শীর্ষ ১০ বিখ্যাত নারী: নারীদের ভূমিকা মানবসভ্যতার ইতিহাসে চিরকালীন। রাজনৈতিক, সামাজিক, বৈজ্ঞানিক কিংবা সাংস্কৃতিক—সব ক্ষেত্রেই তাঁদের কীর্তি ও অবদান অবিস্মরণীয়। বিভিন্ন যুগে ও ক্ষেত্রে বিশ্বকে পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন এমন ১০ জন নারীর একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা এখানে উপস্থাপন করা হলো।
১. ক্লিওপেট্রা (Cleopatra)
সময়কাল: খ্রিস্টপূর্ব ৬৯–৩০
কেন গুরুত্বপূর্ণ:
- তিনি প্রাচীন মিশরের শেষ সক্রিয় ফারাও ছিলেন।
- কৌশলী রাজনীতি ও কূটনৈতিক দক্ষতার মাধ্যমে রোমান সাম্রাজ্যের প্রভাব মোকাবিলা করেছিলেন।
- তাঁর ব্যক্তিত্ব, প্রেমকাহিনি ও শাসনব্যবস্থা ইতিহাসে রোমান ও মিশরীয় সংস্কৃতির সংযোগ স্থাপনে প্রভাব ফেলেছিল।
২. জোয়ান অব আর্ক (Joan of Arc)
সময়কাল: ১৪১২–১৪৩১
কেন গুরুত্বপূর্ণ:
- শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধের (Hundred Years’ War) সময় ফ্রান্সের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
- কৈশোর বয়সেই ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ফরাসি ভূমিকে রক্ষা করেন।
- পরবর্তীতে ইংরেজদের হাতে ধরা পড়ে মৃত্যুদণ্ড পান, তবে তিনি ফ্রান্সে জাতীয় বীর ও রোমান ক্যাথলিক গির্জার সন্ত (Saint) হিসেবে পূজনীয়।
৩. রানী এলিজাবেথ প্রথম (Queen Elizabeth I)
সময়কাল: ১৫৩৩–১৬০৩
কেন গুরুত্বপূর্ণ:
- টিউডর রাজবংশের এই ইংরেজ রানি “এলিজাবেথীয় যুগ” নামে পরিচিত স্বর্ণযুগের সূচনা করেন।
- দেশের অর্থনীতি, সাহিত্য এবং সমুদ্রবাণিজ্যে ব্যাপক উন্নতি ঘটান।
- উইলিয়াম শেকসপিয়রসহ অনেক সাহিত্যিক ও নাট্যকার এই সময়ে বিশ্ব সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেন।
৪. হ্যারিয়েট টাবম্যান (Harriet Tubman)
সময়কাল: ১৮২২–১৯১৩
কেন গুরুত্বপূর্ণ:
- যুক্তরাষ্ট্রের দাসপ্রথা বিলুপ্তির সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
- “আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোড” এর মাধ্যমে শত শত দাসকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন।
- দাসপ্রথাবিরোধী আন্দোলন ও নারী অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে তিনি চিরস্মরণীয় নাম।
৫. ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল (Florence Nightingale)
সময়কাল: ১৮২০–১৯১০
কেন গুরুত্বপূর্ণ:
- আধুনিক নার্সিং পেশার প্রবর্তক হিসেবে স্বীকৃত।
- ক্রিমিয়ান যুদ্ধে (১৮৫৩–১৮৫৬) আহত সৈন্যদের চিকিৎসায় মানবিকতা ও সংগঠিত সেবাপদ্ধতি চালু করেন।
- হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে অনন্য অবদান রেখেছেন।
৬. মেরি কুরি (Marie Curie)
সময়কাল: ১৮৬৭–১৯৩৪
কেন গুরুত্বপূর্ণ:
- তিনিই প্রথম নারী যিনি নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন, এবং দুইটি ভিন্ন বিষয়ে (পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন) নোবেল পান।
- তেজস্ক্রিয়তা (Radioactivity) নিয়ে তাঁর গবেষণা চিকিৎসা ও পরমাণু বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
- নারীদের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অগ্রসর হওয়ার পথ তিনি সুগম করেছিলেন।
৭. মাদার তেরেসা (Mother Teresa)
সময়কাল: ১৯১০–১৯৯৭
কেন গুরুত্বপূর্ণ:
- আলবেনীয় বংশোদ্ভূত এই রোমান ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী ভারতের কলকাতায় দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সেবায় জীবন উৎসর্গ করেন।
- ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বব্যাপী মানবকল্যাণে কাজ করেন।
- শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পান (১৯৭৯), সেবা ও মানবতার প্রতীক হিসেবে আজও স্মরণীয়।
৮. রোজা পার্কস (Rosa Parks)
সময়কাল: ১৯১৩–২০০৫
কেন গুরুত্বপূর্ণ:
- আমেরিকায় বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র।
- ১৯৫৫ সালে বাসে সাদা যাত্রীর জন্য আসন ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে গ্রেফতার হন, যা নাগরিক অধিকার আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করে।
- “সিভিল রাইটস মুভমেন্টের জননী” হিসেবে বিবেচিত।
৯. ইন্দিরা গান্ধী (Indira Gandhi)
সময়কাল: ১৯১৭–১৯৮৪
কেন গুরুত্বপূর্ণ:
- ভারতের প্রথম ও এখনো পর্যন্ত একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী।
- তার আমলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ছিল।
- বাহাত্তরের জরুরি অবস্থা ও সবুজ বিপ্লব (Green Revolution) সহ নানা ঘটনায় সমালোচনা থাকলেও ভারতের রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব ছিল ব্যাপক।
১০. মালালা ইউসুফজাই (Malala Yousafzai)
সময়কাল: জন্ম ১৯৯৭
কেন গুরুত্বপূর্ণ:
- পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় তালেবান শাসনের অধীনে থেকে নারীশিক্ষা নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যান।
- ২০১২ সালে তালেবানদের গুলিতে গুরুতর আহত হলেও তিনি নারীশিক্ষার পক্ষে বিশ্বব্যাপী সোচ্চার হন।
- নোবেল শান্তি পুরস্কারের সর্বকনিষ্ঠ বিজয়ী (২০১৪) হিসেবে বিশ্বে নারীশিক্ষা ও অধিকার আন্দোলনের এক মূর্ত প্রতীক।
শীর্ষ ১০ বিখ্যাত নারী
এই দশ নারীর কর্ম, আদর্শ এবং আত্মত্যাগ সমগ্র বিশ্বকে বদলে দিয়েছে। জোয়ান অব আর্কের মতো কেউ সাহসের প্রতীক, আবার মেরি কুরির মতো কেউ বিজ্ঞানের দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। রোজা পার্কস কিংবা মালালা ইউসুফজাই মানবাধিকারের জন্য লড়াই করে পথ দেখিয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেকের জীবনের গল্প আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে, শেখায় যে কঠিনতম বাঁধাকেও অতিক্রম করে মানুষ সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
✍️এই নিবন্ধটি সাময়িকীর সুন্দর এবং সহজ জমা ফর্ম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। আপনার লেখা জমাদিন!