে।

মাস্টারমশাই, প্রণামের ঘরবাড়ি তৈরি করবো আমি

আমাদের সময়

আমাদের সময়েই বাবরি মসজিদে তালা লাগানো হয়
আমাদের সময়েই বাবরি মসজিদে নামাজ পড়ার
নিষেধজারি হয়
আমাদের সময়েই বাবরি মসজিদের মধ্যে রামমূর্তি
রাখা হয়
আমাদের সময়েই বাবরি মসজিদের তালা খোলা হয়
আমাদের সময়েই শিলান্যাস হয়
আমাদের সময়েই
বাবরি মসজিদ ধূলিস্যাৎ ক’রে সেখানে
মন্দির হয়?

থানায় থানায় নতুন মন্দির গজিয়েছে?
থানার মধ্যে মসজিদ-গুরুদোয়ার?
জাহান্নামে মানুষ চালান বন্ধ করা গেল না আজো?

আমাদের সময়
টুকরো টুকরো দেশ, আর যত অর্থহীন
কথা বলি
সত্তরের কবি? আমি?
এসব থেকে বাঁচবে কী ক’রে কবিতা?

কবিতা আমার অপমান-অঙ্গ হয়ে বেঁচে থাকবে?

ঘাস

কুবাক্য বলতে শিখে ঘাসকেই প্রথম শুনিয়েছিলাম
আনমনা হ’য়ে তাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে কষ্ট দিয়েছি কত
সবে খেতে বসেছিল ঘাসেরা কখন তাদের
খাবারের ওপর হিসি ক’রে ফেলেছি
কাটলেও কী পোড়ালেও কী
ধৈর্য খোয়াতে দেখলাম না কখনো
সবার কিছু না কিছু খুঁত আছে সে কেন এমন নিখুঁত
কেন এমন মৌনী ভিক্ষুক

যাবার আগে আমার পায়ের যত কাদা
তারই গায়ে মুছে দিলাম।

রজনীগন্ধা

মায়া ও মৃত্যুর মধ্যে এতো ভালোবাসা?
রজনীগন্ধা ফুটেছে।
আমি দেখছি তাকে
মানুষের চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুতে কাঁদতে
প্রত্যেকটা রজনীগন্ধা কাঁপুনি ছড়ায়, বাজার থেকে
আমি নিজেই ওদের ডেকে নিয়ে আসি
ওদের গায়ে ভুরভুর করে মানুষের মৃত্যুর গন্ধ।

অনেক অনেক বছর
একদিন খুব ভোরবেলা হঠাৎ চলে যাবো।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
কবি সুব্রত রুদ্রের জন্ম ১৯ আগস্ট ১৯৪৭, কলকাতায়। এই কবি সর্বক্ষণের জন্য সাহিত্যমনস্ক, সাহিত্যের জন্যই ইনি অন্য কোনো জীবিকার সন্ধানও করেননি। প্রধানত কবি। কবিতা প্রবন্ধ অনুবাদ আর সম্পাদিত বই, সব মিলিয়ে বইয়ের সংখ্যা শতাধিক। সাহিত্য অকাদেমির 'রাইটারস ইন রেসিডেন্সি'র সম্পূর্ণ আর্থিক সহায়তায় তাঁর "কবিতাসংগ্রহ" প্রকাশ পেয়েছে ২০১৮ সালে। ভূমিকা লিখেছিলেন শঙ্খ ঘোষ। অতি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে সিগনেট প্রেস থেকে শেষ ক-বছরের ৭১টি কবিতার সংকলন-গ্রন্থ 'বন্ধনরজ্জুটির কাছে চিরঋণী'।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!