গাজায় বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা: ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ কমছে না
এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির পর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নতুন করে শুরু করা হামলায় মৃতের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। দক্ষিণ গাজায় বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর এর সংখ্যা কমিয়ে আনতে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে দেশটিকে কৌশলগত চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
রয়টার্স বলছে, অঞ্চলটিতে ইসরায়েলি হামলা কমানোর চেষ্টা হিসেবে সামরিক সহায়তা সীমিত করার মতন বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এর মাধ্যমে গাজায় ইসরায়েলি হামলার কৌশলকে প্রভাবিত করতে পারে বাইডেন প্রশাসন।
উত্তর গাজায় ইসরায়েলি হামলার ফলে ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের মতো ঘটনা ঘটেছে। গাজার দক্ষিণে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ইসরায়েলকে হামাসের অবস্থান লক্ষ্যবস্তু করে হামলা পরিচালনার করার আহ্বান জানিয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনসহ শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা।
গত শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে সোমবার (৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৯০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণে হামাসের আকস্মিক হামলার পর চারদিন ধরে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় প্রায় একই সংখ্যক মানুষ নিহত হয়েছে। তবে এ সংখ্যাটি উত্তর গাজায় গত ২৮ অক্টোবর ইসরায়েলের স্থল হামলা শুরু হওয়ার চার দিনের মধ্যে নিহত হওয়া বেসামরিকদের তুলনায় কম। ওই সময়ের মধ্যে উত্তর গাজায় ১ হাজার ১৯৯ জন নিহত হয়েছে।
এই দুই মার্কিন কর্মকর্তার মতে, ওয়াশিংটন এখন অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা বা ইসরায়েলকে তার কৌশল পরিবর্তনের উপায় হিসাবে কঠোরভাবে সমালোচনা করাকে ফলপ্রসু বলে মনে করছে না। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস, এক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করার কৌশল প্রয়োগ বেশি কার্যকর।
কীভাবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী গাজায় সাহায্য পাঠানোর প্রস্তাব প্রাথমিকভাবে প্রত্যাখ্যান করার পরও অঞ্চলটিতে দিনে প্রায় ২০০ ট্রাক সহায়তার প্রবেশের অনুমতি দিতে রাজি হয়েছিলেন তা উল্লেখ করে এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মনে করি আমরা যা করছি তা তাদের প্রভাবিত করছে।’
তিনি আরও বলেছেন, এই উন্নতিগুলো গভীর কূটনীতির ফলাফল, হুমকির নয়। দক্ষিণ গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ইসরায়েলের পুনরায় হামলা শুরুর তিন দিন পর ওই কর্মকর্তা এসব কথা বলেন।
মার্কিন ওই কর্মকর্তা মনে করছেন, ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা কমিয়ে দেওয়াটা বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরী করবে।
‘আপনি ইসরায়েলকে সাহায্য করা কমিয়ে দিলেন মানে অন্যান্য পক্ষকে সংঘাতে যোগ দিতে উত্সাহিত করলেন, আপনি তাদের প্রতিরোধকে দুর্বল করলেন আর ইসরায়েলের অন্যান্য শত্রুদের উত্সাহিত করলেন।’
রয়টার্সের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অটুট। ইসরায়েলি সরকারের কৌশল পরিবর্তন করাতে আন্তর্জাতিক দাবিগুলো কোনও ভূমিকা রাখছে না।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলের উপর আন্তর্জাতিক চাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে নেতানিয়াহুর পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ওফির ফল্ক রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি অবশ্যই এ কথা স্বীকার করছি যে প্রধানমন্ত্রী কোনও চাপই অনুভব করছেন না এবং আমাদের সামরিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য যা যা করা দরকার আমরা তা করব।’