আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজারে পৌঁছেছে
আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের হেরাত প্রদেশে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার জনে পৌঁছেছে। এছাড়া ভূমিকম্পে আরও শত শত মানুষ আহত হওয়ার পাশাপাশি এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বহু মানুষ।
আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তালেবানের কর্মকর্তারা একথা জানিয়েছেন। রোববার (৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিম আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার বলে অনুমান করা হচ্ছে বলে সিনিয়র তালেবান নেতা ও তালেবানের কাতারভিত্তিক মুখপাত্র সুহেল শাহীন আল জাজিরাকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এখনও অনেক লোক নিখোঁজ রয়েছেন এবং হেরাত প্রদেশে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে ধ্বংসাবশেষে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। আর এর ফলে গত দুই দশকের মধ্যে দেশটিতে আঘাত হানা সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
শাহীন বলেন, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে তাঁবু, চিকিৎসা এবং খাদ্য সামগ্রীর জরুরি প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আর এই কারণে তিনি স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং এনজিওগুলোকে সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে আফগানিস্তানের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল ওয়াহিদ রায়ান অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, ভূমিকম্প এবং শক্তিশালী আফটারশকের আঘাতে ২ হাজারেরও বেশি লোক মারা গেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি সাহায্যের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ভূমিকম্পে প্রায় ছয়টি গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে এবং শত শত বেসামরিক লোক ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন।
এর আগে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ কর্তৃপক্ষ শনিবার জানিয়েছিল, ভূমিকম্পে প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরে শনিবার রাতে ৩২০ জন নিহতের প্রাথমিক পরিসংখ্যান দেয় জাতিসংঘ। কিন্তু সংস্থাটি বলেছে, মৃতের সংখ্যাটি এখনও যাচাই করা হচ্ছে।
অন্যদিকে রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, শনিবারের শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে ৫০০ জন নিহত হয়েছেন।
শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশে ওই ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের পর পাঁচটি বড় ধরনের আফটারশক হয়েছে; যার কেন্দ্রস্থল ছিল ওই অঞ্চলের বৃহত্তম শহরের কাছে।
কর্মকর্তাদের মতে, জিন্দা জান ও ঘোরিয়ান জেলার ১২টি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)-এর তথ্য অনুসারে, পশ্চিম আফগানিস্তানে ছয়টি ভূমিকম্প হয়েছে এবং যার মধ্যে সবচেয়ে বড়টি ছিল ৬.৩ মাত্রার। সংস্থাটি বলছে, শনিবার আঘাত হানা ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল হেরাত শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। এই ভূমিকম্পের পর দেশটিতে ৫ দশমিক ৫, ৪ দশমিক ৭, ৬ দশমিক ৩, ৫ দশমিক ৯ ও ৪ দশমিক ৬ মাত্রার পাঁচটি শক্তিশালী আফটারশক অনুভূত হয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ফারাহ ও বাদঘিস প্রদেশেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
হেরাতের পূর্বাঞ্চলে ১২০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে ইরানের সাথে। এই শহরটিকে আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে মনে করা হয়। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, হেরাত প্রদেশের রাজধানী হেরাত শহরে ১৯ লাখ মানুষের বসবাস রয়েছে।
এর আগে গত বছরের জুনে আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার এক ভূমিকম্পে এক হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। গত কয়েক দশকের মধ্যে আফগানিস্তানে সেটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প ছিল বলে সেই সময় জানায় দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া চলতি বছরের মার্চে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় সাড়ে ৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পে দুই দেশে অন্তত ১৩ জন নিহত হন।
মূলত হিন্দুকুশ পর্বতমালা ও ইউরেশীয়-ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছে অবস্থান হওয়ায় প্রায়ই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে আফগানিস্তান।