১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী আল-বদর, আল-শামস বাহিনী বাঙালি জাতির মেধাশূন্য করতে পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের স্মরণে প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়।
বুদ্ধিজীবী হত্যার পটভূমি:
মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান টার্গেটে পরিণত হন। ২৫ মার্চ রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা অধ্যাপকসহ শতাধিক বুদ্ধিজীবী প্রাণ হারান। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে ধারাবাহিকভাবে এ হত্যাকাণ্ড অব্যাহত ছিল। বিজয়ের মাত্র এক দিন আগে, ১৪ ডিসেম্বর, পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর আল-বদর বাহিনী পরিকল্পিতভাবে ব্যাপকসংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে।
নির্দিষ্ট সংখ্যা ও তালিকা:
বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ’ (১৯৯৪) অনুযায়ী, ২৩২ জন বুদ্ধিজীবী নিহত হয়েছেন। তবে তালিকায় অসম্পূর্ণতার কথাও একই গ্রন্থে স্বীকার করা হয়। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের ১৮, মতান্তরে ২৯ তারিখে বেসরকারিভাবে গঠিত বুদ্ধিজীবী নিধন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। পরবর্তীতে ‘বুদ্ধিজীবী তদন্ত কমিটি’ গঠিত হয়, যার প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাও ফরমান আলী এদেশের ২০ হাজার বুদ্ধিজীবীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।
বুদ্ধিজীবী হত্যার উদ্দেশ্য:
পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে নবগঠিত বাংলাদেশকে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে দুর্বল এবং পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল বাঙালি জাতির জাগরণে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তিদের নির্মূল করা, যাতে ভবিষ্যতে দেশটি নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে।
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ:
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়েছে। এটি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রতীক। প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর এখানে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করা হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়। তাদের এই আত্মত্যাগ আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাদের স্মরণে আমাদের উচিত দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হওয়া, যাতে তাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবে রূপায়িত হয়।