বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের আন্দোলন শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল এবং এর একটি পরিণতি দেখা গেলো আজ শেখ হাসিনার দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে। সরকার শুরু থেকেই এই আন্দোলন এবং আন্দোলনকারীদের তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখেছে। এমনকি শত-শত মৃত্যুর পরও তারা পুরো বিষয়টিকে বিরোধীদের ষড়যন্ত্র বা জঙ্গি হামলা হিসেবে বর্ণনা করে এসেছে।
পনের বছরের বেশি সময় ধরে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা ছাড়ার স্লোগান, দেয়ালে-দেয়ালে ‘স্বৈরাচার’ লেখা কোনো কিছুই স্পর্শ করেনি। যার বিরুদ্ধে সামান্য সমালোচনার জন্যও মানুষকে জেলে যেতে হয়েছে, তার বিরুদ্ধে রাস্তায় জ্বালাময়ী স্লোগান এবং সামাজিক মাধ্যমে লাখ-লাখ মানুষের ঠাট্টা-বিদ্রুপও তারা অবজ্ঞা করেছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো এই রাজনৈতিক দলটি আক্ষরিক অর্থেই ‘দেয়ালের লিখন’ পড়তে পারেনি। ১৯৯০ এর গণঅভ্যূথ্থানের ৩৪ বছর পর আরেকটি গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন হলো, তবে এবার সেটি হলো দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রক্তপাতের মধ্য দিয়ে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই যেমন স্পষ্ট ছিল যে এই দাবি শেষপর্যন্ত সরকারকে মেনে নিতে হবে, তেমনি শিক্ষার্থীদের এক দফা ঘোষণার পরও পরিষ্কার ছিল যে সাধারণ মানুষের এত ক্ষোভ এবং ঘৃণা নিয়ে কোনো সরকার টিকতে পারে না। এই রক্তপাত হয়তো ঠেকানো যেতো, কিন্তু সেই চেষ্টা আন্তরিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে দেখা যায়নি।
সর্বময় ক্ষমতা এখানে শুধু নীতিভ্রষ্টই করেনি, বাস্তবতা থেকে অন্ধ করে দিয়েছে। ব্যাপক দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, যেকোনো সমালোচককে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা- এসব কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিনের যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, সেটি দেখতে না পারাটা শুধুমাত্র দাম্ভিকতারই ইঙ্গিত দেয়।
কোন রাষ্ট্রপ্রধানকে তখনই ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করতে হয়, যখন তার সেই ক্ষমতা শুধু ক্ষমতাতেই সীমাবদ্ধ থাকে, এর পেছনে জনসমর্থন থাকে না। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্বে সেই বার্তাটাই দিলেন।