মানবতার ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর হতে চলেছে ২০২৩: জাতিসংঘ মহাসচিব
ফেলে আসা মাসগুলোর উষ্ণতার পরিসংখ্যান দেখে ২০২৩ সালই যে আমাদের এই পৃথিবীতে সবচেয়ে উষ্ণ বছর হতে চলেছে তা আগেই একরকম নিশ্চিত করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে জলবায়ু সম্মেলন কপ২৮ উদ্বোধন করে সেকথাই আরেক দফায় নিশ্চিত করলেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
সম্মেলনের শুরুতেই তিনি বললেন, মানবতার ইতিহাসে ২০২৩ সালই হতে চলেছে এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচেয়ে ঊষ্ণ বছর।
বিশ্ব নেতাদেরকে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে কাজ করার জন্য মিনতি করে গুতেরেস বলেন, “আমরা জলবায়ু ভেঙে পড়ার বাস্তব চিত্র চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।”
তিনি জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান। ২০২৩ সাল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছর হতে চলার রেকর্ড ‘বিশ্ব নেতাদের শিরদাঁড়ায় কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করেন গুতেরেস।
২০২৩ সাল বিশ্বের উষ্ণতার সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে-বিশ্ব আবহাওয়া সংগঠন এমনটি একরকম নিশ্চিত বলে প্রতিবেদন দেওয়ার পর জাতিসংঘ মহাসচিব কপ২৮ সম্মেলনে ওই মন্তব্য করেন।
অক্টোবর মাসের গড় উষ্ণতা দেখার পরই বিজ্ঞানীরা ২০২৩ উষ্ণতম বছর হতে চলেছে বলে নিশ্চিত হন। শিল্পবিপ্লবের আগে অর্থাৎ, ১৮৫০-১৯০০ সালের মধ্যে অক্টোবরের গড় উষ্ণতা যা ছিল, তার চেয়ে গত মাসে উষ্ণতা ০ দশমিক ৪ ডিগ্রি বেশি ছিল। অনেকের কাছে এই মাত্রা নগণ্য মনে হলেও জলবায়ু বিজ্ঞান তা মনে করছে না।
আর কেবল অক্টোবর নয়। একইভাবে বিশ্বের গড় উষ্ণতা বেড়েছিল গত সেপ্টেম্বরেও। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের উষ্ণতা রীতিমতো চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিজ্ঞানীদের কাছে। ইউরোপভিত্তিক জলবায়ুবিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে ২০২৩ সাল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হতে চলার পূর্বাভাস দেওয়া হয় এমাসের শুরুতেই।
বিশ্বে ১৯৪০ সাল থেকে যে পরিমাণ গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, তার তুলনায় বিশ্বে গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ।
জাতিসংঘের আবহাওয়া সংগঠনের প্রধান পেত্তারি তালাস জলবায়ু পরিস্থিতি নিয়ে সাময়িক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছেন, “গ্রিনহাউজ গ্যাসের মাত্রা রেকর্ড উচ্চে রয়েছে, বিশ্ব উষ্ণায়ন রেকর্ড উচ্চ পর্যায়ে আছে, সমুদ্রস্তরও রেকর্ড পরিমাণ উচ্চ। অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্রে বরফের স্তরও সর্বনিম্ন পর্যায়ে।”
আগামী বছর অর্থাৎ, ২০২৪ সাল এল নিনো আবহাওয়া সিস্টেমের কারণে আরও উষ্ণ হওয়ার আশঙ্কা আছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস তার বক্তেব্যে সমুদ্র স্তর বেড়ে যাওয়া এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা রেকর্ড উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো এবং অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে নিম্নপর্যায়ে চলে আসার বিষয়টি উল্লেখ করে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেন।
এবছর বিশ্বব্যাপী বহু জায়গায় দাবানল, বন্যা, গরম বেড়ে যাওয়ার মতো নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাকের কথাও সম্মেলনে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
বিতর্কিতভাবে এবার বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর অন্যতম আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কপ২৮ সম্মেলন। আমিরাতের তেল খাতের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান আল-জাবের সম্মেলনের দায়িত্বে আছেন।
বিশ্বের অন্য দুই বড় গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনকারী দেশ চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না।
সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে আমিরাতের সুলতান আল-জাবের বলেছেন, এই সম্মেলন হতে হবে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের সম্মেলন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ১০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও পূরণ হওয়া চাই।
গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের কারণে পৃথিবীর উষ্ণ হচ্ছে। তাপমাত্রা এখনও বেড়েই যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগামী ৭ বছরের মধ্যে এই ঊষ্ণতা প্রায় অর্ধেকে নামাতে হবে। তাদের কথায়, বিশ্বের দেশগুলোর বর্তমান নীতিতে পৃথিবী বিপর্যয়কর পরিবর্তনের দিকেই যাচ্ছে। বেশিমাত্রায় দেখা যাচ্ছে তাপপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, সমুদ্রস্তর বৃদ্ধি।