কানাডার নাগরিকদের জন্য ভিসা পরিষেবা পুনরায় চালু করছে ভারত
কানাডার নাগরিকদের জন্য ভিসা পরিষেবা পুনরায় শুরু করতে যাচ্ছে ভারত। উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতে খালিস্তানপন্থি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দেশটির সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার জেরে এক মাসেরও বেশি কিছু সময় আগে নয়াদিল্লি এই পরিষেবা স্থগিত করেছিল।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। অবশ্য উভয় দেশের এই দ্বন্দ্বে কানাডা তার নিজের অবস্থান থেকে সরে এসেছে বলে কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে বড় কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে বন্ধ হওয়ার পর কানাডিয়ানদের জন্য ভিসা পরিষেবা ভারত আবারও শুরু করবে বলে অটোয়াতে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন জানিয়েছে। এর আগে ভারত বলেছিল, ‘নিরাপত্তা হুমকির’ কারণে কানাডিয়ান মিশনে কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
মূলত গত জুন মাসে কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা এবং কানাডিয়ান নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যায় ভারতীয় সরকারের এজেন্টদের ভূমিকা ছিল বলে কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ সামনে আনার পর ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্ক গুরুতরভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
নিহত নিজ্জার নয়াদিল্লির চোখে ‘সন্ত্রাসী’ হলেও তার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে গত সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে কানাডিয়ান নাগরিকদের জন্য ভিসা ইস্যু স্থগিত করে ভারত।
বিবিসি বলছে, বুধবার অটোয়ার ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা তাদের মিশনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার পরে এবং কানাডিয়ান ‘সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপের’ আলোকে কয়েকটি ক্যাটাগরির ভিসা ইস্যু করা আবার শুরু করবে। অবশ্য কানাডা ঠিক কী পদক্ষেপ নিয়েছে সেটি উল্লেখ করা হয়নি।
এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘পরিস্থিতির ক্রমাগত মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে উপযুক্ত সময়ে আরও সিদ্ধান্ত জানানো হবে’। বৃহস্পতিবার থেকেই এই ভিসা পরিষেবা আবার শুরু হবে এবং প্রবেশ ভিসা, সেইসাথে ব্যবসা, চিকিৎসা এবং কনফারেন্স ভিসার ক্ষেত্রে ভারতের এই সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে।
টরন্টোর কনস্যুলেট জেনারেল অব ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইট অনুসারে, এন্ট্রি ভিসাগুলো কেবল ‘ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি’ এবং তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য নির্দিষ্ট। এছাড়া ভারতীয় নাগরিকের পরিবারের নিকটতম সদস্যদের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে।
অবশ্য ভিসা পরিষেবা পুনরায় চালুর এই ঘোষণা কানাডিয়ান পর্যটকদের জন্য প্রযোজ্য হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। মূলত কানাডা থেকে ভারতে ভ্রমণে যেতে পর্যটকদের একটি নির্দিষ্ট ‘পর্যটক ভিসার’ প্রয়োজন হয়।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কানাডার শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় ভারত সরকারের দিকে সরাসরি অভিযোগের আঙুল তোলেন কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সেসময় পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা শিখ নেতা নিজ্জারের হত্যার সাথে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে।
কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের একটি শিখ মন্দিরের বাইরে গত ১৮ জুন গুলি করে হত্যা করা হয় ৪৫ বছর বয়সী হরদীপ সিং নিজ্জারকে। হাউস অব কমন্সের সভায় প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেন, কানাডার মাটিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে হত্যার পেছনে ভারতীয় এজেন্টরা জড়িত থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করার মতো বিশ্বাসযোগ্য কারণ রয়েছে।
ভারত অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে কানাডার শিখ সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এছাড়া ভারত ২০২০ সালে নিজ্জারকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসাবে ঘোষণা করে এবং নিজ্জারকে হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর আনা অভিযোগটিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করে নয়াদিল্লি।
এছাড়া ভারতের বিরুদ্ধে ট্রুডোর এই অভিযোগ সামনে আসার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজনার একপর্যায়ে উভয় দেশ একে অপরের একজন করে কূটনীতিককে বহিষ্কার করে এবং চলতি অক্টোবরে নয়াদিল্লির দাবির মুখে ভারত থেকে ৪১ কূটনীতিককে সরিয়ে নেয় কানাডা।
অবশ্য কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সহযোগিতা করতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ভারতের সাথে চলমান এই বিবাদ আরও বাড়াতে চাইছে না কানাডা।
এছাড়া ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্বে কানাডার পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি খালিস্তানপন্থি শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় ভারত সরকারের জড়িত থাকার বিষয়ে কানাডার তোলা অভিযোগকে ‘গুরুতর’ বলে অভিহিত করেছে।
একইসঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধে এই অভিযোগের তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র।