সুদর্শনের শরীর
অমাবস্যার রাতে শাদা থান প’রে চারু মজুমদার
ধানখেতের আল ধরে মার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন
তিনি কেবলই যাচ্ছেন আর ফোঁটা ফোঁটা
রক্ত পড়ছে
মা তাকিয়ে আছেন দরজার দিকে
পৃথিবী কী যেন বোঝাচ্ছে। তুমি শুনতে পাও?
ফুল ঝ’রে পড়ার অনেক কথা
পৃথিবী একা কতক্ষণ জেগে থাকবে?
তুমি পৃথিবীর কাটা ঘাস নও,
তুমি পুরনো কাস্তে নও,
তুমি পৃথিবীর খুলে বলবার সময়, তুমি তৈরি,
তুমি মুহূর্ত
তুমি ভারতবর্ষ নও, ভারতবর্ষের জেল একটা
ছোট্ট খাঁচা পাঁচ ফুট চওড়া কাগজ
তুমি ফুলের গায়ে মাখা রক্ত
হাওয়া দিচ্ছে, মনে থাকে যেন তুমি সুদর্শনের শরীর।
স্বপ্নের ভাষা
কে কাকে অবজ্ঞা করলো?
পাখির চোখ ঝরঝরিয়ে কাঁদছে
আকাশে স্বপ্নের সঙ্গে কথা বলার ভাষা তৈরি
আর দুঃখ করতে যাবো কেন?
ছায়া কোথাও বাড়ছে, কোথাও কমছে
গঙ্গা কেবলই সমতলে নামছে
পিঁপড়েকে কেউ ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়নি
হাত ধ’রে তুলছে
তারা এখন নিজেদের পরিবার গড়বে
পৃথিবীতে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে
সব সফলতা।
আর, আমার চোখে ঘুম নেই।
প্রণাম
পা দুখানি বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে ভাবি
আরো কারা বাকি প’ড়ে?
আরো কারা চেনাজানা ছিল?
হাত শূন্যে থেমে গেল কেন
প্রণাম আমার, ছাত্রজীবন শেষ হ’য়ে আসে
প্রণাম আমার, আগামী সোমবার মনুমেন্টের পাদদেশ
প্রণাম, প্রিয় মাস্টারমশাই
আপনার বাতাস যেন সারাজীবন আমার মুখমণ্ডল
ছেয়ে থাকে।
মাস্টারমশাই, প্রণামের ঘরবাড়ি তৈরি করবো আমি
আমাদের সময়
আমাদের সময়েই বাবরি মসজিদে তালা লাগানো হয়
আমাদের সময়েই বাবরি মসজিদে নামাজ পড়ার
নিষেধজারি হয়
আমাদের সময়েই বাবরি মসজিদের মধ্যে রামমূর্তি
রাখা হয়
আমাদের সময়েই বাবরি মসজিদের তালা খোলা হয়
আমাদের সময়েই শিলান্যাস হয়
আমাদের সময়েই
বাবরি মসজিদ ধূলিস্যাৎ ক’রে সেখানে
মন্দির হয়?
থানায় থানায় নতুন মন্দির গজিয়েছে?
থানার মধ্যে মসজিদ-গুরুদোয়ার?
জাহান্নামে মানুষ চালান বন্ধ করা গেল না আজো?
আমাদের সময়
টুকরো টুকরো দেশ, আর যত অর্থহীন
কথা বলি
সত্তরের কবি? আমি?
এসব থেকে বাঁচবে কী ক’রে কবিতা?
কবিতা আমার অপমান-অঙ্গ হয়ে বেঁচে থাকবে?
ঘাস
কুবাক্য বলতে শিখে ঘাসকেই প্রথম শুনিয়েছিলাম
আনমনা হ’য়ে তাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে কষ্ট দিয়েছি কত
সবে খেতে বসেছিল ঘাসেরা কখন তাদের
খাবারের ওপর হিসি ক’রে ফেলেছি
কাটলেও কী পোড়ালেও কী
ধৈর্য খোয়াতে দেখলাম না কখনো
সবার কিছু না কিছু খুঁত আছে সে কেন এমন নিখুঁত
কেন এমন মৌনী ভিক্ষুক
যাবার আগে আমার পায়ের যত কাদা
তারই গায়ে মুছে দিলাম।
রজনীগন্ধা
মায়া ও মৃত্যুর মধ্যে এতো ভালোবাসা?
রজনীগন্ধা ফুটেছে।
আমি দেখছি তাকে
মানুষের চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুতে কাঁদতে
প্রত্যেকটা রজনীগন্ধা কাঁপুনি ছড়ায়, বাজার থেকে
আমি নিজেই ওদের ডেকে নিয়ে আসি
ওদের গায়ে ভুরভুর করে মানুষের মৃত্যুর গন্ধ।
অনেক অনেক বছর
একদিন খুব ভোরবেলা হঠাৎ চলে যাবো।