সাদা কাপড়ে উচ্ছিষ্ট খাবার দিয়ে লিখে সাহায্য চেয়েছিলেন নিহত জিম্মিরা

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
6 মিনিটে পড়ুন

সাদা কাপড়ে উচ্ছিষ্ট খাবার দিয়ে লিখে সাহায্য চেয়েছিলেন নিহত জিম্মিরা

গাজায় ইসরায়েলি সৈন্যরা ভুল করে নিজেদের যে তিন জিম্মিকে মেরে ফেলেছে, মৃত্যুর আগে তারা সাদা কাপড়ের ওপর উচ্ছিষ্ট খাবার দিয়ে চিহ্ন ও শব্দ লিখে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন।

সাদা কাপড়টি উদ্ধার করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সদস্যরা।

কাপড়ে “সাহায্য করুন”, “তিন জিম্মি” এবং “এসওএস” চিহ্ন লেখা ছিল বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

মৃত্যুর আগে কোন এক সময় জিম্মিরা এটি লিখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

- বিজ্ঞাপন -

তারা বেশ কিছুদিন ধরেই ঐ ভবনটিতে অবস্থান করছিলেন বলেও ধারণা করছে আইডিএফ।

আইডিএফের কর্মকর্তারা এটাও স্বীকার করেছেন যে, সাদা পতাকাধারী ব্যক্তিদের হত্যা করে সৈন্যরা “নিয়ম লঙ্ঘন” করেছে।

গত শুক্রবার গাজার উত্তরে শেজাইয়াতে অভিযানের সময় নিজেদের তিন জিম্মিকে ভুল করে হত্যা করে ইসরায়েলি সৈন্যরা।

ইয়োতাম হাইম (২৮), সামের তালালকা (২২) এবং অ্যালন শামরিজ (২৬) নামের ঐ তিন ইসরায়েলি যুবককে গত ৭ই অক্টোবর ধরে এনেছিল হামাস।

অভিযানের সময় যখন এই তিন যুবককে গুলি করা হয়েছিল, তখন তাদের হাতে ঐ সাদা কাপড়টি ছিল।

- বিজ্ঞাপন -

এ ঘটনার জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হলেও হত্যার নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভ করে আসছে ইসরায়েলের সাধারণ নাগরিকরা।

এছাড়া এখনও যেসব ইসরায়েলি নাগরিকরা হামাসের কাছে জিম্মি রয়েছে, সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে তাদেরকে মুক্ত করার জন্য ইসরায়েলের সরকারেও ওপর চাপ বাড়ছে।

গাজা উপত্যকায় এখনও প্রায় ১২০ জন ইসরায়েলি হামাসের হাতে বন্দি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

- বিজ্ঞাপন -
সাদা কাপড়ে উচ্ছিষ্ট খাবার দিয়ে লিখে সাহায্য চেয়েছিলেন নিহত জিম্মিরা
ইয়োতাম হাইম, সামের তালালকা এবং অ্যালন শামরিজকে “ভুল করে” গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সৈন্যরা।

গত সাতই অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে আকস্মিকভাবে হামলা চালিয়ে তাদেরকে জিম্মি করে হামাস। ঐ হামলায় প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হয়েছিল।

হামলার ঘটনার পর প্রতিশোধ হিসেবে গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। “হামাসকে নিশ্চিহ্ন” করার লক্ষ্যেই অভিযান শুরু চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

এই অভিযানে ১৮ হাজারেরও বেশি গাজাবাসী নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। এছাড়া উদ্বাস্তু হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ।

এদিকে, জিম্মিকে হত্যার ঘটনা তদন্তে রবিবার ঘটনাস্থল ও তার আশপাশের কয়েকটি ভবনে তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

ঐ সময় “এসওএস”, “সাহায্য করুন” এবং “তিন জিম্মি” লেখা একটি সাদা কাপড় পাওয়া গেছে বলে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মৃত্যুর আগে কোন এক সময় জিম্মিরা এটি লিখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জিম্মিরা বেশ কিছুদিন ঐ ভবনটিতে অবস্থান করছিলেন বলেও ধারণা করছে আইডিএফ।

গত অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ মাসের শুরুতে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়।

এই সমঝোতার মধ্যে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি জিম্মি বিনিময়ও করা হয়। তখন বন্দি ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে একশ জনেরও বেশি ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস।

যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর গাজায় আবারও সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।

তখন থেকেই নতুন যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মাধ্যমে হামাসের হাতে বন্দি থাকা বাকি স্বজনদের উদ্ধারের দাবি জানিয়ে ইসরায়েলি সরকারেরও ওপর চাপ দিয়ে আসছে জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা।

সাদা কাপড়ে উচ্ছিষ্ট খাবার দিয়ে লিখে সাহায্য চেয়েছিলেন নিহত জিম্মিরা
বাকি জিম্মিদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে ইসরায়েলের হাজারও মানুষ

যদিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাদের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন “জিম্মিদের মুক্ত করা এবং বিজয় নিশ্চিত করার জন্যই সামরিক শক্তি বাড়ানো প্রয়োজন”।

এরপর যতই দিন গেছে, ততোই গাজায় সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে ইসরায়েল। আর তাকে সমর্থন দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

এতে গাজায় বেসামরিক মানুষের হতাহতের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে।

এ অবস্থায় ইসরায়েল ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেশ আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যেও পড়েছেন।

সর্বশেষ রবিবার ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনা ইসরায়েলে গিয়ে “অবিলম্বে একটি টেকসই যুদ্ধবিরতির” আহ্বান জানিয়েছেন।

যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির পক্ষ থেকেও একই আহ্বান জানানো হয়েছে।

কিন্তু এসব আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে উল্টো বলা হয়েছে যে, এই মুহূর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতি দেওয়াটা একটি ভুল হবে।

যুদ্ধবিরতি দিলে সেটি হামাসের হাতে উপহার তুলে দেওয়া হবে বলেও বর্ণনা করেছে ইসরায়েল সরকার।

গত অক্টোবর থেকে টানা বোমাবর্ষণের মুখে গাজা উপত্যকার একটি বড় এলাকা ইতিমধ্যেই ধ্বংস হয়ে গেছে। উদ্বাস্তু হয়েছে লাখ লাখ মানুষ।

খাদ্য, বস্ত্র ও ওষুধের অভাবে সেখানে এখন চরম মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে।

রবিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, খাবারের জন্য ত্রাণবাহী লরির পিছে ওঠার চেষ্টা করছেন গাজার উদ্বাস্তুরা।

সাদা কাপড়ে উচ্ছিষ্ট খাবার দিয়ে লিখে সাহায্য চেয়েছিলেন নিহত জিম্মিরা
হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের ছবিযুক্ত পোস্টারের মাঝে দাঁড়িয়ে দুজন আলিঙ্গন করছেন। ছবি এএফপি

নিহত জিম্মিদের সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে:

ইসরায়েলি সৈন্যদের গুলিতে নিহত তিন যুবক হচ্ছেন: ইয়োতাম হাইম (২৮), সামের তালালকা (২২) এবং অ্যালন শামরিজ (২৬)।

গত ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী শহরে হামলা চালিয়ে এই তিন জন সহ মোট ২৪০ জনকে ব্যক্তিকে জিম্মি করেছিল হামাস।

ইয়োতাম হাইম ছিলেন একজন মিউজিশিয়ান, যিনি গত ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী শহর কেফার আজা থেকে অপহৃত হন।

হামাসের হামলার সময় তিনি তার পরিবারকে ফোন করেন এবং জানান তার বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে।

আগুন দেওয়ার পর যখন তিনি জানালা খুলে দেন, তখনই তাকে অপহরণ করা হয়।

এদিকে, অ্যালন শামরিজও হামলার সময় কেফার আজা শহরে ছিলেন।

হামাস তাকে জিম্মি করার পর অ্যালনের পরিবার তার নাম প্রকাশের অনুমতি দেয়। তবে তার স্বজনরা এটাও অনুরোধ জানায় যে, যেন অ্যালনের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা না হয়।

নিহত আরেক জিম্মি সামের তালালকা মূলত একজন বেদুইন, তাকে অপহরণ করা হয় নির আম থেকে শহর থেকে।

তিনি মোটরসাইকেলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে এবং বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করতেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

তিনি হুরায় বসবাস করতেন এবং সেখানে একটা মুরগির হ্যাচারিতে কাজ করতেন।

৭ই অক্টোবর সকালে তিনি কাজে যোগদান করেছিলেন। হামলার পর তিনি তার বোনকে ফোন করে জানান যে তার গুলি লেগেছে।

তারা বাবা স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, হামলার দিন স্থানীয় সময় সকাল সাতটার দিকে তার সাথে শেষবার যোগাযোগ হয়।

গাজা থেকে তালালকার একটা ছবি টেলিগ্রামে শেয়ার করা হয়।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

বিষয়:
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!