গতকাল রোববার (১৩ জুন) রাতে ঢাকার ধামরাইয়ে স্বামীর সামনেই শরীরে কেরোসিন ঢেলে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছে। আজ সোমবার দুপুরে তার অগ্নিদগ্ধ লাশ হাসপাতালে রেখেই সমঝোতা বৈঠকে বসেছে শ্বশুর ও পিতার বাড়ির লোকজন। এ হৃদয় বিদারক ঘটনায় এলাকায় বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বছর খানেক পূর্বে ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়নের জোয়ার আমতা গ্রামের মো. আব্দুল হানিফ আলীর ছেলে মো. আলমগীর হোসেনের সঙ্গে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানার দরগ্রাম ইউনিয়ন সদরের মো. লোকমান হোসেনের মেয়ে আলিফা আক্তারের (১৬) বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের দাম্পত্য জীবন বেশ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যেই কাটছিল। সম্প্রতি ঐ গৃহবধূর স্বামী আলমগীর হোসেন বিদেশ যাওয়ার জন্য মনস্থির করেছে। এতে বাঁধ সাধেন ঐ গৃহবধূ নিজেই। স্বামীর বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে তিনি রাজী ছিলেন না।
গতকাল রোববার দিবাগত রাত ১০টার দিকে বিদেশ যাওয়ার বিষয় নিয়ে নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ওই গৃহবধূ স্বামীর সামনেই শরীরে কেরোসিন ঢেলে দেশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তে আগুন তার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
স্বামীর ডাক চিৎকারে বাড়ি ও আশপাশের লোকজন দৌড়ে এসে পানি এবং বালু ছিটিয়ে ও কাঁথা চাপা দিয়ে আগুন নেভায়। ততক্ষণে ওই গৃহবধূর শরীরের ৭৫ ভাগই ঝলসে গেছে। তাকে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সোমবার সকাল ৬টার দিকে ওই গৃহবধূ মারা যান।
স্বামী ওই লাশ রিলিজের চেষ্টা করলে ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশ তাতে বাঁধা দেয়। ওই গৃহবধূর পিতা- মাতা ব্যতীত এ লাশ রিলিজ করা যাবে না বলে পুলিশ জানালে স্বামী আলমগীর হোসেন দ্রুত এলাকায় এসে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে শ্বশুরালয় যায়।
তারা লাশ আনতে হাসপাতালে যেতে রাজি না হয়ে জানায়, আগে সমঝোতা হোক তারপর লাশ আনা হবে। এরপর এ নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে বসা হয় ওই গৃহবধূর পিত্রালয়ে।
এদিকে স্বামীর পরিবারের কাছে ওই গৃহবধূর পিতার পরিবার ৫০ লাখ টাকা টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে বলে গোপন এক সূত্রে জানা গেছে।
গৃহবধূর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের সময় উপঢৌকনসহ অনেক হিসাব নিকাশ রয়েছে ওই পরিবারের সঙ্গে। তা পুরোপুরি পরিশোধ করা না হলে আমরা তাদেরকে কোনোক্রমেই ক্ষমা করবো না।
গৃহবধূর স্বামী আলমগীর হোসেন জানান, আমার স্ত্রী মরেও গেছে, আবার আমাকে মেরেও গেছে। এখন আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও সমঝোতা করতে মোটা অংকের টাকা দাবি করছে।
ওই গৃহবধূর পিতা মো. লোকমান হোসেন বলেন, আমার মেয়ে এমনি এমনিই শরীরে আগুন ধরিয়ে মারা যায়নি। নিশ্চয়ই এর অন্তর্নিহিত কোনো না কোনো কারণ রয়েছে। কাজেই ভেবে চিন্তেই কাজ করতে হবে।