আব্দুল কাদের মোল্লা (১৪ আগস্ট ১৯৪৮ – ১২ ডিসেম্বর ২০১৩) ছিলেন বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন।
বিচার প্রক্রিয়া:
২০১০ সালে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু হয়। ২০১২ সালের মে মাসে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে তার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হয়। অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা, ধর্ষণ এবং ঢাকার মিরপুর এলাকায় গণহত্যা। বিশেষ করে, তার বিরুদ্ধে ৩৪৪ জন নিরীহ মানুষকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। এই রায়ের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় ওঠে, বিশেষ করে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন উল্লেখযোগ্য। তারা কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানায়।
এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী আনে, যা রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ সৃষ্টি করে। রাষ্ট্রপক্ষ এই সুযোগে আপিল করে এবং ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করে।
বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া:
কাদের মোল্লার বিচার ও মৃত্যুদণ্ড বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও বিতর্কের সৃষ্টি করে। অনেকের মতে, এই বিচার প্রক্রিয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল এবং এতে ন্যায়বিচারের অভাব ছিল। জামায়াতে ইসলামী ও তার সমর্থকরা কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ হিসেবে অভিহিত করে এবং তার মৃত্যুদণ্ডকে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করে।
অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারীরা এই রায়কে ন্যায়বিচারের বিজয় হিসেবে দেখেছেন। তাদের মতে, কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত করেছে এবং যুদ্ধাপরাধীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা প্রদান করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড আন্তর্জাতিক মহলেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও দেশ এই রায়ের সমালোচনা করে এবং বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তারা দাবি করে যে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়নি এবং মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা উচিত ছিল না।
আব্দুল কাদের মোল্লার বিচার বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিতর্কিত অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। এই বিচার প্রক্রিয়া দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। এটি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক পরিবেশের জটিলতাকে প্রতিফলিত করে, যা ভবিষ্যতে আরও গবেষণা ও পর্যালোচনার দাবি রাখে।