পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ক্লাবে যু্ক্ত হলো বাংলাদেশ

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন

পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ক্লাবে যু্ক্ত হলো বাংলাদেশ

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করেছে রাশিয়া। এর মধ্য দিয়ে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ক্লাবে যু্ক্ত হলো বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার বিকালে ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান হস্তান্তর করা হয়। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক আলেস্কি লিখাচেভ সশরীরে উপস্থিত থেকে ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করেন। বাংলাদেশের পক্ষে ইউরেনিয়াম গ্রহণ করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।

ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠান ঘিরে উৎসবের আমেজে সেজেছে রূপপুর এলাকা। রূপপুর প্রকল্প ও গ্রিন সিটি আবাসিক এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকাজুড়ে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার জাতীয় পতাকার পাশাপাশি দেয়ালজুড়ে আঁকা হয়েছে ছবি।

- বিজ্ঞাপন -

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পারমাণবিক জ্বালানি গ্রহণের মধ্য দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সফল পরিণতি লাভ করেছে। আজ বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত গর্বের দিন এবং আনন্দের দিন।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ক্লাবে যু্ক্ত হলো বাংলাদেশ
সনদ হাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ছবি সংগৃহীত

শেখ হাসিনা বলেন, আজ বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত গর্বের দিন এবং আনন্দের দিন। আওয়ামী লীগ সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় পারমাণবিক জ্বালানি গ্রহণের মধ্য দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আজ সফল পরিণতি লাভ করছে।

তিনি বলেন, আজ থেকে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশের কাতারে সামিল হলো এবং বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী নিউক্লিয়ার ক্লাবের কার্যকর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলো।

অচিরেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ যোগ হবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ২০২৪ সালে প্রথম ইউনিট এবং ২০২৬ সালে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাবে। আমরা সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। অচিরেই প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, পরমাণু শক্তি আমরা শান্তি রক্ষায় ব্যবহার করব। আমরা বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্রের সাধারণ ও সম্পূর্ণ নির্মূল এবং পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তির বাস্তবায়নের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি।

- বিজ্ঞাপন -

তিনি আরও বলেন, আমরা ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন’ প্রণয়ন করেছি এবং একটি স্বাধীন পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছি। এই কর্তৃপক্ষ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ক্লাবে যু্ক্ত হলো বাংলাদেশ
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখছেন পুতিন। ছবি সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্ধুপ্রতিম রাশান ফেডারেশনের সরকার এবং জনগণের প্রতি, যারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অসামান্য সহযোগিতা করেছিলেন এবং আমাদের এই স্বপ্নের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং আজকে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় রুশ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা

- বিজ্ঞাপন -

২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে মস্কোতে আপনার সঙ্গে বৈঠক, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান এবং বিশেষ আতিথেয়তার স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছি। এখন পর্যন্ত আপনার সর্বাত্মক সহযোগিতায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।

তিনি বলেন, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে আমি এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইয়ের উদ্বোধন করি। ২০২১ ও ২০২২-এ এই কেন্দ্রের যথাক্রমে ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ এর রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপন করি। আজ এই কেন্দ্রে পারমাণবিক জ্বালানি সংযুক্ত হলো।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ক্লাবে যু্ক্ত হলো বাংলাদেশ
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছবি সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় জনবলকে রাশান ফেডারেশন যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়েছে। যেহেতু বন্ধুপ্রতিম ভারতেও একই রকম একটি প্রকল্প হচ্ছে, সে জন্য আমাদের কিছু জনবলকে প্রশিক্ষণের জন্য আমরা ভারতে প্রেরণ করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য আমরা পৃথক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করেছি। যে কোন ধরনের দুর্যোগে আমাদের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে দিকটা খেয়াল রেখে এই প্ল্যান্টের ডিজাইন প্রণয়ন এবং নির্মাণ কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। তাছাড়া, ব্যবহৃত জ্বালানি (স্পেন্ট ফুয়েল) ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা রাশান ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তি সই করেছি। রাশান ফেডারেশন এসব স্পেন্ট ফুয়েল তাদের দেশে ফেরত নিয়ে যাবে।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর দেশে পৌঁছায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউরেনিয়াম। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তা রূপপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট (১২০০ মেগাওয়াট) চালু করার জন্য ৭৫ টন ইউরেনিয়ামের প্রয়োজন হবে। একবার জ্বালানি দেওয়ার পর ১৮ মাস নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এরপর এক-তৃতীয়াংশ ইউরেনিয়াম অর্থাৎ ২৫ টন নিউক্লিয়ার বর্জ্য তুলে নিয়ে সেখানে নতুন ইউরেনিয়াম দিতে হবে। এরপর চলবে আরও ১৮ মাস। এভাবে ১৮ মাস পরপর আংশিক জ্বালানি পরিবর্তন করতে হবে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!