দীর্ঘায়িত হবে গাজার যুদ্ধ: ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু
ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে নির্মূলে গাজা উপত্যকায় ৮১ দিন আগে ইসরায়েলি বাহিনী বর্বর হামলা শুরু করলেও তা সেখানেই থেমে থাকেনি। এই যুদ্ধে অন্তত ২১ হাজার বেসামরিক নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে যুদ্ধ বিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়লেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সামনের দিনে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরও জোরদার করা হবে। দীর্ঘায়িত হবে এ যুদ্ধ।
নেতানিয়াহু তাঁর দল লিকুদ পার্টির সদস্যদের উদ্দেশে জানান, গত সোমবার সকালে গাজায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শেষ হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। গাজায় বিমান হামলার মাত্রা ইসরায়েলের কমানো উচিত বলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের মন্তব্যের কয়েক দিনের মাথায় নেতানিয়াহু এই মন্তব্য করলেন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের মাটিতে হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। জিম্মি করা হয় ২৪০ জনকে, যাদের মধ্যে ১৩২ জন এখনো জিম্মি রয়েছেন বলে ইসরায়েল জানিয়েছে। এই অবস্থায় নেতানিয়াহু হামাসকে নির্মূল করা ও গোষ্ঠীটির হাত থেকে জিম্মিদের ফেরত আনার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে বলেন, গাজায় সফরে সেখানে অবস্থানরত ইসরায়েলি সেনারা এই যুদ্ধ ‘শেষ না হওয়া পর্যন্ত’ তাঁকে লড়াই অব্যাহত রাখতে বলেছেন।
নেতানিয়াহু আরও বলেন, ‘আমরা থামছি না। আমরা লড়াই অব্যাহত রাখব এবং সামনের দিনে আরও জোরদার করব। এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে। যুদ্ধে শেষ হওয়ার মতো সময় এখনো হয়নি।’
এ দিন পরে হামাসের হাতে জিম্মিদের স্বজনদের উদ্দেশে পার্লামেন্টে ভাষণ দেন নেতানিয়াহু। তখন গ্যালারিতে জিম্মিদের স্বজনেরাও ছিলেন। তাঁরা জিম্মিদের শিগগিরই মুক্ত করে আনার জন্য চিৎকার করতে থাকেন। তখন নেতানিয়াহু বলেন, ‘সামরিক চাপ প্রয়োগ ছাড়া সব জিম্মিকে মুক্ত করে আনা সম্ভব নয়।…আমরা লড়াই বন্ধ করছি না।’
এদিকে, ইসরায়েলি সশস্ত্রবাহিনীর প্রধান হেরজি হালেভি জানিয়েছেন, হামাসের সঙ্গে চলমান সংঘাত এখনই শেষ হচ্ছে না। এই সংঘাত চলবে আরও কয়েক মাস। এর আগে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও এই ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।
অপরদিকে, তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—ইসরায়েলকে ২৩০টি কার্গো বিমান এবং ২০টি জাহাজ বোঝাই অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকে এসব অস্ত্র দিয়েছে দেশটি। গত ৭ অক্টোবর গাজায় সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২৩০টি কার্গো প্লেন এবং ২০টি অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামবোঝাই জাহাজ ইসরায়েলে পাঠিয়েছে বলে সোমবার ইসরায়েলি গণমাধ্যমে বলা হয়েছে।
ইসরায়েলকে পাঠানো বিপুল এই মার্কিন সামরিক সহায়তার মধ্যে আর্টিলারি শেল, সাঁজোয়া যান এবং সৈন্যদের জন্য মৌলিক যুদ্ধ সরঞ্জাম রয়েছে বলে ইয়েদিথ আরোনাথ সংবাদপত্র জানিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গাজা উপত্যকায় বর্তমান যুদ্ধের ব্যয় ৬৫ বিলিয়ন শেকেল বা ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বলে অনুমান করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদপত্রটি বলেছে, যুদ্ধের শুরুতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের গুদামগুলোতে থাকা বেশির ভাগ গোলাবারুদ ব্যবহার করে ফেলে। সংবাদপত্রটি আরও বলেছে, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে একটি সম্ভাব্য বড় আকারের যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে ইসরায়েল তার গুদামগুলো পুনরায় পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে।