রাজধানীর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের দেহে ৬৮ শতাংশই ভারতীয় ধরন ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’-এ আক্রান্ত। এছাড়াও ২২ শতাংশ রোগীর দেহে মিলেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরন বা ‘বিটা ভ্যারিয়েন্ট’। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
সম্প্রতি তাদের ওই গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীর করোনা রোগীদের দুই-তৃতীয়াংশই এই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) রাতে সংস্থাটির মিডিয়া ম্যানেজার তারিফুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে সংগ্রহ করা ৬০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছে আইসিডিডিআর,বি। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশে ভারতীয় ধরন বা ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’ পাওয়া গেছে। ২২ শতাংশ নমুনায় পাওয়া গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরন বা ‘বিটা ভ্যারিয়েন্ট’। বাকি নমুনাগুলো অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের।
গত ৮ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছিল, ভারত থেকে আসা তিন বাংলাদেশির দেহে করোনা ভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের কথা। ক্রমে বাড়ছে এর সংক্রমণ। পূর্বের আক্রান্তদের ইতিহাস পর্যালোচনা করে আইইডিসিআর আরও জানিয়েছিল, ইতোমধ্যে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের ‘ডেল্টা’ ধরনটির সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটেছে, যা উদ্বেগজনক। গত দেড় বছর ধরে বিশ্বজুড়ে ক্রমাগত করোনা ভাইরাস রূপ বদলাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকটি ‘মিউট্যান্ট’ বা পরিবর্তিত ধরন পাওয়া গেছে, যেগুলো অনেক বেশি সংক্রামক। এর মধ্যে গত বছরের শেষ দিকে ভারতে একটি নতুন ধরন শনাক্ত হয়, যাকে এ বছর দেশটিতে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে রেকর্ড সংক্রমণ ও মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করা ভাইরাসের এ ধরনটির আনুষ্ঠানিক নাম বি.১.৬১৭। তবে আলোচনার সুবিধার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর নামকরণ করেছে ‘ডেল্টা’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে এ ধরনটিকে ‘ভ্যারিয়েন্টস অব কনসার্ন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত বিশ্বে কোভিড-১৯ এর যতগুলো ধরন চিহ্নিত হয়েছে, তার মধ্যে ভারতীয় ধরনটি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বলে প্রমাণ পেয়েছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষকরা। ভারতীয় এ ধরনকে ‘উদ্বেগজনক ধরন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। করোনার ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের কারণেই ভারতে দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বহুগুণে বেড়েছে।
উল্লখ্য, দেশে গত ৮ মে প্রথম ভারতীয় ধরন বা ‘ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট’ শনাক্ত হয়। গত মাসের মাঝামাঝিতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর ভারতের সীমান্তবর্তী ১৫টি জেলায় রোগী দ্রুত বাড়তে শুরু করে। বিগত কিছুদিন ধরে সারা দেশেই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এতদিন সীমান্ত অঞ্চলের তুলনায় রাজধানী ঢাকায় সংক্রমণ পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গত মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণের ঘটনাও ছিল নগণ্য। কিন্তু আইসিডিডিআর,বির আলোচিত গবেষণা সংকেত দিচ্ছে, করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।