দাবিতে অনড় হামাস-ইসরায়েল, বাড়ছে উদ্বেগ
গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধে নতুন একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মিশর। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, জিম্মি মুক্তির জন্য নতুন চুক্তির বিষয়ে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ আলোচনা হচ্ছে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, নতুন করে চুক্তির বিষয়টি এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যেই রয়ে গেছে। কারণ, হামাস গাজায় সম্পূর্ণরূপে ইসরায়েলের হামলা বন্ধের দাবি জানিয়েছে। পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ছাড়া অন্য আর কিছু নিয়েই তারা আলোচনা করবে না বলেও স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছে।
হামাসের হাতে এখনো ইসরায়েল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া প্রায় ১৪০ জন জিম্মি রয়েছে। যাদের বেশিরভাগই ইসরায়েলের নাগরিক। সম্প্রতি গাজায় অভিযান চালানোর সময় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) গুলিতে তিন ইসরায়েলি জিম্মি নিহত হয়। আইডিএফ ‘ভুল করে’ তাদের হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
এ ঘটনা প্রকাশের পর জিম্মিদের স্বজনদের মধ্যে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলি সরকারের উপর জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আরো বেশি কিছু করার চাপও জোরাল হচ্ছে।
চাপে পড়া ইসরায়েলি সরকার তাই আরো একবার গাজায় যুদ্ধে সাময়িক ‘মানবিক বিরতি’ দিতে প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে। গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের উদ্দেশে এক বক্তব্যে বলেছেন, “গাজায় আরেক দফায় লড়াইয়ে সাময়িক মানবিক বিরতি দিতে রাজি আছে তার দেশ।”
কিন্তু হামাস এবার সাময়িক নয় বরং গাজায় ইসরায়েলের অভিযান সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার দাবিতে অনড় হয়ে বসে আছে। নিজেদের দাবি নিয়ে আলোচনার জন্য বুধবার মিশরের রাজধানী কায়রোয় পৌঁছেছেন হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়া।
গাজার আরেকটি ছোট সশস্ত্র দল ইসলামিক জিহাদ, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার দিন তারাও হামলা চালায় এবং কয়েকজনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের নেতাও কয়েক দিনের মধ্যে মিশরে যাবেন এবং গাজায় যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাব্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করবেন।
গাজায় নতুন করে যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে বুধবার হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেন, “এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এবং মধ্যস্থতার চেষ্টা এবং আমরা আশা করছি এই আলোচনা আমাদের কোনো দিশার দিকে নিয়ে যাবে।”
কিন্তু হানিয়ার মিডিয়া এডভাইজার তাহের আল-নন কায়রোতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ইসরায়েল গাজায় তাদের সামরিক অভিযান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ না করলে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য মানবিক ত্রাণের পরিমাণ না বাড়ালে হামাস ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে কোনো আলোচনা করতে ইচ্ছুক না।
এদিকে, ইসরায়েল হামাসের হাতে জিম্মি সব নারী এবং অসুস্থ পুরুষদের মুক্তির বিষয়ে জোর দিয়েছে বলে জানিয়েছেন এ বিষয়ে অবগত থাকা এক ব্যক্তি। যিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে চান না। তিনি বলেছেন, এজন্য ইসরায়েল সে দেশে গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দিতেও নমনীয় মনভাব দেখিয়েছে।
কিন্তু হামাসের গাজায় যুদ্ধ সম্পূর্ণ বন্ধ করার দাবি বিষয়ে এখনো ইসরায়েলের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নভেম্বরে গাজায় প্রথম দফায় এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিতে শতাধিক ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল সে দেশে কারাগারে বন্দি থাকা ২৪০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়। সেই যুদ্ধবিরতি কার্যকরে মধ্যস্থতা করেছিল কাতার এবং মিশরও।