মিয়ানমারে বিদ্যালয়ে বিমান হামলায় ৮ শিশুসহ ১১ জন নিহত
মিয়ানমারের চিন রাজ্যের একটি বিদ্যালয়ে বিমান হামলায় আট শিশুসহ ১১ জন নিহত হয়েছে। গত বুধবার রাজ্যটির পার্বত্য অঞ্চলের ভুইলু গ্রামে এ হামলা চালানো হয় বলে স্থানীয়রা জানান।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, মিয়ানমার বর্তমানে সামরিক জান্তা ও কয়েকটি সশস্ত্র বিদ্রোহী বাহিনীর সংঘাতে জর্জরিত। দেশের অনেকে এলাকা এখন সশস্ত্র বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে।
চিন রাজ্যটিতে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। চলতি সপ্তাহে, ভারত সীমান্তবর্তী রিখাওদার শহর পুনরায় দখল করে নেয় চিন যোদ্ধারা।
গ্রামবাসীরা বলছেন, ভু্ইলুতে কোনো বিদ্রোহী নেই এবং গ্রামটিতে ৮০টিরও কম বসতবাড়ি রয়েছে। ভুইলু গ্রামটি রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত।
গ্রামবাসীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট থেকে জানা যায়, গত বুধবার সন্ধ্যায় জান্তা সরকারের বিমানবাহিনী গ্রামটির ওপর অন্তত দুটি বোমা ফেলে। একটি বোমা স্কুল ঘরের ওপর বিস্ফোরিত হয়। এতে আট শিশু ও তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে ৩৪ বছর বয়সী শিক্ষক হা লুয়াং, তাঁর মা এবং তাঁর দুই সন্তান রয়েছে।
নিহত শিশুদের বয়স ৭ থেকে ১১ বছর। বোমা হামলায় গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ি ও দুটি গির্জাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের চিন রাজ্যটিতে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, ভুইলুর আশপাশে কখনো সংঘাত হয়নি এবং তাঁরা বুঝতে পারছে না কেন গ্রামটিকে লক্ষ্যবস্তু করল সামরিক জান্তা।
গত তিন সপ্তাহে দেশজুড়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াইয়ে সামরিক জান্তা বেশ কয়েকবার পরাজিত হয়েছে। এখন পাল্টা আক্রমণের জন্য সরকারি বাহিনী মূলত বিমান হামলার ওপর নির্ভর করছে।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর চিন রাজ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোই প্রথম জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে। ঘরে তৈরি বন্দুক দিয়েই সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে তারা।
পার্বত্য অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে সংগঠিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো পরে চিনের স্থানীয় সরকারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় একত্রিত হয় এবং সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে আধুনিক অস্ত্র নিয়ে আসা শুরু করে।
সামরিক বাহিনী ও সুসজ্জিত আরাকান বিদ্রোহীদের লড়াইয়ের প্রভাব পড়েছে চিন রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে পালেতওয়া শহরের আশপাশের এলাকাতেও। আরাকান বাহিনী বর্তমানে চিনের পার্শ্ববর্তী রাখাইন রাজ্য ও বেশ কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।
জাতিগত চিন বিদ্রোহীরা বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি থেকে সামরিক বাহিনীকে হটিয়ে দিতে এবং বেশির ভাগ সরকারি বাহিনীকে প্রধান শহরগুলোর সুরক্ষিত ব্যারাকে অবরুদ্ধ করে রাখতে সফল হয়েছে।
চিন জাতিগোষ্ঠীর অধিকাংশই খ্রিষ্টান, দীর্ঘকাল ধরেই তারা কেন্দ্রীয় সরকারের অবহেলা এবং সহিংস আচরণের শিকার বলে অভিযোগ জানিয়ে আসছে।
সম্প্রতি মিয়ানমারে শান রাজ্যসহ বেশ কয়েকটি এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে জাতিগত তিনটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে নিয়ে গড়া একটি জোট। পাশাপাশি প্রতিবেশী চিন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে পুলিশ ও সেনাদের হটিয়ে দিয়েছে বিদ্রোহীরা।
মিয়ানমারের জান্তা প্রেসিডেন্ট বলছেন, শান রাজ্য নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
মিয়ানমারে জান্তা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। জাতিসংঘের হিসাবে, নতুন করে সংঘাতের ফলে দেশটিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ২০ লাখে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার পাশাপাশি বিপর্যস্ত অঞ্চলে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গুতেরেস।