ইসরায়েল-লেবাননে ছড়িয়ে পড়েছে সংঘাত, হিজবুল্লাহ আরও ৬ যোদ্ধা নিহত
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে চলমান যুদ্ধের মধ্যেই ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সংঘাত। ইরান-সমর্থিত লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ শনিবার (২১ অক্টোবর) দিনব্যাপী ইসরায়েলে হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে।
অবশ্য ইসরায়েলের হামলায় এদিন সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটির ৬ যোদ্ধা নিহত হওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। রোববার (২২ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার লেবাননে হিজবুল্লাহর বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলার কথা জানিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের একজন সৈন্যকে অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছে।
অন্যদিকে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে আন্তঃসীমান্ত লড়াইয়ে শনিবার তাদের ছয়জন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।
রয়টার্স বলছে, গাজার হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্যেই ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা লেবাননের সীমান্ত বরাবর অন্তত চারটি ভিন্ন এলাকায় হিজবুল্লাহর সঙ্গে গোলা বিনিময় করেছে।
এদিকে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে ছড়িয়ে পড়া এই সংঘাতে সীমান্তের উভয় পাশের বাসিন্দারা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে লেবানন সীমান্তে এখন পর্যন্ত তাদের সাতজন সৈন্য নিহত হয়েছে।
আর হিজবুল্লাহ বলছে, শনিবার নিহত হওয়া ছয়জনসহ তাদের মোট ১৯ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। সহিংসতায় রয়টার্সের একজন সাংবাদিকসহ বহু বেসামরিক নাগরিক ও সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন।
লেবাননের একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, একজন হিজবুল্লাহ যোদ্ধা লেবাননের হুলা এলাকায় নিহত হয়েছেন। এই এলাকাটি ইসরায়েলের মার্গালিওটের বিপরীত পাশে অবস্থিত। এছাড়া হিজবুল্লাহ শনিবার সারা দিনজুড়ে ইসরায়েলি সামরিক অবস্থানে হামলার দাবি করেছে।
গোষ্ঠীটি পরে জানায়, ইসরায়েলি হামলায় তাদের আরও পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে ইসরায়েলি শহর বার’আমের কাছে ট্যাংক-বিরোধী ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে একজন ইসরায়েলি সৈন্য গুরুতর আহত হয়েছে বলে সামরিক বাহিনী জানিয়েছে। এই ঘটনায় আরও দুই সৈন্য হালকা আহত হয়েছে। তবে তারাও ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছে কিনা তা জানানো হয়নি।
এদিকে, গাজা যুদ্ধের সময় গড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকায় হামলার পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। যে কারণে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে দ্বিতীয় যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে ওঠার শঙ্কা তৈরি হয়েছে লেবানন-ইসরায়েল সীমান্ত। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্ত এলাকা থেকে প্রত্যেক দিনই উত্তর ইসরায়েলে রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র এবং গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে।
শনিবার ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাষা, ধর্ম এবং সুরক্ষিত বেড়ায় বিভক্ত হওয়া সত্ত্বেও ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তের উভয়পাশের বাসিন্দারা ব্যাপক অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হয়েছেন। সীমান্ত এলাকায় ক্রমবর্ধমান সহিংসতার কারণে উভয়পাশের হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য হয়েছেন।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েলের সংঘাত শুরুর পর থেকে হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী প্রায় প্রতিদিনই সীমান্তে গুলিবিনিময় করছে। হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর এটিই ইসরায়েল-লেবানিজ সীমান্তে সবচেয়ে খারাপ সহিংসতার ঘটনা।
অবশ্য ইসরায়েল বরাবরই বলছে, হিজবুল্লাহরে সঙ্গে তাদের যুদ্ধে কোনও আগ্রহ নেই। যদি হিজবুল্লাহ সংযত থাকে তবে তারাও স্থিতাবস্থা বজায় রাখবে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। কিন্তু ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এই অঞ্চলে এবং এর বাইরেও বৃহত্তর সংঘাতের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে, কারণ ইসরায়েল গাজায় স্থল অভিযানের নামে অনুপ্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
শনিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, লেবাননের সীমান্তবর্তী ইসরায়েলি শহর কিরিয়াত শমোনা থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার ফলে সেনাবাহিনীকে এখন হামাসের মিত্র হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ড আরও বাড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া দক্ষিণ লেবাননে সক্রিয় ফিলিস্তিনি গ্রুপ ইসলামিক জিহাদ জানিয়েছে, শনিবারের লড়াইয়ে তাদের একজন সদস্যও নিহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, হামাস নিয়ন্ত্রিত ইসরায়েলের দক্ষিণে অবস্থিত গাজা উপত্যকার চারপাশে দুই সপ্তাহ আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং লেবাননের হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের মাঝে টানা সংঘর্ষ চলছে। এখন পর্যন্ত সীমান্তের পার্শ্ববর্তী কিছু এলাকায় হামলা-পাল্টা হামলা সীমিত থাকলেও শিগগিরই তা বিস্তৃত রূপ ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, উত্তর ইসরায়েলে লেবানন থেকে প্রতিনিয়ত রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। শনিবার বিকেলের দিকে উত্তর ইসরায়েলের মারগালিওট এলাকায় লেবানন থেকে ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।
পৃথক ঘটনায় লেবানন থেকে ইসরায়েলের হানিতা এলাকায় আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। এছাড়া লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত থেকে ইসরায়েলের মাউন্ট ডোভ এলাকায়ও রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে শনিবার।