ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ: বিপর্যয়ের মুখে গাজা
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘর্ষ পঞ্চম দিনেও অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। হামাসও ইসরায়েলি ভূখণ্ডে রকেট নিক্ষেপ জারি রেখেছে। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, লেবাননভিত্তিক হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের সঙ্গে সীমান্তে তাদের গুলিবিনিময় হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে সিরিয়া থেকেও ইসরায়েলের উন্মুক্ত স্থানে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে গাজা। উপত্যকার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র গাজার বেসামরিকদের নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে একটি করিডোর স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ সংস্থাসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ করার ইস্যু নিয়ে আলোচনা করছে মিসর।
শনিবার শুরু হওয়া সংঘাতে বুধবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০০ জনে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১ হাজার ৫৫ জন। ইসরায়েল বলেছে, গাজা থেকে প্রবেশ করা অন্তত ১ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীকে তারা হত্যা করেছে।
ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘ সংস্থা জানিয়েছে, শনিবার থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় জাতিসংঘের ৯ কর্মী নিহত হয়েছেন।
ত্রাণ করিডোর স্থাপনে উদ্যোগী যুক্তরাষ্ট্র
ইসরায়েলি বিমান হামলায় বিধ্বস্ত গাজার বেসামরিকদের জন্য একটি ত্রাণ করিডোর স্থাপনে মধ্যস্থতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, ইসরায়েল ও মিসরের সঙ্গে গাজার বেসামরিকদের নিরাপদে সরে যাওয়ার একটি পথ তৈরির জন্য আলোচনা হয়েছে।
জ্যাক সুলিভান বলেছেন, আমার এই বিষয়ে মনোযোগ দিচ্ছি। আলোচনা চলছে। বিস্তারিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নে নিযুক্ত সংস্থাগুলো আলোচনা করবে। এই মুহূর্তে আমি বেশি কিছু বলতে চাই না।
বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েল পৌঁছাবেন। হামাসবিরোধী লড়াইয়ে সমর্থন জানাতে তিনি এই সফরে আসছেন। চলমান সংঘাতে অন্তত ১৪ মার্কিন নাগরিক গাজায় জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএ মঙ্গলবার জানায়, গাজায় ২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৩৪ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
মিসরের উদ্যোগ
মিসরের শীর্ষ কূটনীতিক শামেহ শৌকরি জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে বুধবার আলোচনা করেছেন। তার আলোচনার বিষয় ছিল কীভাবে গাজার বেসামরিকদের সহযোগিতা করা যায়।
শৌকরি সতর্ক করে বলেছেন, গাজা উপত্যকায় বিপজ্জনক মানবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মানবিক ত্রাণ বিতরণে জাতিসংঘ সংস্থাকে মিসর পুরোপুরি সমর্থন করে।
গাজা উপত্যকার সঙ্গে পারাপারের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। এর ফলে মিসর নিয়ন্ত্রিত রাফাহ ক্রসিং হলো একমাত্র পথ, যা দিয়ে বেসামরিক মানুষেরা গাজায় প্রবেশ ও বের হতে পারবে। মঙ্গলবার ক্রসিংটি বন্ধ করে দেয় মিসর।
সাম্প্রতিক সংঘাতের আগে থেকেই রাফাহ ক্রসিং দিয়ে যাতায়াত কঠিন ছিল। বিশেষ অনুমতি দিয়ে গাজার মানুষদের চলাচল করতে হয়। প্রতিদিন মাত্র ৪০০ জনকে অনুমতি দেওয়া হয়। ফলে অপেক্ষমাণদের তালিকা অনেক দীর্ঘ থাকে।
রয়টার্স দুটি মিসরীয় সূত্র উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, সীমিত যুদ্ধবিরতির অধীনে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং অপর দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে মিসর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানিয়েছে, রাফাহ ক্রসিং দিয়ে এই ত্রাণ পরিবহনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র বিকল
গাজা উপত্যকার একমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র জ্বালানির অভাবে বিকল হয়ে পড়েছে। বুধবার জ্বালানি কর্তৃপক্ষ এই তথ্য জানিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় বন্ধ হয়ে গেছে।
সোমবার গাজায় সর্বাত্মক অবরোধ আরোপের ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। এর ফলে অবরুদ্ধ উপত্যকায় খাবার, পানি ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে গোলাবর্ষণ
লেবাননের ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। সোমবার ইসরায়েলি হামলায় তিন সদস্য নিহত হওয়ার জেরে তারা বুধবার এই হামলা চালিয়েছে। জবাবে লেবানন সীমান্তে গোলা নিক্ষেপ এবং বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।
পশ্চিম তীরে সেটেলারদের হামলা
নাবলুসের দক্ষিণে কুসরা গ্রামে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে ইসারয়েলি সেটেলাররা। স্থানীয় অ্যাক্টিভিস্ট ফুয়াদ হাসান আল জাজিরাকে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে সেটেলার ও সেনারা তাজা গুলি ছুড়েছে। সেনাবাহিনী আহতদের নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স আসতে বাধা দিচ্ছে। হামলায় অন্তত তিন ফিলিস্তিনি ও আরও ছয় জন আহত হয়েছেন।