জন্মদিনে উপহারের প্যাকেটে গ্রেনেড, বিস্ফোরণে প্রাণ গেলো ইউক্রেইনের সেনা কর্মকর্তার
ইউক্রেইনের মেজর হেনাদি চাসতিয়াকোভ জন্মদিনে সহকর্মীদের কাছ থেকে যে উপহারের প্যাকেট পেয়েছিলেন তাতে ছিল গ্রেনেড। বাড়ি ফিরে ছেলেকে নিয়ে সেই উপহারের প্যাকেট খুলতে গেলে গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়ে প্রাণ যায় এই সেনা কর্মকর্তার। ১৩ বছরের ছেলে গুরুতর আহত হয়েছে।
বিবিসি জানায়, ৩৯ বছরের মেজর চাসতিয়াকোভ ইউক্রেইনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ভ্যালেরি জালুঝনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইহর ক্লিমেনকো বলেন, “ওই সেনা কর্মকর্তার ছেলে গ্রেনেডের উপর থাকা নিরাপত্তা রিংটি ঘোরাতে শুরু করলে তিনি ছেলের হাত থেকে গ্রেনেডটি নিয়ে রিংটি টেনে তুলে ফেলেন। যার কারণে ভায়াবহ বিস্ফোরণ হয়।”
তিনি এ ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা’ বলে বর্ণনা করে জনগণকে আনুষ্ঠনিক তদন্তে কি তথ্য বেরিয়ে আসে তা জানার জন্য অপেক্ষা করার অনুরোধ করেন।
পরে প্রসিকিউটরা ঘটনার পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, ওই সেনা কর্মকর্তা ছেলের হাত থেকে গ্রেনেডটি টেনে সরিয়ে নেওয়ার সময় দুর্ঘটনাবশত সেটির সেফটি রিংটি তুলে ফেলেন।
পুলিশ এ ঘটনাকে ‘গোলাবারুদের দায়িত্বজ্ঞানহীন নাড়াচাড়ার ফল’ বলে বর্ণনা করেছে।
ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভের পশ্চিম প্রান্তের চাইকিতে ওই সেনা কর্মকর্তার পারিবারিক ফ্ল্যাটে বিস্ফোরণের এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর তল্লাশি চালিয়ে ফ্ল্যাটের ভেতর আরো পাঁচটি গ্রেনেড খুঁজে পাওয়া যায়।
এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গ্রেনেডগুলো নিহত মেজর চাসিতিয়াভকে তার একজন সহকর্মী উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। একই ধরণের আরো দুটি গ্রেনেড পরে তার সেই সহকর্মীর কাছেও খুঁজে পাওয়া যায়। যিনি ইউক্রেইন সেনাবাহিনীতে কর্নেল পদমর্যাদার।
এ ঘটনার কিছু ছবি প্রকাশ পেয়েছে বলে জানায় বিবিসি। যেখানে দেখা যায়, ফ্ল্যাটের মেঝেতে অন্যান্য উপহারের সঙ্গে গ্রেনেডগুলো পড়ে আছে। মেজর চাসতিয়াকভ একটি ব্যাগে করে একটি হুইস্কির বোতলসহ ওই গ্রেনেডগুলো বাড়িতে আনেন।
একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ইউক্রেইনের অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ‘ইউক্রেইনস্কা প্রাভদা’ জানায়, হুইস্কির বোতলটি একটি ব্যাগের ভেতর গ্রেনেড আকৃতির গ্লাসসহ ছিল এবং মেজর চাসতিয়াকভ ব্যাগটি খুললে বিস্ফোরণ ঘটে।
অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, মেজর চাসতিয়াকভের সহকর্মী হুইস্কির বোতলসহ উপহারের ব্যাগটি তার হাতে দেওয়ার সময় বলেছিলন, “তোমাকে চমকে দেওয়া বেশ কঠিন। তাই আমি তোমাকে তাজা গ্রেনেডসহ এক বোতল খুব ভালো হুইস্কি দিচ্ছি।”
প্রেসিডেন্টপন্থি এমপি মারিয়ানা বেজুলহা বলেন, অজ্ঞতার কারণেই মেজর চাসতিয়াকভের মৃত্যু হয়েছে।
“আমি কল্পনাও করতে পারছি না যে নিজের জন্মদিনে অসাবধাণতার কারণে হেনাদি এভাবে মারা যেতে পারেন। গ্রেনেড সরবরাহ করা হয়, উপহার হিসেবে দেওয়ার জন্য নয়।”
এ ঘটনায় সেনাপ্রধান জালুঝনি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছে।
কেউ কেউ অবশ্য সন্দেহ করছেন, জালুঝনিকে হত্যার করার উদ্দেশেই হয়তো এই দৃশ্যপট রচিত হয়েছিল। হয়তো ধরে নেওয়া হয়েছিল নিজের ঘনিষ্ঠ সহযোগীর জন্মদিন উদযাপন করতে সেনাপ্রধান জালুঝনি নিজে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
গত সপ্তাহে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ভ্যালেরি জালুঝনি রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেইনের যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা নিয়ে এক মূল্যায়নে বলেছিলেন, যুদ্ধ এখন একটি ‘অচলাবস্থা’ বা ‘স্থির পর্যায়ের’ দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এবং এ পরিস্থিতি মস্কোর পক্ষে যাবে। কারণ এই পরিস্থিতির সুযোগে তারা ‘ইউক্রেইনে তাদের সামরিক শক্তি পুনর্গঠনের সুযোগ পাবে’।
যা মানতে নারাজ রাশিয়া এবং খোদ ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়নি। বরং তার বাহিনী ‘এগিয়ে আছে’।