অবশেষে গাজায় ৪ দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু
অবশেষে চার দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হলো গাজা উপত্যকায়। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা (বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টা) থেকে শুরু হয়েছে বহু আকাঙ্ক্ষিত এই যুদ্ধবিরতি। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য যুদ্ধবিরতি শুরুর সময় জানিয়েছিল কাতার। সেই সময় অনুযায়ীই বিরতি শুরু হয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপক্যতার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধের অন্যতম মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে শুরু থেকেই ভূমিকা পালন করছে মধ্যপ্রাচ্যের দুই কাতার এবং মিসর।
বিরতির এই চারদিনে গাজা উপত্যকায় বোমা বর্ষণ বন্ধ রাখবে বিমান বাহিনী; তবে বিকাল ৪টার পর থেকে পরের দিন বেলা ১০ টার আগ পর্যন্ত উপত্যকায় টহল দেবে ইসরায়েলি স্থল ও বিমান বাহিনীর সেনারা। পাশাপাশি হামাসের সামরিক শাখা আল কাসেম ব্রিগেড এই সময়সীমায় কোনো প্রকার হামলা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ভোরে ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। উপত্যকার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত বেড়া ভেঙে ইসরায়েলে প্রবেশ করে নির্বিচারে সামরিক-বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করে তারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে যায় ২৪২ জনকে।
হামাসের এই হামলার জবাবে ওই দিনই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। ১৬ অক্টোবর থেকে সেই অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গত দেড় মাসে উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৫ হাজার ৫৩২ জনে। এই নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি।
১৪ অক্টোবর প্রথম বার জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করে রাশিয়া। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আপত্তির কারণে তা বাতিল হয়ে যায়।
তার দুই দিন পর ১৬ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় মানবিক বিরতির আহ্বানের প্রস্তাব উত্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র; কিন্তু রাশিয়া ও চীনের আপত্তির কারণে সেটিও বাতিল হয়ে যায়।
তবে নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন প্রস্তাব বাতিল হলেও গাজায় যুদ্ধবিরতি কিংবা মানবিক বিরতির পক্ষে শক্ত অবস্থান নেয় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ। সেই সঙ্গে এই যুদ্ধের শুরু থেকেই হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করে আসছিল কাতার ও মিসর।
এর মধ্যেই গত সপ্তাহে কাতারের মাধ্যমে ইসরায়েলের কাছে যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিল কাতারে অবস্থানরত হামাসের হাইকমান্ড। প্রস্তাবে বলা হয়, যদি ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি, কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি, উপত্যকায় ত্রাণপণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে প্রবেশ এবং আহত বেসামরিকদের উপত্যকার বাইরে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণের অনুমতি দেয়— তাহলে নিজেদের হাতে থাকা জিম্মিদের মধ্যে ৫০ জনকে মুক্তি দেবে হামাস।
ইসরায়েল প্রথমে এই প্রস্তাব মানতে চায়নি, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরলস প্রচেষ্টা, সেখানকার জনগণ ও জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের চাপে ২১ অক্টোবর এক জরুরি বৈঠকে সেই প্রস্তাবে সায় দিতে বাধ্য হয় ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা।
তারই ফলাফল এই যুদ্ধবিরতি, যা বিশাল এক স্বস্তি বয়ে এনেছে গাজা উপত্যকায় বসবাসকারী প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনিদের। দারিদ্র্য ও বেকারত্বপীড়িত এই ফিলিস্তিনিদের এক তৃতীয়াংশই জাতিসংঘ ও অন্যান্য দাতা দেশ ও সংস্থার সহায়তার ওপর সরাসরি নির্ভরশীল।
সূত্র : দ্য ন্যাশনাল