জেলেনস্কির সঙ্গে সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যকার বিরোধ বাড়ছে
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও দেশটির সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যকার বিরোধ বাড়ছে। রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের পরিস্থিতি নিয়ে জেলেনস্কি ও সেনাপ্রধান ভ্যালেরি জালুঝনি ভিন্ন অবস্থান প্রকাশ করার পর এই দূরত্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের উপপ্রধান ইগোর ঝোভকা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ অচলাবস্থায় গড়িয়েছে বলে সেনাপ্রধানের পর্যালোচনার সমালোচনা করেছেন। এতে করে যুদ্ধে পশ্চিমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকার বিষয়ে শঙ্কায় থাকা কিয়েভের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে বিরোধের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেছেন, জালুঝনি দ্য ইকোনমিস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুদ্ধের যে অচলাবস্থার কথা তুলে ধরেছেন পরিস্থিতি আসলেই এমন কি না জানতে চেয়ে মিত্র দেশগুলো উদ্বেগের সঙ্গে ফোন করছে।
ঝোভকা বলেন, এই প্রভাবগুলো কি এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আমরা যা অর্জন করতে চেয়েছি? হয়ত এটি খুব গভীর কৌশলগত পরিকল্পনা। এই উপায়ে হয়ত আমরা কিছু সাফল্য অর্জন করতে পারব। কিন্তু সত্যি কথা, আমি খুব অবাক হয়েছি।
যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এই উত্তেজনার কথা সামনে আসলো। কিয়েভের পাল্টা আক্রমণে রুশদের বিরুদ্ধে বড় কোনও সাফল্য না পাওয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের কারণে পশ্চিমাদের আর্থিক ও সামরিক সহযোগিতা কমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জেলেনস্কি নিজেও জালুঝনির পর্যালোচনার সঙ্গে দ্বিমতের কথা জানিয়েছেন। শনিবার ইউরোপীয় কমিশন প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েনের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই দ্বিমতের পাশাপাশি তিনি স্বীকার করেছেন, ১৮ মাস ধরে যুদ্ধের পর দেশের মানুষ ক্লান্ত।
তিনি বলেন, জনগণ ক্লান্ত। সবাই ক্লান্ত। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। অবস্থা নির্বিশেষে সবাই মানুষ। কিন্তু এটি একটি অচলাবস্থা নয়। আমি আবারও জোর দিয়ে বলছি, আমরা ইতোমধ্যে এই বিষয়ে কথা বলেছি। এটি নতুন কোনও ধরনের সংবাদ নয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং সমস্যাটি সমাধান করতে হবে। আরও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, আকাশকে উন্মুক্ত করা এবং আক্রমণাত্মক অভিযানের জন্য সেনাদের সক্রিয় করতে আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে আরও কাজ করতে হবে। এটিই আমাদের ভাবা প্রয়োজন। কাল কী হবে তা নয়, আজকের কথা আমাদের ভাবতে হবে।
জালুঝনি সাক্ষাৎকারে এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের করণীয় সম্পর্কে নিজের লক্ষ্য তুলে ধরেছেন। এই অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য কী ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন সেগুলোও তুলে ধরেছেন তিনি। কিন্তু সবমিলিয়ে যুদ্ধ নিয়ে তার পর্যালোচনা ইউক্রেনে সংশয়ের জন্ম দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বেশ আলোচিত হচ্ছে। এমন সময় তার এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হলো যখন টাইমস সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে জেলেনস্কিকে ক্রমশ ‘বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
টাইম সাময়িকীকে জেলেনস্কি বলেছেন, আমার মতো কেউ বিশ্বাস করে না যে আমরা জয়ী হতে পারব। কেউ না। ইউক্রেনের মিত্রদেশগুলোর মধ্যে জয়ের বিশ্বাস ছড়াতে সব শক্তি ও ক্ষমতা প্রয়োজন হয়। যুদ্ধের অবসাদ ঢেউয়ের মতো ছড়ায়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে তা দেখতে পাচ্ছেন।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও হামাসের সংঘাতের কারণে বিশ্বের মনোযোগ রুশবিরোধী ইউক্রেনের লড়াই থেকে থেকে সরে গেছে। ফলে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ধরে রাখার উদ্যোগ জটিলতায় পড়ছে।