মিয়ানমার থেকে হাইতি: যেসব সংঘাত বিশ্ববাসীর নজরে আসেনি

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
7 মিনিটে পড়ুন

মিয়ানমার থেকে হাইতি: যেসব সংঘাত বিশ্ববাসীর নজরে আসেনি

চলতি বছর বিশ্বজুড়ে আলোচনার শীর্ষে স্থান পেয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ ও ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধ। এই দুটি সংঘাত বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারলেও এমন কিছু মারাত্মক সামরিক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে যেগুলো ২০২৩ সালে খুব বেশি আলোচনায় আসেনি। অথচ সেসব সংঘাতে বিশ্বজুড়ে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।

২০২৩ সালের বেশিরভাগ সময় বিশ্বব্যাপী শিরোনামে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আধিপত্য বিস্তার করলেও অক্টোবরে এসে আলোচনার স্থান দখল করে নেয় মধ্যপ্রাচ্যের ইসরায়েল-হামাস সংঘাত। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণে হামাসের অপ্রত্যাশিত ব্যাপক হামলার জবাবে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নৃশংস আক্রমণ বিশ্ববাসীর টনক নড়িয়ে দিয়েছিলে। তবে এসব সংঘাত ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক ভয়াবহ সংঘাতের ঘটনা ঘটেছিল। তবে সেগুলো নিয়ে খুব কমই আলোচনা হয়েছিল বিশ্বে।

মিয়ানমার থেকে সুদান, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো থেকে হাইতি, একাধিক মহাদেশজুড়ে রাজনৈতিক ও সামরিক সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। এসব সংঘাত বিশ্বজুড়ে গণ বাস্তুচ্যুতির জন্যও দায়ী। হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু এবং লাখ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের দক্ষিণ প্রান্তের এই সংঘাতগুলো খুব বেশি মনোযোগ পায়নি। কেননা, ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ওপরেই নজর রেখেছিল।

২০২৩ সালে বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ না করা কয়েকটি ভয়াবহ সংঘাতের সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরা হলো-

- বিজ্ঞাপন -

মিয়ানমার

চীনের কৌশলগত মিত্র মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে সামরিক শাসন চলছে। ২০১৬ সালে বেসামরিক নেতা অং সান সু চি ক্ষমতায় এলে অল্প সময়ের জন্য এই ধারার পরিবর্তন ঘটেছিল। তবে ২০২১ সালে সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত করে আবার দেশটির ক্ষমতায় আসে সামরিক বাহিনী। সু চির এই সংক্ষিপ্ত শাসনামলে দেশটির রাখাইনে সংখ্যালঘু গোষ্ঠী রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সহিংস হামলা হয়। এতে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতের ঘটনাও ঘটেছিল। এর পর থেকে দেশটির বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো সহিংস সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।

সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যকার এ উত্তেজনা ২০২৩ সালে আরও বেড়ে যায়। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এবং আরাকান আর্মি মিলে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স গঠন করে। চলতি বছর এই জোট কয়েকটি সাফল্য দাবি করে এবং শত শত সামরিক পোস্ট ও চারটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ক্রসিং দখল করে নেয়। এ সময় সশস্ত্র সংঘর্ষে উভয় পক্ষের হাজার হাজার সেনা ও যোদ্ধা নিহত হয়েছে। যেসব অঞ্চলে এই জোটের যোদ্ধারা অবস্থান করেছিল সেসব স্থানে সেনাবাহিনীর নির্বিচার বোমা হামলার শিকার হয়েছে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষও।

মিয়ানমার থেকে হাইতি: যেসব সংঘাত বিশ্ববাসীর নজরে আসেনি
দীর্ঘদিন ধরে সামরিক নেতৃত্বে রয়েছে সুদান। ছবি টিআরটি

সুদান

মিয়ানমারের মতো সুদানও দীর্ঘদিন ধরে সামরিক শাসনে রয়েছে। তবে ২০১৮ সালে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভের পর দেশটি গণতন্ত্রে রূপান্তরিত হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছিল। ২০১৯ সালে দেশটির দীর্ঘকালীন সামরিক শাসক ওমর আল বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করে আবদাল্লা হামদোককে বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বল্প মেয়াদে দেশকে শাসন করার অনুমতি দিয়েছিল সামরিক সংস্থা।

এরপর প্রতিবাদের মুখে হামদোক পদত্যাগ করলে ২০২২ সালে পূর্ণ ক্ষমতার জন্য আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থান শুরু করেছিলেন দেশটির শীর্ষ জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান। তবে তার এ প্রচেষ্টা রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান ঘটাতে পারেনি। চলতি বছরের শুরুর দিকে দেশটির দ্বিতীয় শক্তিশালী আরেক জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (হেমেদতি) বুরহানের অধীনে থাকতে অস্বীকার করেন। হেমেদতি আধাসামরিক র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এর নেতৃত্ব দেন।

মিয়ানমার থেকে হাইতি: যেসব সংঘাত বিশ্ববাসীর নজরে আসেনি
সংঘাতের কারণে দারফুর থেকে পালিয়ে যাচ্ছে সুদানীরা। ছবি রয়টার্স

সেনাপ্রধান ও দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেতা বুরহানের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ এবং এপ্রিলে দুই জেনারেলের মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান বিরোধ সামরিক সংঘর্ষের সূত্রপাত করে। দুই জেনারেলের মধ্যে যুদ্ধ প্রায় দশ হাজার সুদানি নিহত হন। ৬০ লাখের বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। ২০২৩ সালে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে সুদানে।

- বিজ্ঞাপন -

এই সংঘাত দারফুরের যুদ্ধকেও নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে। এই অঞ্চলটি নিয়ে সুদানি সরকার এবং স্থানীয় সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চলছে। এই অঞ্চলে আরএসএফ ক্র্যাকডাউনের কারণে মাসালিত বংশোদ্ভূত অনেক বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন।

মিয়ানমার থেকে হাইতি: যেসব সংঘাত বিশ্ববাসীর নজরে আসেনি
চলতি বছর ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে ৭০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ছবি রয়টার্স

ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো

চলতি বছর মধ্য আফ্রিকার দেশ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে (ডিআরসি) ৭০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে মিলিশিয়ারা মিলে স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ের কারণে এই ঘটনা ঘটে।

ডিআরসি-তে অভিবাসন সংস্থার প্রধান মিশন ফ্যাবিয়েন সাম্বাসি বলেছেন, ‘দশকের পর দশক ধরে, কঙ্গোর জনগণ সংকটের ঝড়ের মধ্যে জীবনযাপন করছে।’ তিনি ২০২৩ সালের সশস্ত্র সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সংঘাতের বৃদ্ধি অল্প সময়ে অনেক বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে। যেমনটা আগে খুব কমই দেখা গেছে। আমাদের জরুরিভাবে যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাদের সাহায্য করতে হবে।’

- বিজ্ঞাপন -

আফ্রিকার এই দেশ দীর্ঘকাল ধরে তুতসি এবং হুটুসের মতো বড় উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষের পাশাপাশি প্রতিবেশী, বিশেষ করে রুয়ান্ডার সঙ্গে সহিংস সংঘাতের শিকার হয়েছে। ১৯৯০ এর দশকের শুরুতে একটি ভয়ানক গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গিয়েছিল রুয়ান্ডা।

মিয়ানমার থেকে হাইতি: যেসব সংঘাত বিশ্ববাসীর নজরে আসেনি
দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার শিকার বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ হাইতি। ছবি এপি

হাইতি

দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার শিকার বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ হাইতি। তবে ২০২১ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোইস নিহতের পরে বড় অপরাধী চক্রগুলো ক্যারিবীয়য়ান দেশটির রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করলে সবকিছু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

২০২৩ সালে পুরো দেশে গ্যাং সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। তখন রাজধানীর ৮০ শতাংশেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করেছিল মাফিয়া গোষ্ঠীগুলো। এক বছরের ব্যবধানে মাফিয়া দলগুলোর নিজেদের মধ্যকার সংঘর্ষে এবং সরকারের বিরুদ্ধে মাফিয়া দলগুলোর লড়াইয়ের ফলে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ ‍নিহত হয়।

২০২৩ সালেও অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজি এবং যৌন নিগ্রহের ঘটনা বেড়েছে। এছাড়া একটি মারাত্মক কলেরা প্রাদুর্ভার্বের মুখে পড়েছে হাইতিবাসী। দেশটিতে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ কলেরা সংক্রমিত হয়েছে।

মিয়ানমার, সুদান এবং ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর মতো হাইতিও ১৮০৪ সালের বিপ্লবের পর থেকে একাধিক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থান এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সম্মুখীন হয়েছে।

তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড অবলম্বনে ভাষান্তর করা।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!