বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য সংসদের তিনশো আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনের জন্য দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন এমন অন্তত ৭২ জন এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি।
এদের মধ্যে কয়েকজনকে অসুস্থতা ও বার্ধক্যজনিত কারণে বাদ দিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব আগেই জানিয়েছিল যে কয়েকটি জরিপের ভিত্তিতে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করেছেন তারা।
মনোনয়ন না পাওয়া এমপিদের মধ্যে সরকারের তিনজন প্রতিমন্ত্রীও আছেন। তারা হলে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
এছাড়া সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দিন খান আলমগীর, সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকেও দলীয় মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। মুরাদ হাসান অবশ্য রোববারই জামালপুর-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
ওদিকে ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ছয়টিতে এবার প্রার্থী পরিবর্তন করেছেিআওয়ামী লীগ। চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ ঢাকায় এবং জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান মাগুরার একটি আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন।
সাবেক দুজন সচিব এবার নতুন করে মনোনয়ন পেয়েছেন। তারা হলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ এবং পিএসসি-র সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক।
অন্যদিকে সাবেক ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা তার নড়াইলের আসনে আবার মনোনয়ন পেলেও মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় এবার আর দলীয় মনোনয়ন পাননি।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন।
তার ঘোষণা অনুযায়ী দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ ২২ জন নারী এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন।
ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননের আসনে দলীয় নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে প্রার্থী করলেও জাসদের নেতা হাসানুল হক ইনুর কুষ্টিয়া-২ ও জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমানের নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে কোনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি আওয়ামী লীগ।
এছাড়া গত সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, তরিকত ফেডারেশন ও বিকল্পধারাকে যে আসনগুলো ছেড়ে দেয়া হয়েছিল, সেই আসনগুলোতেও নিজেদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে একনাগাড়ে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ।
এর আগে সকালে গণভবনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী সবার সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী আগামী সাতই জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৩০শে নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম জমা দিতে হবে।
যে সব আসনে বর্তমান এমপিরা মনোনয়ন পাননি
পঞ্চগড়- ১ আসনের বর্তমান এমপি মোঃ মজাহারুল হক প্রধানের জায়গায় এবার মনোনয়ন পেয়েছেন মোঃ নাইমুজ্জামান মুক্তা। ঠাকুরগাঁও-২ আসনে মোঃ দবিরুল ইসলামের পরিবর্তে মাজহারুল ইসলাম, রংপুর-৫ আসনে এইচ এন আশিকুর রহমানের জায়গায় রাশেক রহমান, কুড়িগ্রাম-২ আসনে পনির উদ্দিন আহমেদ এর পরিবর্তে মোঃ জাফর আলী, কুড়িগ্রাম-৩ আসনে এম এ মতিনের জায়গায় সৌমেন্দ্র প্রসাদ পাণ্ডে, কুড়িগ্রাম-৪ আসনে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের জায়গায় বিপ্লব হাসানকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা-৪ আসনে মোঃ মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর জায়গায় মনোনয়ন পেয়েছেন মোঃ আবুল কালাম আজাদ। বগুড়া-৫ আসনে মোঃ হাবিবুর রহমান এর জায়গায় মোঃ মুজিবুর রহমান মজনু, নওগাঁ-৩ আসনে ছলিম উদ্দীন তরফদারের জায়গায় সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, নওগাঁ-৪ আসনে মুহাঃ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক এর জায়গা মোঃ নাহিদ মোর্শেদ মনোনয়ন পেয়েছেন।
আর রাজশাহী-৩ আসনে আয়েন উদ্দিনের বদলে আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজশাহী-৪ আসনে এনামুল হকের পরিবর্তে মোঃ আবুল কালাম আজাদ এবং রাজশাহী-৫ আসনে মোঃ মনসুর রহমানের বদলে মনোনয়ন পেয়েছেন মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ।
সিরাজগঞ্জ-২ আসনে হাবিবে মিল্লাতের বদলে জান্নাত আরা হেনরি মনোনয়ন পেয়েছেন। এছাড়া সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে তানভীর ইমামের বদলে শফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে মেরিনা জাহানের বদলে চয়ন ইসলাম, পাবনা-৪ নুরুজ্জামান বিশ্বাসের বদলে গালিবুর রহমান শরীফ, মেহেরপুর-২ আসনে মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামানের বদলে আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক, ঝিনাইদহ-৩ আসনে শফিকুল আজম খানের বদলে সালাউদ্দিন মিয়াজীকে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
যশোর-২ আসনে নাসির উদ্দিনের বদলে তৌহিদ উজ জামান, যশোর-৪ আসনে রণজিত কুমার রায়ের বদলে এনামুল হক বাবুল, মাগুরা-১ আসনে মোঃ সাইফুজ্জামান শিখরের বদলে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং বাগেরহাট-৪ আসনে আমিরুল ইসলাম মিলনের বদলে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, জামালপুর,ময়মনসিংহে যত পরিবর্তন
খুলনা-১ আসনে পঞ্চানন বিশ্বাসের বদলে মনোনয়ন পেয়েছে ননী গোপাল মন্ডল আর খুলনা-৩ আসনে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানের বদলে আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে খুলনা-৬ আসনে মোঃ আক্তারুজ্জামানের বদলে মোঃ রশীদুজ্জামান, সাতক্ষীরা-২ আসনে মীর মোস্তাক আহমেদ রবির জায়গায় আসাদুজ্জামান বাবু, সাতক্ষীরা-৪ আসনে জগলুল হায়দারের পরিবর্তে এস এম আতাউল হককে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
বরগুনা-২ আসনে শওকত হাচানুর রহমান রিমন এবার মনোনয়ন পাননি। তার জায়গায় দল বেছে নিয়েছে সুলতানা নাদিরাকে। এছাড়া বরিশাল-২ আসনে মোঃ শাহে আলম-এর বদলে তালুকদার মোঃ ইউনুস, বরিশাল-৪ আসনে পংকজ দেবনাথ এর জায়গায় আওয়াম লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদকে প্রার্থী করছে আওয়ামী লীগ।
টাঙ্গাইল-৩ আসনে আতাউর রহমান খান এর জায়গায় কামরুল হাসান খান, টাঙ্গাইল-৪ আসনে হাছান ইমাম খানের পরিবর্তে মোজাহেরুল ইসলাম তালুকদার, টাঙ্গাইল-৫ আসনে ছানোয়ার হোসেনের জায়গায় মামুন অর রশীদ এবং টাঙ্গাইল-৮ আসনে জোয়াহেরুল ইসলামের আসনে অনুপম শাজাহান জয়কে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
ওদিকে জামালপুর -১ আসনে সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের জায়গায় নূর মোহাম্মদ, জামালপুর -৪ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের জায়গায় মোঃ মাহবুবুর রহমান, জামালপুর -৫ আসনে মোঃ মোজাফফর হোসেনের জায়গায় সাবেক সচিব আবুল কালাম আজাদ, শেরপুর-৩ আসনে একেএম ফজলুল হকের জায়গায় এডিএম শহিদুল ইসলাম মনোনয়ন পেয়েছেন।
পাশাপাশি ময়মনসিংহ-৩ আসনে নাজিম উদ্দিন আহমেদ-এর জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াত বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের স্ত্রী নিলুফার আনজুম, ময়মনসিংহ-৫ আসনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের জায়গায় আব্দুল হাই আকন্দ এবং ময়মনসিংহ-৯ আসনের জন্য বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খানের বদলে মেজর জেনারেল (অব:) আব্দুস সালামকে বেছে নিয়ে ক্ষমতাসীন দলটি।
দুর্জয় নেই, নায়ক ফেরদৌস ঢাকায়
নেত্রকোনা-১ আসনের বর্তমান এমপি মানু মজুমদারের পরিবর্তে মোস্তাক আহমেদ রুহীকে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এছাড়া নেত্রকোনা-৫ আসনে ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের জায়গায় আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কিশোরগঞ্জ -২ আসনে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ-এর জায়গায় সিআইডির সাবেক কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দ এবং মানিকগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়ের জায়গায় মোঃ আব্দুস সালামকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি।
ঢাকার কয়েকটি আসনে এবার প্রার্থী পরিবর্তন করছে আওয়ামী লীগ।
ঢাকা-৫ আসনে কাজী মনিরুল ইসলামের জায়গায় হারুনুর রশীদ মুন্না, ঢাকা-৭ আসনে হাজী সেলিমের জায়গায় তার ছেলে সোলায়মান সেলিম, ঢাকা-১০ আসনে বিজিএমইএ-র সাবেক সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলামের বদলে নায়ক ফেরদৌস আহমেদকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
ঢাকা-১১ আসনে একে এম রহমত উল্লাহর জায়গায় মনোনয়ন পেয়েছেন মোঃ ওয়াকিল উদ্দিন, ঢাকা-১৩ আসনে সাদেক খানের জায়গায় দলের সভাপতিমন্ডলির সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং ঢাকা-১৪ আসনে আগা খান মিন্টুর পরিবর্তে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক খান মাইনুল হোসেন নিখিলকে প্রার্থী করছে আওয়ামী লীগ।
খন্দকার মোশাররফ নেই, আইজিপির ভাই আছেন
গাজীপুর-৩ আসনে বর্তমান এমপি ইকবাল হোসেনের পরিবর্তে রোমানা আলীকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এছাড়া নরসিংদী-৩ আসনে জহিরুল হক ভুইয়ার জায়গায় ফজলে রাব্বী খান, ফরিদপুর-১ আসনে মনজুর হোসেনের বদলে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, ফরিদপুর-৩ আসনে সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পরিবর্তে শামীম হককে বেছে নিয়েছে দলটি।
সুনামগঞ্জ-১ আসনে বর্তমান এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের জায়গায় রণজিত চন্দ্র সরকার, সুনামগঞ্জ-২ আসনে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের স্ত্রী জয়া সেন গুপ্তার বদলের পুলিশের আইজিপির ভাই চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এবং সিলেট ৫ হাফিজ আহমদ মজুমদারের জায়গায় মাসুক উদ্দিন আহমেদকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়ে আওয়াম লীগ।
বেশ কয়েকবারের এমপি মি. মজুমদার আগেই নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছেন।
এর বাইরে মৌলভীবাজার-৩ আসনে বর্তমান এমপি নেছার আহমেদের জায়গায় মোঃ জিল্লুর রহমান, হবিগঞ্জ-১ আসনে গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজের জায়গায় মুশফিক হোসেন চৌধুরী, হবিগঞ্জ-২ আসনে আব্দুল মজিদ খানের জায়গায় ময়েজ উদ্দিন শরীফ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে মোহাম্মদ এবাদুল করিমের পরিবর্তে ফয়জুর রহমানকে প্রার্থী করছে আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে কুমিল্লা-১ আসন মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভুইয়ার বদলে আব্দুস সবুর এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন।
আর কুমিল্লা- ৮ আসনে নাছিমুল আলম চৌধুরীর পরিবর্তে আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিন, চাঁদপুর- ১ আসনে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ মহীউদ্দিন খান আলমগীরের জায়গায় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ডঃ সেলিম মাহমুদ, চাঁদপুর-২ আসনে নূরুল আমীনের বদলে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং নোয়াখালী-৬ আসনে আয়েশা ফেরদৌসের জায়গায় মোহাম্মদ আলী নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম-১ আসনে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের জায়গায় মাহবুবুর রহমান, চট্টগ্রাম-৪ আসনে দিদারুল আলমের জায়গায় এস এম আল মামুন, চট্টগ্রাম-১২ আসনে সামশুল হক চৌধুরীর জায়গায় মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এবং কক্সবাজার-১ আসনে জাফর আলম এর জায়গায় সালাহ উদ্দিন আহমদ এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
জাতীয় পার্টির আসনগুলোতে কারা পেলো
২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় সমঝোতার ভিত্তিতেই বেশ কিছু আসন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। কিন্তু এবার আগেই জাতীয় পার্টির এমপি আছে এমন আসনগুলোর বিপরীতে নিজেদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে তারা।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহমেদের ঠাকুরগাও-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে মোঃ ইমদাদুল হককে। একই ভাবে রানা মোহাম্মদ হোসেন এর নীলফামারী-৩ আসনে মোঃ গোলাম মোস্তফাকে, নীলফামারী-৪ আসনে জাতীয় পার্টির আহসান আদেলুর রহমান এর জায়গায় মোঃ জাকির হোসেন বাবুলকে এবং লালমনিরহাট-৩ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের আসনে মোঃ মতিয়ার রহমানের নাম ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।
এছাড়া রংপুর-১ আসনে মসিউর রহমান রঙ্গার আসনে রেজাউল করিম রাজু, রংপুর-৩ আসনে রাহগির আলমাহি এরশাদ এর আসনে তুষার কান্তি মন্ডল, গাইবান্ধা-১ আসনে শামীম হায়দার পাটোয়ারির আসনে আফরোজা বারী, বগুড়া-২ আসনে শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এর জায়গায় তৌহিদুর রহমান মানিক, নূরুল ইসলাম তালুকদারের বগুড়া-৩ আসনে সিরাজুল ইসলাম খান রাজু, গোলাম কিবরিয়ার বরিশাল-৩ আসনে সরকার মোঃ খালেদ হোসেন এবং বরিশাল-৬ আসনে নাসরিন জাহান রত্নার জায়গায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে আব্দুল হাফিজ মল্লিকের নাম ঘোষণা করেছে।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজীর পিরোজপুর-৩ আসনে আশরাফুর রহমান, ময়মনসিংহ-৪ আসনে বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের জায়গায় মোহিত উর রহমান, ময়মনসিংহ-৮ আসনে ফখরুল ইমামের জায়গায় মোঃ আব্দুছ ছাত্তার, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হকের জায়গায় নাসিরুল ইসলাম খান, ঢাকা-৪ আসনে আবু হোসেন বাবলার জায়গায় সানজিদা খানম, ঢাকা-৬ আসনে কাজী ফিরোজ রশীদের জায়গায় সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের নাম ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।
পাশাপাশি জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকার নারায়নগঞ্জ-৩ আসনে আব্দুল্লাহ আল কায়সারের নাম ঘোষণা করলেও নারায়নগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টির নাসিম ওসমানের আসনে কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। তার ভাই শামীম ওসমান নারায়নগঞ্জ-৪ থেকে আবারো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। সুনামগঞ্জ-৪ আসনে পীর ফজলুর রহমোনের জায়গায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী করছে সাবেক সচিব মোহাম্মদ সাদিককে।
আর ফেনী-৩ আসনে লে. জে. (অব) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর জায়গায় আবুল বাশারকে এবং চট্টগ্রাম-৫ আসনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের জায়গায় মোহাম্মদ আব্দুস সালামকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
জোট-মহজোট এমপিদের আসনেও প্রার্থীদের নাম ঘোষণা
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের জন্য আলাদা করে আগের মতো আসন খালি রাখেনি আওয়ামী লীগ।
জাসদের হাসানুল হক ইনুর আসনটিতে কারও নাম ঘোষণা না হলেও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের ঢাকা-৮ আসনের জন্য দলীয় প্রার্থী হিসেবে বাহাউদ্দিন নাছিমের নাম ঘোষনা করা হয়েছে।
একাদশ সংসদে জোটের শরিকদের জেতা অন্য আসনগুলোতে যাদের প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ তারা হলেন : বগুড়া-৪ আসনে জাসদের একেএম রেজাউল করিম তানসেনের জায়গায় হেলাল উদ্দিন কবিরাজ, রাজশাহী-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশার জায়গায় মোহাম্মদ আলী, সাতক্ষীরা-১ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এর জায়গায় ফিরোজ আহমেদ স্বপন। এছাড়া পিরোজপুর-২ আসনে জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জায়গায় কানাই লাল বিশ্বাসকে প্রার্থী করছে আওয়ামী লীগ।
আগের নির্বাচন নৌকা প্রতীক নিয়ে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে জয়ী বিকল্প ধারার মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জায়গা মহিউদ্দিন আহমেদকে এবার দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া ফেনী-১ আসনে জাসদের শিরিন আখতারের জায়গায় আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে বিকল্প ধারার আব্দুল মান্নানের জায়গায় ফরিদুন নাহার লাইলী এবং তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারীর চট্টগ্রাম-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন খাদিজাতুল আনোয়ার।
এর বাইরে গত সংসদে বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের এমপি হিসেবে নির্বাচিত হওয়া গণফোরামের মোকাব্বির হোসেনের সিলেট-২ আসনে শফিকুর রহমান চৌধুরীকে এবং একই দলের এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের মৌলভীবাজার-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া স্বতন্ত্র এমপি রেজাউল করিম লাবলুর বগুড়া-৭ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মোস্তফা আলম।