যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে ইসরায়েল ও ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা দিতে পারবে ?
হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর ইসরায়েলকে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার এই প্রতিশ্রুতির পর প্রশ্ন উঠছে, ইউক্রেনের জন্য সহযোগিতাকে জটিলতায় না ফেলে কি ওয়াশিংটন ইসরায়েলকে অস্ত্র দিতে পারবে? বিশেষ করে যখন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থিকে উৎখাত করা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত কেউ তার স্থলাভিষিক্ত হননি।
বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন উভয় দেশকে তারা সহযোগিতা করতে পারবেন। তবে স্বীকার করছেন চ্যালেঞ্জ থাকবে।
স্পিকার না কেন গুরুত্বপূর্ণ?
মার্কিন কংগ্রেস দেশটির ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে। অতিরিক্ত তহবিলের জন্য বাইডেনকে কংগ্রেসের দুই কক্ষ সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে বিল পাস করানোর জন্য রাজি করাতে হবে। এক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নির্বাচিত স্পিকার নিয়ন্ত্রণ করেন কোন বিলটি ভোটের জন্য উত্থাপন করা হবে।
প্রতিনিধি পরিষদে ২২১-২১২ ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে রিপাবলিকান পার্টির। এর ফলে গত সপ্তাহে অল্প কয়েকজন রিপাবলিকান প্রতিনিধি ম্যাকার্থিকে অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। মার্কিন ইতিহাসে এমন ঘটনা ছিল এটিই প্রথম।
স্পিকার অপসারণের অতীত নজির না থাকায় ভারপ্রাপ্ত স্পিকারের দায়িত্বে থাকা প্যাট্রিক ম্যাকহেনি সহযোগিতা বিল ভোটাভুটির জন্য উত্থাপন করতে পারবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়।
ম্যাকার্থিকে উৎখাত করা কট্টরপন্থি রিপাবলিকানদের একাংশ ইউক্রেনকে সহযোগিতা দিতে রাজি না। এদের মধ্যে রয়েছেন স্পিকার হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা প্রতিনিধি জিম জর্ডানও রয়েছেন। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
তবে ইসরায়েলের প্রতি রিপাবলিকানদের সমর্থন শক্তিশালী। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে দলটির অনেক প্রতিনিধির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ইসরায়েলকে অতিরিক্ত সহযোগিতা দেওয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের জন্য অর্থকে যুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করছে বাইডেন প্রশাসন।
ইসরায়েল ও ইউক্রেনের কী প্রয়োজন?
দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহযোগিতা পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ দেশ ইসরায়েল। নিয়মিত স্থিতিশীল পরিমাণে সহযোগিতা পেয়ে আসছে দেশটি। দুই দেশ ২০১৬ সালে সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য বার্ষিক অনুদান এবং ৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা বরাদ্দসহ ৩৮ বিলিয়ন ডলারের একটি ১০ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের প্রধান প্রয়োজন হলো পদাতিক বাহিনীর জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ও বেসামরিক অবকাঠামো, সামরিক কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টারের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য ইন্টারসেপ্টর।
সংঘাতের শুরুর দিকেই ইসরায়েলে নিজের আগ্নেয়াস্ত্রের গোলাবারুদের মজুত নিঃশেষ করে ফেলেছে বলে মনে করার কোনও কারণ নেই।
ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে ইসরায়েল আয়রন ডোম ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলিতভাবে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট ব্যবস্থার ইন্টারসেপ্টর আয়রন ডোমে ব্যবহার করা যায় না। প্যাট্রিয়টসহ আরও কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট ইউক্রেনে সরবরাহ করেছে ওয়াশিংটন।
ইউক্রেনের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো গোলাবারুদ, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ও সাঁজোয়া যান।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আক্রমণের পর হতে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের নিরাপত্তা সহযোগিতা দিয়েছে। বিভিন্ন ধাপে ইউক্রেনের জন্য সহযোগিতা বরাদ্দে কংগ্রেসের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।
কংগ্রেস যদি বরাদ্দ অনুমোদন করে তাহলে দেশ দুটি উপকৃত হবে। এতে মার্কিন প্রতিরক্ষা কোম্পানির উৎপাদন সক্ষমতা বাড়বে। এর ফলে মার্কিন অস্ত্রের মজুত ফুরিয়ে যাওয়া নিয়ে আশঙ্কাও দূর হবে।
এখন কী ঘটবে?
মঙ্গলবার বাইডেন বলেছেন, তার প্রশাসন ইতোমধ্যে ইসরায়েলকে আয়রন ডোমের ইন্টারসেপ্টরসহ আরও সামরিক সহেযাগিতা পাঠাতে শুরু করেছে। তিনি বলেছেন, যখন কংগ্রেসের অধিবেশন শুরু হবে তখন প্রশাসন আইনপ্রণেতাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের জন্য জাতীয় নিরাপত্তার জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হবে।
ইউক্রেন ও ইসরায়েলের জন্য অতিরিক্ত সহযোগিতা আইনে পরিণত করতে পারার মতো এমন কয়েকটি উপায় রয়েছে। কংগ্রেস হয়ত দুটি দেশের বরাদ্দ একত্রিত করে একটি বিল বিবেচনা করতে পারে। উভয় দেশের জন্য বরাদ্দের বিলটি বড় অঙ্কের হবে। যা এই বছরের শেষ দিকে কংগ্রেসে অবশ্যই অনুমোদিত হতে হবে।
সূত্র: রয়টার্স