বাসিন্দাদের একাকিত্ব দূর করতে যে কৌশল নিয়েছে সুইডেনের লুলেয়োয়

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন

বাসিন্দাদের একাকিত্ব দূর করতে যে কৌশল নিয়েছে সুইডেনের লুলেয়োয়

উত্তর সুইডিশ শহর লুলেয়োয়, গোসল করতে আসা মানুষেরা হিমায়িত সমুদ্রের জলের মাঝখানের একটি গর্তে নিজেদের নামিয়ে নিচ্ছে। সূর্য ইতিমধ্যেই অদৃশ্য হয়ে গেছে, এদিকে ঘড়ি বলছে কেবল বেলা ২টা বাজে। এক মাসের মধ্যে, দিনের আলো থাকার সময়কাল দিনে মোটে তিন ঘণ্টায় নেমে আসবে। এই যখন পরিস্থিতি লুলেয়োর বাসিন্দারা নতুন একটি প্রচারাভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন, যেখানে অন্ধকার শীতের মাসগুলিতে একে অপরকে হ্যালো বলতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এসব তথ্য জানা যায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে।

‘এটা পরে একটু সুখ পাওয়ার মতো’ বলেন গোসল করতে আসা ৪৪ বছর বয়স্ক কাতারিনা উলিপেততোলা। কাজ শুরুর আগে শরীরটা তাজা করে নিচ্ছেন। তিনি গ্রীষ্মে খুব কমই সাঁতার কাটেন, তবে কয়েক বছর ধরে শীতকালে এটি ঘন ঘন করতে শুরু করেন।

যদি এই অন্ধকার শীতের মাসগুলি কাটাতে প্রত্যেকের নিজস্ব শখগুলো সাহায্য করে। যেমন আইস সুইমিং, স্কিইং, দ্বীপপুঞ্জের ‘বরফের রাস্তায়’ হাঁটা। তারপরও একটি সমস্যা থেকে যায়, একাকিত্ব। এটি মোকাবিলায় লুলেয়ো শহর কর্তৃপক্ষ সামাজিক বিচ্ছিন্নতা কাটাতে একটি প্রচারণা শুরু করেছে, সেটি হলো মানুষ একে অপরকে ‘হ্যালো’ বলতে উৎসাহিত করা।

‘এটি সত্যিই চমৎকার একটি বিষয় যে লোকেরা একে অপরকে হাই বলে। এর মানে হলো যে লোকেরা একে অপরকে না চেনার পরও দেখা হলে খুশি হয়।’ বলেন উইন্টার বাথিং গ্রুপ ক্যালিস লুলেয়োর প্রধান ৬১ বছর বয়স্ক পনতেস উইকস্ত্রো।

- বিজ্ঞাপন -

সাগ হেজ! (হ্যালো বলুন!) নামের এই প্রচারাভিযানের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের ছোট ছোট বিষয়গুলোর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ বাড়িয়ে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ শহর গড়ে তোলাই এর লক্ষ্য। বাস, স্কুলসহ বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।

বাসিন্দাদের একাকিত্ব দূর করতে যে কৌশল নিয়েছে সুইডেনের লুলেয়োয়
৬১ বছর বয়স্ক পনতেস উইকস্ত্রো মনে করেন লোকেরা একে অপরকে হ্যালো বলার চর্চাটা চমৎকার একটি ব্যাপার। ছবি গার্ডিয়ান

নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে লুলেয়োর ১৬-২৯ বছর বয়স্কদের ৪৫ শতাংশই একাকিত্বের কারণে নানা সমস্যায় ভুগছেন। তবে ৮৫ বছর কিংবা এর বেশি বয়স্কদের বেলায় সমস্যাটা কম।

স্টকহোম স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক মিকাইল ডাউন বলেন, একাকিত্ব, বিশেষ করে কম বয়স্কদের মধ্যে গোটা বিশ্বজুড়েই একটি সমস্যা। তবে সুইডেনের অন্ধকার, শীতল মাসগুলোতে এটা বড় একটি চিন্তার বিষয়।

লুলেয়ো পৌরসভায় কাজ করা আস কস্কির মাথায় প্রথম আসে আশ্চর্য এ প্রচারণার চিন্তা। ‘আমরা চাই না যে লুয়েলো শুধু একটি শহর হিসেবে বেড়ে উঠুক। আমরা চাই এটি একটি মনোরম, নিরাপদ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ শহর হোক। একই সঙ্গে যেখানে সংস্কৃতি চর্চা, অবসর কাটানোর নানা কর্মকাণ্ড ও খেলাধুলার মতো বিষয়গুলোর চল থাকবে।’ বলেন কস্কি।

লুলেয়ো শহরের মানুষদের সঙ্গে কথা বলে দেখা যায়, বেশির ভাগই একমত যে হ্যালো বলাকে উৎসাহিত করা উচিত। অনেকে বলেন শহরটি যত বেশি আন্তর্জাতিক হয়ে উঠবে, এটি তত বন্ধুত্বপূর্ণ হবে।

- বিজ্ঞাপন -
বাসিন্দাদের একাকিত্ব দূর করতে যে কৌশল নিয়েছে সুইডেনের লুলেয়োয়
লুলেয়ো পৌরসভায় কাজ করা আস কস্কির বুদ্ধিতেই এই প্রচারণার শুরু। ছবি গার্ডিয়ান

২৩ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে লুলেয়োতে আসা এবং বর্তমানে ষাটোর্ধ্ব মি ইয়ং ইম বলেন, শহরের বাসিন্দারা ‘অনেকটাই বন্ধুত্বপূর্ণ’ হলেও প্রথম দেখাতেই সাধারণত অন্য একজনকে আপন করে নেন না। ‘সবাই কিছুটা চাপা স্বভাবের। তবে আপনি বললে তাঁরা আপনাকে সাহায্য করবে।’ বলেন তিনি।

লুলেয়োতে প্রথম এসে এই নারী কিছুটা ধাক্কাই খান। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে কেউ কারও সঙ্গে দেখা হলে ‘হাই’ বলার সঙ্গে অভ্যস্ত ছিলেন তিনি। ‘কিন্তু এখানে, বিশেষ করে বয়স্কদের বেলায়, হাই বলার পর প্রথমে তাঁরা শুধু আমার দিকে তাকিয়ে থাকতেন। তবে এটা অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। কারণ বাইরে থেকে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।’ বলেন মি ইয়াং কিম।

করোনা মহামারি যখন চূড়ায় তখন সাংবাদিক এবং লেখিকা লিসা বিওডলস এক লেখায় জানান, নিজেদের মধ্যে দূরত্ব রাখার বিষয়গুলো সুইডিশদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন অংশে দীর্ঘকাল ধরে প্রয়োগ করে আসছেন। সুপারমার্কেট থেকে শুরু করে বাস স্টপে অপেক্ষা করা, এমনকি বৃষ্টির সময়ও এর ব্যতিক্রম চোখে পড়ে না।

- বিজ্ঞাপন -
বাসিন্দাদের একাকিত্ব দূর করতে যে কৌশল নিয়েছে সুইডেনের লুলেয়োয়
২৩ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে লুলেয়োতে আসেন এখন ষাটোর্ধ্ব মি ইয়ং ইম। ছবি গার্ডিয়ান

পাশের কাল্লাক্স গ্রামে বসবাসকারী ২৫ বছর বয়সী ছাত্র সৈয়দ মোহসেন হাশেমির মতে, পরিস্থিতি এখন আরও খারাপ। ‘করোনার আগে এটি ৫০-৫০ ছিল, কিছু লোক একে অপরকে হাই বলতেন। কিন্তু কোভিডের পরে লোকেরা অপরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে আরও ভয় পান।’ বলেন তিনি।

‘তাঁরা কাউকে চেনার জন্য দীর্ঘ সময় নেন। তারপরে সেই ব্যক্তির সঙ্গে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ হন।’ সুইডিশদের ব্যাপারে এই হলো হাশেমির মতো।

৩৩ বছর বয়স্ক চিত্রকর রনিয়া মেলিন ২০২০ সালে দক্ষিণ সুইডেনের স্কোনে শহর থেকে এখানে আসেন। তিনি জানান ছোটবেলা থেকেই হাই বলা পছন্দ করেন তিনি।

প্রচারণাটা যে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ তাতে সন্দেহ নেই তাঁর। ‘আপনি আপনার নিজের গণ্ডিতে অনেক বেশি বাস করেন, ’ বলেন তিনি, ‘কিন্তু মানুষকে লক্ষ্য করা সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ।’

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!