দেশের রাজবাড়ি জেলার সর্ববৃহৎ দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে রেহানা বেগম (৩৫) নামের এক যৌনকর্মীকে পাশবিক ও বর্বরোচিত নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আহত যৌনকর্মীর গোপনাঙ্গে মরিচের গুঁড়ো দিয়ে নির্যাতন করা হয়। বর্তমানে তিনি গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গত সোমবার (১৪ জুন) রাতে এ বর্বরোচিত নির্যাতনের ঘটনায় যৌনকর্মীদের সংগঠন ‘অসহায় নারী ঐক্য কল্যাণ সমিতির’ সভানেত্রী ঝুমুর বেগম, ছলে বাড়িওয়ালী, লিলি বাড়িওয়ালী, আলেয়া বাড়িওয়ালী, দুলালী ও পারভিনসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন রেহেনা বেগম।
মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেহেনা বেগম সাংবাদিকদের জানান, রোববার রাত ১১টার দিকে তাকে তার ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায় ঝুমুর বেগমের লোকজন। এরপরে তারা তাকে অসহায় নারী ঐক্য কল্যাণ সমিতির কক্ষে আটকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে। এতে তিনি রক্তাক্ত হয়ে গেলে জখমের স্থানসহ তার গোপনাঙ্গে শুকনো মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, আমার ওপর নির্মম নির্যাতন ও আর্ত-চিৎকারের পুরো দৃশ্য ঝুমুর তার মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে রাখে। বেশ কয়েক ঘণ্টা পর তারা আমাকে ছেড়ে দিয়ে একপ্রকার গৃহবন্দী করে রাখে। সোমবার প্রায় সারাদিন ঘরে বন্দী থেকে সন্ধ্যার পর সুযোগ বুঝে পালিয়ে থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দেই। পরে মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হই।
তিনি আরও জানান,, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঝুমুরের স্বামী ইউপি সদস্য জলিল ফকিরের পক্ষে নির্বাচন না করা, তার স্বামীর সঙ্গে আমার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্দেহ করা এবং ঝুমুরকে আমি তাবিজ-কবজ করেছি বলে সন্দেহ করে তারা আমাকে এভাবে নির্যাতন করে। শুধু তাই নয়, এর আগে ঝুমুর আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে এবং আমার সব ভাড়াটিয়া মেয়েকে হাতিয়ে নিয়ে আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে।
হাসপাতালের ইনডোরে কর্তব্যরত সিনিয়র নার্স মুক্তা সরকার বলেন, রেহেনা বেগমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে। চিকিৎসকের নির্দেশনা মতো তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
তবে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে ঝুমুর বেগম জানিয়েছেন, রেহেনা একইসঙ্গে ঢাকার সাভারের এক লোক ও স্থানীয় আরেকজন লোকের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে। এ নিয়ে স্থানীয় লোকের সঙ্গে প্রায়ই তার ঝামেলা হয়। সোমবার রাতেও তাদের মধ্যে মারামারি হয়। এতে সে কিছুটা আহত হয়ে থাকতে পারে।
ঝুমুর বেগম আরও জানান, এছাড়া রেহেনা পল্লীর একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার অপরাধের জন্য সে জেল খেটেছে। তার বাড়ির ভাড়াটিয়াদের ওপর সে অনেক জুলুম করে বলে তারা নিজেরাই তার বাড়ি ছেড়েছে। সে পরিকল্পিতভাবে অন্য কারও ইন্ধনে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, রেহেনা বেগমের দেয়া লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।