প্রস্তুতি নিয়েও গাজায় স্থল অভিযান নিয়ে দ্বিধায় ইসরায়েল

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন

প্রস্তুতি নিয়েও গাজায় স্থল অভিযান নিয়ে দ্বিধায় ইসরায়েল

হামাসকে নির্মূলের চেষ্টায় গাজায় বিরতিহীনভাবে বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযানের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে ইসরায়েল। তবে কয়েকদিন ধরে গাজা সীমান্তে কয়েক লাখ সেনা জড়ো হলেও তারা গাজায় ঢোকেনি।

ছোট্ট একটি ভূখণ্ডে স্থলাভিযানে এই বিলম্ব নিয়ে যখন নানা প্রশ্ন উঠছে, তখন খবর এসেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তারা এ ধরনের অভিযান চালানোর বিষয়ে ইসরাইলি বাহিনীকে এর ভয়াবহতা নিয়ে সতর্ক করেছেন।

ইরাক যুদ্ধের সময় শহুরে লড়াইয়ের যে নারকীয় অভিজ্ঞতা, তা থেকেই গাজার ঘরে ঘরে একই ধরনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া থেকে বহুদিনের মিত্র ইসরায়েলকে দূরে রাখতেই মার্কিন সেনা কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রের বরাতে জানিয়েছে সিএনএন।

হামাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রণকৌশল সাজানোর কাজে সহায়তা দিতে বর্তমানে বেশ কয়েকজন মার্কিন সেনা কর্মকর্তা অবস্থান করছেন ইসরায়েলে। তারা মূলত ২০০৪ সালে ইরাকের ফাল্লুজা শহরের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা বিনিময় করছেন। ইরাক যুদ্ধের সময় অন্যতম রক্তক্ষয়ী লড়াই ছিল ফাল্লুজার লড়াই।

- বিজ্ঞাপন -

গাজায় স্থল অভিযান শুরু করলে হামাসের হাতে জিম্মিদের পাশাপাশি সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে, এছাড়া পুরো অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার শঙকা রয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে ইরাক যুদ্ধের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার আলোকেই মার্কিন সেনা কর্মকর্তারা পূর্ণাঙ্গ স্থলাভিযান শুরুর আগে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে বিমান আক্রমণ এবং বিশেষ অভিযান চালানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।

প্রস্তুতি নিয়েও গাজায় স্থল অভিযান নিয়ে দ্বিধায় ইসরায়েল
একটি ট্যাংকের মধ্যে বসে আছেন এক ইসরায়েলি সেনা। ছবি সংগৃহীত

আইএসের কব্জা থেকে ইরাকের মসুল শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী যেসব কৌশল নিয়েছিল, সেসবের ওপর ভিত্তি করে এবারও যুদ্ধের ছক কষছেন তারা। হামাসের মতো আইএসও মসুলজুড়ে তৈরি করেছিল বহু সুড়ঙ্গ আর যুদ্ধের সময় ব্যবহার করেছিল মানবঢাল। শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সেই লড়াই ধারণার চেয়ে কঠিন আর দীর্ঘ হয়েছিল।

ইরাক যুদ্ধের সেই বার্তা পৌঁছে দিতে বাইডেন প্রশাসন ইসরাইলে পাঠিয়েছে মেরিন কর্মকর্তা জেনারেল জেমস গ্লিনকে। যুক্তরাষ্ট্রের এই স্পেশাল মেরিন কমান্ডারের ইরাকে শহুরে লড়াইয়ের ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিশেষ করে ইরাকের ফাল্লুজায় তার নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি রক্তক্ষয়ী লড়াই হয়েছিল বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকেই গাজায় টানা বিমান হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের দুশ্চিন্তা হচ্ছে, গাজায় বিপুল স্থলসেনা নিয়ে ঢোকাটা ইসরায়েলের জন্য হবে দুর্বল একটি কৌশল, আর এর ফলে গাজায় ইসরাইলি সেনারা একটি রক্তক্ষয়ী ও দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতে আটকে যেতে পারে।

প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করার পর কী গাজায় স্থল অভিযান শুরু করা নিয়ে দ্বিধায় আছে ইসরায়েল?

- বিজ্ঞাপন -
প্রস্তুতি নিয়েও গাজায় স্থল অভিযান নিয়ে দ্বিধায় ইসরায়েল
গাজা ভূখণ্ডে স্থলাভিযানে এই বিলম্ব নিয়ে যখন নানা প্রশ্ন উঠছে। ছবি সংগৃহীত

যুদ্ধের খবর সংগ্রহে ইসরায়েলে থাকা সাংবাদিক জেরেমি বাওয়েনের ভাষ্য, গাজায় ঢোকার ক্ষেত্রে যে জটিলতা আছে, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করার পর পরিষ্কারভাবেই সেখানে দ্বিধা তৈরি হয়েছে।

বিবিসির এই আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকও ২০১৭ সালে ইরাকি শহর মসুল থেকে আইসকে হটানোর অভিযানের প্রসঙ্গ টেনেছেন। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা শহর এলাকায় যুদ্ধের যে কঠিন রূপ রয়েছে, সেটাকেই উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন।

জেরেমি বাওয়েন বলেন, “আমি সেখানে (ইরাকে) ছিলাম, আমি ইরাকের বিশাল কমান্ডো বাহিনী দেখেছি, যাদের অনেককেই যুক্তরাষ্ট্র প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং যারা পশ্চিমা বিশেষ বাহিনীসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী, র‌্যাফ ও অন্যদের সহায়তাপুষ্ট ছিল। তারা ঘরে ঘরে অভিযান চালিয়েছিল।”

- বিজ্ঞাপন -

“অভিযান কয়েকমাস ধরে চলে এবং এই অভিযানে কয়েক হাজার বেসমারিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে।”

প্রস্তুতি নিয়েও গাজায় স্থল অভিযান নিয়ে দ্বিধায় ইসরায়েল
স্থল অভিযান হলে গাজায় ইসরাইলি সেনারা একটি রক্তক্ষয়ী ও দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতে আটকে যেতে পারে। ছবি সংগৃহীত

শুধু এটিই ইসরায়েলের দ্বিধার একমাত্র কারণ নয় বলে করেন তিনি। গাজায় থাকা জিম্মিরাও একটি বড় কারণ হয়ে দাড়িয়ে এখন।

আর হামাসও সেই সুযোগটি নিয়ে একজন দুইজন করে জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার মধ্যে দিয়ে সুচতুরভাবে মনস্তাত্ত্বিক খেলায় মেতেছে।

মঙ্গলবার ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র হারেতজের মূল সম্পাদকীয়তেও লিখেছে, গাজায় যতক্ষণ জিম্মি আছে, ততক্ষণ সেখানে কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না।

তবে ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক সেনা প্রধান এহুদ বারাক মনে করেন, এই মুহূর্তে তাদের কঠিন সিদ্ধান্তই নিতে হবে। তার মতে, হামাসকে এভাবে ছাড়া উচিত না। এর মধ্যৌ দিয়ে তিনি মূলত বোঝাতে চেয়েছেন, ইসরায়েলের সামনে এগোনো উচিত।

আর সাংবাদিক বাওয়েনের মতে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!