ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ: প্রাণ বাঁচাতে ছুটেই চলেছেন বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ: প্রাণ বাঁচাতে ছুটেই চলেছেন বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। গাজার দক্ষিণ সীমান্তে নতুন করে বিমান ও ট্যাংক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। শুক্রবারের (২৯ ডিসেম্বর) এই হামলায় টারপলিনের নিচে থাকা সদ্য বাস্তুচ্যুত হাজার হাজার ঘুমন্ত গাজাবাসী প্রাণ বাঁচাতে আবারও ছুটছেন দিগবিদিক। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় নতুন হামলার মাধ্যমে বছরটি শেষ করেছে ইসরায়েল। ইতোমধ্যে অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা বাস্তুচ্যুতদের নতুন করে আবার উচ্ছেদ করেছে তারা।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্ট এই অগ্রগতিকে ‘এমন একটি কাজ, যা আগে কখনও করা হয়নি’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, সৈন্যরা হামাসের কমান্ড সেন্টার এবং অস্ত্র ডিপোতে পৌঁছেছে।

ইয়োভ গ্যালান্ট হামাসকে ধ্বংস করার জন্য এই মিশন অপরিহার্য অভিহিত করে বলেন, যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের অপারেশন অপরিহার্য। আমরা ফলাফল ও শত্রু বাহিনীর ধ্বংস দেখতে পাচ্ছি।

- বিজ্ঞাপন -

হামলার পর রয়টার্সের সাংবাদিকরা দেখেছেন, বিমান হামলায় দক্ষিণ সীমান্তবর্তী রাফাহ শহরে একটি ভবন ধ্বংস করা হয়েছে। তারা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে একটি চাপা পড়া শিশুর মাথা দেখতে পান। শিশুটি চিৎকার করছে। একজন উদ্ধারকর্মী তার মাথাকে হাত দিয়ে ঢাল করে ধরেছে, অন্য একজন তাকে মুক্ত করার জন্য কংক্রিটের একটি স্ল্যাব ভাঙার চেষ্টা করছে।

সেখানকার প্রতিবেশী সানাদ আবু তাবেত বলেছেন, দোতলা ওই বাড়িটি ছিল বাস্তুচ্যুত মানুষে জনাকীর্ণ। আজ সকালের দিকে আত্মীয়স্বজনরা সেখানে আসেন সাদা কাফনে মোড়ানো লাশ শনাক্ত করতে।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ: প্রাণ বাঁচাতে ছুটেই চলেছেন বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী
ইসরায়েলি হামলায় আহত এক শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ছবি সংগৃহীত

এদিকে যখন ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর ও পূর্ব দিক থেকে অগ্রসর হচ্ছিল, তখন কেন্দ্রীয় জেলা বুরেজ, মাগাজি ও নুসিরাতে আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার গাজাবাসী প্রাণ বাঁচাতে ছুটছেন চারদিকে। বেশির ভাগই দক্ষিণ বা পশ্চিমের শহর দেইর আল-বালাহতের পথ পাড়ি দিয়েছে। পথে পথে প্লাস্টিকের শিট দিয়ে অস্থায়ী তাঁবু স্থাপন করেছে।

ভুক্তভোগী উম হামিদ বলেন, আমরা মারাত্মকভাবে ভুগেছি। শীত-বৃৃষ্টির মধ্যে শিশু-বয়স্কদের নিয়ে আমরা সারা রাত আশ্রয় ছাড়াই কাটিয়েছি।

কিছুটা দূরে সাদা দাড়িওয়ালা আবদেল নাসের আওয়াদাল্লাহ একটি কাঠের ফ্রেমের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন, যা একটি তাঁবু তৈরির জন্য প্লাস্টিকের মধ্যে মোড়ানো হবে এবং তিনি বলছেন যে তার পরিবারকে হারিয়েছেন তিনি।

- বিজ্ঞাপন -

তিনি বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে কবর দিয়েছি। আমার বাচ্চাদের কবর দিয়েছি। তাদের মধ্যে একজন ১৬ বছর বয়সী, অন্যজন ১৮ বছর বয়সী। আমি সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছি না, আমি আমার বাচ্চাদের সকাল ৬টায় কবর দিয়েছি। তখনও তাদের শরীর উষ্ণ ছিল। এ ছাড়া আমার ২ বছর বয়সী ভাগনে, তাকেও কবর দিয়েছি।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ: প্রাণ বাঁচাতে ছুটেই চলেছেন বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী
ইসরায়েলি হামলায় আহত এক শিশুকে জড়িয়ে ধরে আছেন এক আহত ফিলিস্তিনি নারী। ছবি সংগৃহীত

আমি আমার জীবনে কখনও ভাবিনি যে আমি আমার সন্তানদের কবর দেবো। ভেবেছিলাম তারা আমাকে কবর দেবে, কাঁদতে কাঁদতে বলেন তিনি।

ইসরায়েলি হামলা বন্ধের কোনও লক্ষণ নেই

হামাস ইসরায়েলি শহরে হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে নিহত ও ২৪০ জনকে জিম্মি করার ১২ সপ্তাহ পর ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকার অনেক অংশ ধ্বংস করে দিয়েছে। এতে প্রায় ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন মানুষ বাড়িছাড়া হয়েছে। অনেকেই প্রাণ বাাঁচাতে এ পর্যন্ত তৃতীয় বা চতুর্থবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

- বিজ্ঞাপন -

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ২১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১৫ হাজারেরও বেশি নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৫৫ হাজার ফিলিস্তিনি। সেখানে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ। ছিটমহলের জনসংখ্যার প্রায় ১ শতাংশ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আরও হাজার হাজার মৃতদেহ উদ্ধার না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ: প্রাণ বাঁচাতে ছুটেই চলেছেন বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী
ইসরায়েলের বিমান হামলার পর ভীতসন্ত্রস্ত এক ফিলিস্তিনি শিশু কান্নায় ভেঙে পড়ে। ছবি রয়টার্স

এদিকে জাতিসংঘ বলছে, খাদ্য, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি এবং পর্যাপ্ত আশ্রয়ের তীব্র সংকটে আরও কয়েক হাজার মানুষ মারা যেতে পারে।

তবে ইসরায়েল বলছে, তারা বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য যা করা দরকার, তা করছে এবং এ জন্য তারা হামাস যোদ্ধাদের দায়ী করছে। আর এসব অস্বীকার করেছে হামাস। তারা বলছে, তারা হামাসকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত লড়াই করবে, যারা ইসরায়েলের ধ্বংসের শপথ নিয়েছে।

ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলতি মাসে আহ্বান জানিয়েছিল যে তারা আগামী সপ্তাহে পূর্ণবিকশিত যুদ্ধ হ্রাস করবে এবং হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে লক্ষ্যবস্তু অভিযানে রূপান্তর করবে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!