ব্রিকস ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে মোদি কেন যোগ দেননি?
সম্প্রতি ব্রিকস দেশগুলির শীর্ষনেতাদের ভার্চ্যুয়াল বৈঠক ছিল। সেখানে যোগ দেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছিলেন জয়শঙ্কর। এই বৈঠকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভারা থাকলেও গত মঙ্গলবারের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছিলেন না। সাধারণত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মোদি সবসময়ই রীতিমতো সক্রিয় থাকেন। বিদেশে এই ধরনের শীর্ষবৈঠকে তিনি যোগ দেন। ভার্চ্যুয়াল বৈঠকেও থাকেন।
এর পরপরই জি২০-এর ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে মোদি ছিলেন। সেই বৈঠকের উদ্যোক্তাও ছিলেন তিনিই। তাই ব্রিকসের বৈঠকে মোদি কেন থাকলেন না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আলোচনাও হচ্ছে।
সরকারিভাবে এনিয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। ভারতের অনেক সংবাদমাধ্যমই সূত্র উল্লেখ করে জানিয়েছে, সেই সময় প্রধানমন্ত্রী মোদি রাজস্থানে প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন বলে বৈঠকে থাকতে পারেননি। তাই তার জায়গায় জয়শঙ্কর থেকেছেন। এই ধরনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী না থাকতে পারলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকেন। সেক্ষেত্রে কিছু বলার নেই। কিন্তু এই ধরনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদির যোগদান ও জয়শঙ্করের বৈঠকে থাকার থাকার মধ্যে একটা আকাশপাতাল ফারাক আছে।
ভারত ছাড়া একমাত্র আর্জেন্টিনার শীর্ষ নেতা বৈঠকে যোগ দেননি। তাদেরও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। এছাড়া ছিলেন জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তেনিও গুতেরেস, সৌদি আরব, ইরান, আমিরাত, মিশর, ইথিওপিয়া, সাউথ আফ্রিকার নেতারা।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল প্রসঙ্গ এড়াতে?
প্রবীণ রাজনীতিক এবং তৃণমূলের রাজ্যসভার চিফ হুইপ সুখেন্দু শেখর রায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সমস্যা এর একটা করণ হতে পারে। এক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়ার থেকে হয়ত একটু দূরত্ব তৈরি করতে চাইছেন মোদি।
সুখেন্দু শেখর জানিয়েছেন, পরের দিকে প্যালেস্টাইন নিয়ে মোদি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। তবে হামাস নিয়ে ভারতের মনোভাব যথেষ্ট কড়া। আসলে যে মোদি প্রচার পেতে চান, যাকে বিজেপি বিশ্বগুরু বলে দাবি করছে তার অনুপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। এটুকু বলতে পারি, এটা তার চরিত্রবিরোধী কাজ।
রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেছেন, বইয়ের ভাষায় আমরা এটাকে লো টোন ডিপ্লোমেসি বলি। আসলে এমন একটা পরিস্থিতির মুখে মোদি পড়েছেন, যেখানে পুরোপুরি ইসরায়েলের পক্ষ নেয়া মুসকিল, আবার তাদের বিরোধিতাও সম্ভব নয়।
বিশ্বনাথের মতে, ফিলিস্তিনের পুরোপুরি বিরোধিতা করলে আরব দুনিয়া ভারতের উপর ক্ষুব্ধ হবে। সেটা ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী। আর ইসারেয়েলের বিরোধিতা করলে পশ্চিমা দেশগুলির রোষের মুখে পড়বে ভারত। তাই আমার মনে হয়েছে, মোদি লো টোন ডিপ্লোমেসির কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন। সেজন্যই তিনি ওই বৈঠকে যোগ দেননি।
গাজা নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটা প্রস্তাব নেয়া হয়েছিল। তাতে ব্রিকস দেশগুলির অধিকাংশই ভোট দিয়েছিল। কিন্তু ভারত ভোটদানে বিরত থাকে।
ব্রিকসের বৈঠকে জয়শঙ্কর বলেছেন, ভারত সবসময় সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে। তারা পণবন্দি করে নিয়ে যাওয়াকেও সমর্থন করে না।
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র জানিয়েছেন, নিঃসন্দেহে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল প্রসঙ্গ এড়ানোটাই বড় কারণ। তার সঙ্গে অন্য কারণও থাকতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, এখন মোদির মনোযোগ ভোটে জেতার দিকে। এই ব্রিকস বৈঠক নিয়ে তাই তিনি উৎসাহ হারিয়েছিলেন।