ব্লিনকেনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান নিয়ে প্রশ্ন: আলজাজিরার বিশ্লেষণ
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর এক মাসে তৃতীয়বার মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। গত শুক্রবার ইসরায়েলি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ব্লিনকেন গাজায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো সত্ত্বেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে তেল আবিব।
অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, গাজায় ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে মানবিক যুদ্ধবিরতি পর্যাপ্ত নয়। তাই ব্লিনকেনের যুদ্ধবিরতির আহ্বানের নেপথ্যে কী এবং আদৌ এই আহ্বানে ইসরায়েল সাড়া দেবে কি না—সেই প্রশ্ন উঠেছে।
ডেমোক্রেসি ফর দ্য আরব ওয়ার্ল্ড নাউয়ের (ডিএডাব্লিউএন) পরিচালক অ্যাডাম শ্যাপিরো বলেন, ‘গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান পুরোপুরি অপর্যাপ্ত এবং টেকসই নয়। এটি যুদ্ধ থামানোর অযৌক্তিক পন্থা।’ শ্যাপিরো বলেন, জবাবদিহি ছাড়া যুদ্ধবিরতির আহ্বান ইসরায়েলের জন্য অনিয়ন্ত্রিত সংঘাতের পথ প্রশস্ত করবে।
শুক্রবার ইসরায়েলে অবস্থানকালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে গাজায় আরো ত্রাণ সহায়তা ঢুকবে, ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে এবং হামাসের কাছে আটকদের মুক্ত করতে আলোচনা শুরু করা যাবে।
দুই সপ্তাহ আগেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত মানবিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাই নতুন করে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের পরিবর্তন স্পষ্ট হয়েছে।
‘যুদ্ধবিরতি পর্যাপ্ত নয়’
গাজায় বেসামরিক লোকের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় অভ্যন্তরীণ চাপে পড়ে বাইডেন প্রশাসন যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে বলে মনে করেন অ্যাডভোকেসি গ্রুপ আদালাহ জাস্টিস প্রজেক্টের স্যান্ড্রা ট্যামারি। তিনি বলেন, ‘বাইডেন প্রশাসন এই গণহত্যার বিরুদ্ধে মার্কিন নাগরিকদের ক্ষোভ প্রত্যক্ষ করেছে।
তাই ইসরায়েলকে আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার ন্যায্যতা দেওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে হয়ে পড়ছে।
স্যান্ড্রা বলেন, মানবিক যুদ্ধবিরতি ফিলিস্তিনি অধিকারকে সমর্থনকারী সম্প্রদায়ের ক্ষোভকে প্রশমিত করবে না। তাঁর মতে, গাজায় খাদ্য প্রবেশের জন্য বোমাবর্ষণে বিরতি এবং খাদ্য প্রবেশের পর পুনরায় বোমা হামলা হবে—এমনটা চায় না ফিলিস্তিনিরা।
অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সাময়িক যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ডিএডাব্লিউএনের পরিচালক অ্যাডাম শ্যাপিরো বলেন, এতে ইসরায়েলি নেতাদের দীর্ঘমেয়াদি অবস্থানই প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটনের দাবি প্রত্যাখ্যান করতে পারে ইসরায়েল, কারণ তারা জানে যুক্তরাষ্ট্র এ জন্য কোনো ব্যবস্থা নেবে না।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বছরে ৩৮০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা পায় ইসরায়েল। তবে যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলকে এক হাজার ৪০০ কোটি ডলারেরও বেশি তহবিল বরাদ্দের উদ্যোগ নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
বাইডেন প্রশাসনের নরম সুরে মানবিক যুদ্ধবিরতি চাওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আল-শাবাকার মার্কিন নীতিবিষয়ক ফেলো তারিক কেনি-শাওয়া বলেন, ইসরায়েলকে এক হাজার ৪০০ কোটি ডলার অর্থায়ন এবং গাজায় গণহত্যা চালাতে সমরাস্ত্র সরবরাহের অর্থ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয় সহযোগীর ভূমিকাই পালন করছে।