ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা
হামাসকে নির্মূলে চলমান গাজায় অভিযানের মধ্যে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে সাম্প্রতিক হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ইসরায়েলের জন্য একটি নতুন সম্ভাব্য প্রতিপক্ষকে মোকাবেলার শঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে সম্প্রতি লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ হামলা চালিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসরায়েল ও মার্কিন শক্তির বিরুদ্ধে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর সর্বশেষ হামলার ঘটনা এটি। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জবাবে গাজায় ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর লেবাননে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলের চার বেসামরিক নাগরিক ও ৯ সেনা নিহত হয়। তবে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর তৎপরতা অব্যাহত থাকলে ইসরায়েল হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলের দপ্তরবিহীন মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ। তিনি বলেছেন, হামলা অব্যাহত থাকলে লেবাননের সীমান্ত থেকে হিজবুল্লাহকে সরিয়ে দিতে মাঠে নামবে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।
তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের মুখপাত্র ইলন লেভি গত বুধবার বলেছেন, ‘আমরা এখন একটি বিভক্ত অবস্থায় আছি।
হিজবুল্লাহকে জাতিসংঘের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাব মেনে ইসরায়েলি সীমান্ত থেকে সরে যেতে হবে, না হলে আমরাই তাদের সরিয়ে দেব।’ ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়ভ গ্যালান্টও গত মঙ্গলবার বলেছেন, ইসরায়েল ‘একটি বহুমুখী যুদ্ধে’ লিপ্ত। গাজা, পশ্চিম তীর, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন ও ইরান—এই ‘সাত রণক্ষেত্র’ থেকে আক্রমণের শিকার হচ্ছে ইসরায়েল। তাদের মধ্যে ছয় পক্ষের জবাব দিয়েছে দেশটি।
ইসরায়েলের গণমাধ্যমের প্রতিবদেন বলা হয়েছে, ইসরায়েল এখন পর্যন্ত ইয়েমেনের হামলার প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর গাজার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরের গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচলের পথে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে।
হামাস অবশ্য গাজা সংঘাতের শুরুতেই হিজবুল্লাহ ও পশ্চিম তীর এবং ওই অঞ্চলের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে জড়ানোর চেষ্টা করেছিল। তবে হামাসকে নির্মূলের অঙ্গীকার ইসরায়েল যখন গাজায় তাণ্ডব শুরু করে তখন তাত্ক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি হিজবুল্লাহ। এপি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে বিভ্রান্ত করেছিল বলে মনে করেন ইসরায়েলের সাবেক প্রধান সামরিক গোয়েন্দা বিশ্লেষক জ্যাক নেরিয়ার।
তিনি বলেন, ‘এখন আমরা যা জানি তা হলো, হিজবুল্লাহ ৮ অক্টোবরই জড়িয়ে পড়েছে এবং আজকের পরিস্থিতিতে আসার আগ পর্যন্ত ধীরে ধীরে আরো সাহসী হয়ে উঠেছে। সংগঠনটি দূরপাল্লার অস্ত্র ছাড়া তাদের সংগ্রহের সব অস্ত্র ব্যবহার করেছে।’
এদিকে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ায় দেশটির সেনাবাহিনী গাজায় অভিযানের পরিধি বাড়াচ্ছে। তবে জোরদার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে এই যুদ্ধে লেবানন ও সম্ভবত আরো ব্যাপক অঞ্চলে ছড়িয়ে যেতে পারে। লেবাননেন সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলে নিঃসন্দেহে ইসরায়েলের যন্ত্রণা আরো বাড়াবে। কারণ হিজবুল্লাহ প্রশিক্ষিত। ধারণা করা হয়, তাদের অস্ত্র ভাণ্ডারে দেড় লাখ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।
সূত্র : দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।