বাপ্পী লাহিড়ী, যিনি অলোকেশ বাপ্পী লাহিড়ী নামে জন্মগ্রহণ করেন, ১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা অপরেশ লাহিড়ী ও মা বাঁসুরী লাহিড়ী ছিলেন বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ। তাঁদের পরিবারের সংগীতের প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল এবং এই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় বাপ্পী ছোটবেলা থেকেই সংগীতচর্চা শুরু করেন। মাত্র তিন বছর বয়সে তিনি তবলা বাজানো শুরু করেন।
সংগীত জীবনের সূচনা
বাপ্পী লাহিড়ী মাত্র ১৯ বছর বয়সে মুম্বাইয়ে যান এবং ১৯৭৩ সালে ‘নানহা শিকারী’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বলিউডে সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তবে তাঁর ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য মোড় আসে ১৯৭৫ সালে ‘জখমী’ ছবির মাধ্যমে, যেখানে তিনি সংগীত পরিচালনার পাশাপাশি কণ্ঠও দেন। এই ছবির গানগুলো জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর তিনি বলিউডে শক্ত অবস্থান তৈরি করেন।
ডিস্কো সংগীতের প্রসার
১৯৮০-এর দশকে বাপ্পী লাহিড়ী ভারতীয় চলচ্চিত্রে ডিস্কো সংগীতের প্রসার ঘটান। তাঁর সুরারোপিত ‘ডিস্কো ড্যান্সার’ (১৯৮২), ‘নমক হালাল’ (১৯৮২), ‘শরাবী’ (১৯৮৪) চলচ্চিত্রের গানগুলো তখনকার প্রজন্মের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। তিনি ভারতীয় সংগীতে সিন্থেসাইজার ও ইলেকট্রনিক বিট ব্যবহারের পথপ্রদর্শক ছিলেন।

জনপ্রিয় গান ও সাফল্য
বাপ্পী লাহিড়ী বহু কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন। তাঁর জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে:
- “ইয়াদ আ রাহা হ্যায়” (ডিস্কো ড্যান্সার)
- “তামা তামা লগে” (থানেদার)
- “জিমি জিমি আজা আজা” (ডিস্কো ড্যান্সার)
- “বোম্বাই নাগারিয়া” (ট্যাক্সি নং ৯২১১)
- “ও লাল দুপাট্টেওয়ালি” (অঙ্কহি)
১৯৮৬ সালে তিনি এক বছরে ১৮০টিরও বেশি গান রেকর্ড করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখান।
বলিউডের বাইরে সংগীত
বলিউডের পাশাপাশি বাপ্পী লাহিড়ী বাংলা, তেলুগু, তামিল, কন্নড়, মালায়ালমসহ বিভিন্ন ভাষার চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেছেন। তিনি বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জন্যও গান তৈরি করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবন
তিনি চিত্রাণী লাহিড়ীকে বিয়ে করেন এবং তাঁদের দুই সন্তান – পুত্র বাপ্পা লাহিড়ী ও কন্যা রিমা লাহিড়ী।

রাজনীতি ও অন্যান্য কাজ
২০১৪ সালে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি) যোগ দেন এবং শ্রীরামপুর লোকসভা আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, যদিও জয়ী হতে পারেননি।
শেষ জীবন ও মৃত্যু
২০২১ সালে তিনি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হন এবং এরপর থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, ৬৯ বছর বয়সে, তিনি মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
উত্তরাধিকার ও প্রভাব
বাপ্পী লাহিড়ী ভারতীয় সংগীতের এক অবিস্মরণীয় নাম। তাঁর গানের ধাঁচ ও সংগীতের বৈচিত্র্য নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করছে। তাঁর অবদান ভারতীয় সংগীত জগতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।